মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সড়কে ব্রিজ নির্মাণ কাজে নিয়ম-নীতি কী মানা হচ্ছে ?

মোবারক হোসেন: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি-মানিকছড়ি সড়কে প্রায় ৬৩কোটি ৪লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৬টি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭সালের এপ্রিল মাসে। এ পর্যন্ত ৩দফা কাজের সময়সীমা বাড়ানো হয়। করোনা পরিস্থিতির ৩মাস আগে থেকেই পুরো প্যাকেজের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে লক ডাউনের কারণে তো স্বাভাবিক ভাবে কাজ বন্ধ থাকারই কথা। কেন না শ্রমিক নেই, পর্যাপ্ত নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ নেই। এরি মাঝে হাতিয়া ছড়া ব্রিজের কাজ করতে দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিককে। এ অবস্থায় নিয়ম মানা হচ্ছে কতটুকু এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। যেখানে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে ঘরবন্দী মানুষ, সেখানে শ্রমিকরা দিব্যি নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে যেনো তেনো ভাবে। অভিযোগ ওঠেছে লক্ষ্মীছড়ি থানা সংলগ্ন ব্রিজটি পূর্ব পাশে রাস্তার স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে প্রায় ৪/৫ফিট নিচে ব্রিজের গার্ডার ও রেলিং এর শেষ করা হয়েছে। ব্রিজ থেকে নেমেই উপরে মূল সড়কে ওঠতে হবে আরো থেকে ৬ ফুট । সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ব্রিজটি কি এভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে নাকি ঠিকাদার তার ইচ্ছামত নির্মাণ কাজটি শেষ করেছে, এর তদন্ত কী কখনো হবে ?। এলাকাবাসীর অভিযোগ আর ৪/৫ফুট উচ্চতা বাড়িয়ে দিয়ে রাস্তা বরাবর হলেই দেখতে যেমন সুন্দর হতো যানবাহন চলাচল করতে পারতো নির্ভিগ্নে। বর্তমান অবস্থায় কাজটি শেষ করা হলে দুর্ঘটনার আশংকা থেকেই গেলো।

এদিকে লকডাউনের মধ্যেই গোপনীয়তা রক্ষা করেই এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ থাকার পরও হাতিয়া ছড়া এলাকায় একটি ব্রিজের কাজ ত্রুটি রেখেই শেষ করে যাচ্ছে ঠিকাদার। পশ্চিম পাশে ৪মাস আগে ফেলে রাখা ওয়েল ফাউন্ডেশন ১২মিটার অর্থ্যাৎ প্রায় ৩৯ফুট গভীরে যাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয়রা বলছেন পুরোটা গভীরে না গিয়েই টপলগিং ঢালাইর কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে, ওয়েল ফাউন্ডেশন দীর্ঘ দিন ধরে এক পাশ উপর-নীচু(বাঁকা) হয়েছিলো। ঠিকাদার কৌশলী হয়ে পুরোটা না বসিয়ে লেভেল মিলানোর জন্য টপে আলগা স্তর করে ঢালাই দিয়ে সমান করে দেয়। উপরের টপে ওয়াটার লেভেল মিলালেও প্রকৃতপক্ষে সামানভাবে ১২মিচার গভীরে ওয়েল ফাউন্ডেশন গিয়েছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় জনৈক এক বাসিন্দা জানান, আমরা কয়েকমাস ধরে দেখছি এপাশটা বাঁকা হয়েছিল। কিন্তু কথন মাটি উঠিয়েছে, সেরকম তো দেখিনি। মাটি ওঠানো হলে নতুন মাটি তো পরে থাকার কথা। বর্তমানে ওয়েল ফাউন্ডেশন এর দিকে তাকালে সাধারণ মানুষর বলে দিতে পারবে এখঅনে আলাদা করে কোথাও কম কোথাও বেশি পরিমাণ অতিরিক্ত ঢালাই দেয়া হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় এখানে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে অনিয়মের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে সচেতন মহল মনে করে। এছাড়াও ধুরুং নদী হতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে প্রায় ২০হাজার ঘটফুট বালি তুলে ফিলিং করা হয়েছে। এ বালি উত্তোলনের উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোতি নেয়া হয়নি। তাৎক্ষনিকভাবে উপেজলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হলে কিছু সময় বন্ধ থাকার পর গোপনে রাতের অন্ধকারে বালি উত্তোলন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সিলেট সেন্ড (সিলেকশন বালু) ছাড়াই চলছে ঢালাই কাজ। জানা যায়, স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে লক ডাউনের কারণে যানবাহন চলাচল না থাকায় সিলেকশন বালু কয়েকমাস ধরে আনা বন্ধ রয়েছে।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগ(সওজ) এর উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো: দিদারুল ইসলাম এর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে পাওয়া পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে ঠিকাদেরর নিজস্ব প্রকৌশলী তন্ময় আহমেদ বলেন, ১০মাস ধরে আমরা চেষ্টা করছি সঠিকভাবে নির্মাণকাজটি শেষ করতে। অনেক দিন বাঁকা হয়েছিলো এটা সঠিক পরে মাঠি খুঁড় সঠিক জায়গায় বসানো হয়। ওয়েল ফাউন্ডেশন ঢালাই তারতেম্যর কারণ জিগ্যেস করলে সিস্টেম ফল্ড করেছিলো, ঢালাইয়ের সময় সেন্টারিং ভেঙ্গে পড়েছিল বলে তাঁর দাবি। সিলেকশন বালু ছাড়াই কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা নরমাল কাজ তাই স্থানীয় বালু দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া করোনার কারণে গাড়ি চলাচল নাই, তাই মালামাল পরিবহন করা যাচ্ছেনা বলে ঠিকাদারের নিজস্ব প্রকৌশলী এমনটিই দাবি করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শ্রমিক মজুরী না পাওয়ার কারণেই বাকি কাজগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে পত্রিকায় না দিলে ভালো হয়, নিউজটি না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। তাহলে একটু সমস্যা হতে পারে বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।

ঠিকাদারের অবহেলায় ভবিষ্যৎে মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে বিশাল বরাদ্ধের এই ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম কিংবা ত্রুটি রয়েছে কিনা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৭ নাম্বার প্যাকেজে খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সেতু নির্মাণের কুমিল্লার কচুয়া উপজেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা বিল্ডার্স কনষ্ট্রাকশন লি: কে কার্যাদেশ দেয়। মেসার্স রানা বিল্ডার্স স্বত্বাধীকারী মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ ২০১৭সালের এপ্রিল মাসে সেতুুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবিাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত একটি সেতুর কাজও শতভাগ সম্পন্ন করতে পারে নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ। ফলে উক্ত সড়কে রড, সিমেন্টের ভাড়ি যানবাহন চলাচলের কারণে পুরো রাস্তাটি অকেঁজো হয়ে পরেছে। চলতি বর্ষার আগে যদি ব্রিজের কাজ শেষ না করা হয় মানুষ ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়বে।

Read Previous

মানিকছড়িতে জনতার হাতে আটক চিত্রা হরিণ চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর

Read Next

মানিকছড়ি’র তিনটহরীতে শিশু খাদ্য বিতরণ