ঢাকা অফিস: বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড(বিআরডিবি) ১৫টি প্রকল্পে কর্মরত আট হাজার কর্মচারী দীর্ঘ দিন ধরে বেতন না পাওয়া এবং ব
ঢাকা অফিস: বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড(বিআরডিবি) ১৫টি প্রকল্পে কর্মরত আট হাজার কর্মচারী দীর্ঘ দিন ধরে বেতন না পাওয়া এবং বর্তমানে ঋণের কিস্তি আদায় না করতে পেরে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। করোনার মহামারি রোধে সরকার চাকরীজীদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এক দিকে সরকারি ছুটি এবং অপরদিকে মানুষ ঘরবন্দী থাকায় কর্মহীন মানুষগুলো কিস্তি দিতে অনেকটাই ব্যার্থ। এ অবস্থায় বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় বিআরডিবির কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি বিআরডিবির ইউসিসিএ পরিদর্শক মনজয় চাকমা বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। বেতন-ভাতা পাচ্ছি না দীর্ঘ দিন ধরে। বেতন চাইতে গেলে আরডিও স্যার বলে আপনাদের আদায় নেই, কিভাবে বেতন দিবো।
একই অফিসের সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের সুশীল চাকমা মিরগু বলেন, করোনার কারণে মাঠে যেতে পারছি না। অনেকাট লক ডাউনের মধ্যে আছি আমরা। কোনো আদায় নেই বেতন নিতে পারছিন।
খাগড়াছড়ি জেলা সিবিএ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মানিকছড়ি বিআরডিবি কার্যালয়ের সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের মো: রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কস্টের কথা কেউ শুনে না। করোনা পরিস্থিতিতে নিন্ম আয় এবং মধ্য আয়ের লোক সবাই ত্রাণ পেলেও আমরা সরকারী চাকুরি করি বলে আমাদের ত্রাণও দেয় না কেউ। বেতনও পাইনা তাহলে আমার বাঁচবো কি করে।
খাগড়াছড়ির রামগড় উপলো পল্লী উন্নয়ন অফিসের পল্লী প্রগতি প্রকল্পের গ্রাম সংগঠক মো: নীব হোসেন বলেন, যেখানে এনজিও প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায় বন্ধ রেখেছে এবং ঋণ গ্রহিতাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবধিা দিচ্ছে, সেখানে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে আমরা কিভাবে ঋণের কিস্তি চাইতে পারি। তাই আদায় নেই, বেতনও পাচ্ছি না। সরকার যদি বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে আমাদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতো তাহলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনো রকম খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতাম।
এ প্রসঙ্গে সিবিএ বাগেরহাট জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মতিয়ার রহমান বলেন, সরকারী বিধি মালা মেনে নিয়োগ পেয়ে ১৫ বছর যাবৎ চাকরি করলেও নিয়মিত বেতন ভাতা না পাওয়ায় গত ১০ ফেব্রুয়ারী)/২০২০ বিনা চিকিৎসায় দশ বছরের পুত্র সন্তানকে হারাতে হয়েছে। বিআরডিবির কর্মচারীদের বহু পরিবার আছে দিনের পর দিন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। পরিবারের ভরন-পোষন ও কিস্তি আদায়ের যন্ত্রণায় আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা সকারের কাছে বেতনের দাবি করছি।
বিআরডিবির সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মফিজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ১৫টি প্রকল্পে কর্মরত আট হাজার কর্মচারী দীর্ঘ দিন বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এমনিতেই বেতন ভাতা নেই। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশে সকল সরকারি চাকুরীজীদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ এখন ঘরবন্দী। নিন্ম আয়ের হতদরিদ্র মানুষগুলো বিপাকে পড়েছে এমন অবস্থায় তারা ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। ফলে বিআরডিবির কর্মচারীরা আয় থেকে দায় প্রথার বেড়াজালে পড়ে ঋণের কিস্তি ও সার্ভিস চার্জ আদায় করতে না পারায় সামান্যতম বেতনটুকু নিতে পারছে না। কিন্তু বিআরডিবি একটি বিশাল সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং এর আওয়তায় বাস্তবানাধীন প্রকল্পের কর্মচারীরাই দারিদ্র্য বিমোচন করতে গিয়ে নিজেরাই এখন দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছে।
খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোহাম্মদ আলী এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের বেতন দেয়ার আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই, কিন্তু নীতিমালার কাছে আমরা দায়বদ্ধ, তাই আদায় না করতে পারলে তো কর্মচারীদের বেতন দেয়ার বিধান নেই। তবে সরকার কর্মচারীদের প্রতি সু-দৃষ্টি দিলে প্রকল্পের জন্য ভালো হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয় জানতে চাওয়া হয় খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবালের কাছে। তিনি বলেন, আমি বিআরডিবির কয়েকটি প্রকল্পের সভাপতি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মানবিক কারণেই হত দরিদ্রদের কাছে গিয়ে কিস্তি আদায় করাটা কঠিন বিষয়। সরকার কর্মচারীদের বেতনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। এতে করে হাজার হাজার কর্মচারীর খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার পথ সুগম হবে বলে মনে করেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। করোনা আক্রান্ত হয়েছে দেশের ৬৩টি জেলা। নিন্ম আয়ের হতদরিদ্ররা ঋণগ্রহীতারা যেমন পড়েছে কষ্টের মধ্যে তেমনিভাবে বিআরডিবি ১৫টি প্রকল্পে কর্মরত আট হাজার কর্মচারীরাও বেতন না পাওয়ার কারণে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সরকার বিআরডিবি কর্মচারীদের প্রতি সু-দৃষ্টি দিবে এমনটাই আশাবাদী অসহায় এই কর্মচারীরা।
এম/এইচ.স