মানিকছড়ির প্রাচীন জনপদ দক্ষিণ গাড়ীটানার ত্রিপুরাপল্লীতে উন্নয়নের ছোঁয়া

আবদুল মান্নান: মানিকছড়ি উপজেলার প্রাচীন জনপদ দক্ষিন গাড়ীটানার ত্রিপুরাপল্লীতে এ যাবৎ কালে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি! প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে এ গ্রামে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস শুরু। অথচ এ গ্রামে বসবাসরত দেড়শতাধিক ত্রিপুরা পরিবার অনুন্নত পরিবেশে বসবাস করে আসছিল। এ গ্রামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা সংস্কারে এ যাবৎ কোন জনপ্রতিনিধি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেনি! ফলে দেড়শত বছরের পুরানো এ গ্রামে যাতায়াত ছিল দুঃস্কর! সম্প্রতি জেলা পরিষদ রাস্তা উন্নয়নে দুই ধাপে প্রায় ৬৮লক্ষ টাকা বরাদ্ধে সলিং,গাইডওয়াল নিমার্ণ শুরু করেছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রাচীন জনপদ দক্ষিণ গাড়ীটানার ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাস করছে প্রায় ১শত ৭৫ পরিবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন। আর এ গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মূল সড়কের গাড়ীটানা ফরেস্ট অফিসের দক্ষিণে কালী মন্দির সংলগ্ন সড়কই হলো ত্রিপুরাপল্লীতে প্রবেশমুখ। সড়কটি দিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত ত্রিপুরা সম্প্রাদায়ের বসবাস। অথচ এ গ্রামবাসীরা মাত্র কিছুদিন আগে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হয়েছে! আর এখন চলছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা সলিং ও রাস্তার দু’পাশে ধান্য জমিতে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ। বিদ্যুৎ সংযোগ শেষে এখন রাস্তাটি সংস্কার হলে এ গ্রামটির সৃষ্ঠির প্রায় দেড়শত বছর পর উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে। গ্রামবাসীর জন্য এটি যেন বিশাল প্রাপ্তি!

এ প্রসঙ্গে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বধু কুমার ত্রিপুরা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার দাদা এবং বড়দাদা এ গ্রামে মৃত্যুবরণ করেছে। শতশত বছর পেরিয়ে গেলেও এতদিন কেউ এ গ্রামের দিকে সুদৃষ্টিতে তাকায়নি। এ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ পেয়েছি তাও আবার লক্ষ লক্ষ দিতে হয়েছে! যাক তারপরও গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে! আর এখন জেলা পরিষদ সদস্য এম.এ. জব্বার আমার গ্রামটির দিকে ফিরে তাকিয়েছেন। ফলে রাস্তা সলিং ও গাইডওয়াল নির্মাণ চলছে। এতে আমরা ত্রিপুরা সম্প্রদায় খুব খুশি। তিনি আরো জানান, এ গ্রামে দুশ বছর পুরানো এবং প্রায় ৩ একর টিলাভূমি জুড়ে রয়েছে বিশাল আকৃতির বটগাছ। শতশত বছর পূর্ব থেকে আমরা এ বটগাছের নীচে পূজা করে আসছি। বটগাছের অদূরে সম্প্রতিকালে আমরা একটি মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত মন্দির নির্মাণে সরকারি বরাদ্ধ পাইনি,তবে আশ্বাস পেয়েছি। এ রাস্তাটি সংস্তার হলে এ গ্রামের বটগাছ’কে ঘিরে বিশাল পর্যটন শিল্প গড়ে ঊঠবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ এত বড় বটগাছ এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও নেই।

শতবছর পুরানো গ্রামের উন্নয়নের ছোঁয়া সর্ম্পকে জানাতে চাইলে পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ির সদস্য ও মানিকছড়ি উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ. জব্বার বলেন,আসলে গ্রাম অনেক পুরানো। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা গ্রামের উন্নয়নে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ এ গ্রামের রাস্তা-ঘাট এখনো অনুন্নত! তাই বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নজরে আনা হলে তিনি গ্রামের উন্নয়নে জেলা পরিষদ’কে প্রকল্প গ্রহণে অনুরোধ করেন। যার ফলে জেলা পরিষদ এডিবি’র বরাদ্ধ থেকে ধাপে ধাপে প্রকল্প গ্রহন করেছে। অচিরেই উপজেলা অবহেলিত এ জনপদটিকে আলোকিত করা হবে।

Read Previous

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মানিকছড়িতে মানববন্ধন

Read Next

খাগড়াছড়িতে র‌্যাব-সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র ব্যবসায়ী আটক