বরাদ্দের অভাবে সংস্কার কাজ বন্ধ, মানিকছড়ির ১৮ কি: মি: অভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থা নাজুক

আবদুল মান্নান: খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ১৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র খুবই নাজুক। সংস্কারের অভাবে সড়কের প্রকৃত চেহারা/চিহ্ন পুরো পাল্টে গেছে! সৃষ্ঠ খানাখন্দে বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে! ফলে কৃষিনির্ভর এ জনপদে উৎপাদিত কাঁচা শাক-সবজি, ফল-ফলাদি ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে, মূমুর্ষ রোগীদের জরুরী মূহুর্ত্বে হাসপাতালে নেওয়া, তৃণমূলে ভোক্তভোগী জনসাধারণ সরকারী সুবিধা গ্রহনে অফিস-আদালতে যাতায়াতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বরাদ্দের অভাবে সংস্কার থমকে আছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

সরজমিন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার অভ্যন্তরীণ মোট সড়ক ব্যবস্থার মধ্যে ২৬.৫০ কিলোমিটার পাকা, ২৫৬.৪১ কিলোমিটার আধাপাকা সড়ক উন্নয়ন ও তদারকি করছে স্থানীয় প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর মধ্যে পাকা/কার্পেটেং সড়কের প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে জনচলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে মানিকছড়ি-বাটনাতলী (ইউপি) সড়কটির ১২.৯১ কিলোমিটার। মানিকছড়ি-ছদুরখীল-কালাপানি সড়কের ৯.৪৫ কিলোমিটার সড়কের ৫কিলোমিটার জুড়ে সৃষ্ট হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ! সড়কে কার্পেটিং এর লেশমাত্র নেই বললেই চলে। এছাড়া সড়কের কালর্ভাটগুলো ভেঙ্গে চুরমার। যার কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কে জনচলাচল দায়!

অপরদিকে ২৫৬.৪১ কিলোমিটার আধা পাকা বা সলিং সড়কের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ তিনটহরী-গাড়ীটানা-পাক্কাটিলা সড়কের ৮.৬৪ কিলোমিটার সড়ক ইতোপূর্বে জনচলাচল অনুপযোগি হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যানের আন্তরিকতায় সেটি নতুনভাবে কার্পেটিং করার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। নতুন অর্থবছরের শুরুতেই এটি পাকাকরণ কাজ শুরু হবে। এছাড়া বাটনাতলী-জালিয়াপাড়া ৪.৭৫কিলোমিটার ও মানিকছড়ি –হাতীমুড়া ১১.১৩ কিলোমটার সড়কের ৫কিলোমিটার এবং ডাইনছড়ি-শেম্প্রুপাড়া সড়কের ৭কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ চলমান। পূর্বের কার্পেটিং করা সড়কগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ১৮ কিলোমিটার সড়কে জনচলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কৃষিনির্ভর এই জনপদের তৃণমূলে বসবাসরত জনগোষ্টির জীবমান উন্নয়নে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা! একজন কৃষক যেমন তার উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান,শাক-সবজি, ফল-ফলাদি যথা সময়ে বাজারজাত করতে পারছেনা।

তেমনি মূমুর্ষ কিংবা গর্ভবতী একজন নারী অথবা র্দূঘটনায় আহত রোগীকে যথাসময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন করাও খুবই দুঃসাধ্য!। এছাড়া উপজেলা সদরে অফিস-আদালত,ব্যাংক-বীমা,এনজিও কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে সরকারী/ বেসরকারী সেবাগ্রহণে আসা-যাওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এখানকার নিরীহ জনসাধারণ! তৃণমূলের সড়ক ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দীর্ঘ দিন যাবৎ এখানে রাস্তা রাজা বলে খ্যাত চাঁদের গাড়ী বা জীপ গাড়ীগুলো সড়কে চলাচল সীমিত হয়েছে। ফলে উপজেলার আন্তঃসড়কে হাজারো মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিত হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়েছে ভোক্তভোগী মানুষের। যেন,মরার ওপর খাড়ার গা! একজন মানুষ ৮/১০ কিলোমিটার রাস্তা আসা-যাওয়ায় ব্যয় হয় সাড়ে ৩শত-৫শত টাকা।

এ ক্ষেত্রে কৃষকরা মাঠে মারা যাচ্ছে! কারণে মোটরসাইকেল উৎপাদিত ফসল বাজার আনা সম্ভব হয় না। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কৃষিপণ্য বাজারজাত করা খুবই কঠিন! এই যখন উপজেলার তৃণমূলে বসবাসরত মানুষের জীবন-যাত্রার চিত্র,তখন জনপ্রতিনিধিরা সড়কের বেহাল চিত্র সংস্কারে সরকারের উন্নয়ন সংস্থার কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন-নিবেদন করেছেন যথাসময়ে। কিন্তু বরাদ্দ না আসায় প্রতিক্ষণেই জনগণের দুর্ভোগ,দূর্দশা দীর্ঘ থেকে দীঘায়িত হচ্ছে! সড়কে জনদূর্ভোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে কালাপানির বাসিন্দা ও উপজেলা গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. রমজান আলী বলেন, সড়কের বেহাল দশায় মানুষজন খুব কষ্ট ভোগ করছে। কৃষক,ছাত্র,শিক্ষক,সাধারণ মানুষ সকলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে!

সড়কগুলোতে চলাচলরত মোটর সাইকেল চালক সমিতির সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, সংস্কারের অভাবে সড়কে জীপ গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়েছে, যে কোন মূহুর্ত্বে মোটর সাইকেল চলাচলও বন্ধ হওয়ার উপক্রমে হয়েছে।

বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মোহন এ প্রসঙ্গে বলেন, ইউনিয়নের দু’টি সড়কের বেহাল দশায় জনসাধারণের নানা প্রশ্নে আমরা জনপ্রতিনিধিরা বিব্রত! চলাচল অনুপযোগী সড়কে জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরণফাঁদ রাস্তায় চলাচল করছে। জনদুর্ভোগ নিরসনে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না আসায় জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী(এলজিইডি) মো.আবদুল খালেক উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা সরজমিন ঘুরে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পাঠিয়েছি। আশা করছি খুবই শিগরই কাজ শুরু করতে পারবো। এ বিয়য়ে দৃষ্ঠি আকর্ষণ করলে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন আন্তঃসড়ক ব্যবস্থার বেহাল চিত্রে জনদূর্ভোগ বাড়ছে স্বীকার করে বলেন, আমি ইতোমধ্যে তিনটহরী-পাক্কাটিলা আধা পাকা সড়কটি পাকাকরণে বরাদ্দ অনুমোদন করিয়েছি। এছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংস্কার প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করে বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। বরাদ্দ আসলেই সংস্কার কাজ শুরু করাতে পারবো।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post