লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের চলছে নির্ঘুম প্রচারণা

মোবারক হোসেন: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের ঘুম ততই হারাম হচ্ছে। প্রার্থীরা আর ঘরে বসে থাকছেন না। চলছে দিনে-রাতে বিরামহীন নির্ঘুম প্রচারণা। কে হচ্ছেন আগামী দিনের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার অভিভাবক। বিজয় মালা পববেন কে? এমন জল্পনা-কল্পনা এখন উপজেলার সর্বত্র। আলোচনার মূল বিষয় এখন ৮ মার্চ ভোটের দিনকে ঘিরে।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার নির্বাচনের ইতিহাসে এত অধিক সংখ্যক প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। চেয়ারম্যান পদে ৫জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জনসহ ১২জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। এর কারণ হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতার আড়ালে বাঙ্গালী প্রার্থী না থাকাই মূল রহস্য বলে ভোটারদের অভিমত। তবে শুধু মাত্র ১টি পদে বাঙ্গালী প্রাথী পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: নুরে আলম(টিউবওয়েল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করছেন। বিপরীতে রয়েছে আরো ২জন উপজাতীয় প্রার্থী। তার সাথে লড়বেন রাজু চাকমা দিপান্তর (তালা) প্রতীক ও উল্লাচি মারমা (চশমা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৪জন। সুমনা চাকমা (তীর-ধনুক), মেরিনা চাকমা (ফুটবল), মিনুচিং মারমা (পদ্ধফুল) ও রত্না চাকমা (কলস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতায় আছেন।

এবার নির্বাচনের মাঠ পূর্বের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে একটু আলাদা। প্রধান বিরোধী দল(বিএনপি) নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় মাঠে নেই ততটা উত্তাপ। তবে আঞ্চলিক দলের প্রভাব থাকায় নির্বাচন হয়ে ওঠছে তুমূল প্রতিদ্বদ্ধিতাপূর্ণ। দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় বিজয়কে প্রার্থীরা নিয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। একদিকে সরকার দলীয় প্রার্থীর মর্যাদার লড়াই অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দেখছে ইমেজ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে প্রচারণাও চলছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে। এলাকা ভেদে বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি পাড়ার হেডম্যান-কার্বারী ও মুরুব্বীদের কদর বেড়েছে ।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় মোট ভোটার ১৮হাজার ৩০০। ১৫হাজার কাষ্টিং ভোট ধরলেও ভোটের বড় অংকটাই চাকমা। ছোট অংকটা বাঙ্গালি এর মধ্যে রয়েছে হিন্দু ও সাঁওতাল। মারমা ভোটার প্রায় ৪হাজার। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মারমা প্রার্থী ২জন। চাকমা প্রার্থী ৩জন। বাঙ্গালী কোনো প্রার্থী না থাকায় ভোট বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই অঙ্কের ভোট যে দিকে ঝুকবে সেই হবে বিজয়ী। ভোটের হিসেবে আনারস প্রতীকে রাজেন্দ্র চাকমা এগিয়ে থাকলেও তাঁর ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে পারেন দোয়াত কলম প্রতীকের স্বপন চাকমা ও ঘোড়া প্রতীক নিলবর্ণ চাকমা। সেই ক্ষেত্রে নৌকা প্রতীকের বাবুল চৌধুরী ও মোটরসাইকেল প্রতীকের অংগ্য প্রু মারমা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন।

১৮ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন হিসেবে করলে এ সংবাদ যখন প্রকাশ হবে  নির্বাচনের বাকি থাকবে মাত্র ২দিন। নির্বাচনী আমেজ খুব একটা চোখে না পড়লেও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাবুল চৌধুরী। নৌকা প্রতীকের গণসংযোগ চোখে পড়ার মত। পোষ্টার লিফলেট, ব্যানার ঝুলছে পুরো উপজেলায়। প্রচারণার মাইকিং চলেছে সমানতালে। প্রার্থী বাবুল চৌধুরী প্রতিদিনই কোনো কোনো এলাকায় গণসংযোগে যাচ্ছেন, পাচ্ছেন ভোটারদের ব্যাপক সারা। এমনটাই জানালেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মারমা নেতা বাবুল চৌধুরী। বাবুল চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরকারের উন্নয়নের বার্তা নিয়ে যেখানে যাচ্ছি ব্যাপক সারা পাচ্ছি। বিএনপি থেকে সদ্য যোগদান করে আওয়ামীলীগের এই প্রার্থীর বিশ্বাস সাধারণ ভোটাররা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করে চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটাবে এনমটাই আশাবাদ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাবুল চৌধুরীর।

এদিকে নিরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন সাবেক লক্ষ্মীছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা আনারস প্রতীক, সাবেক বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চাকমা দোয়াত কলম প্রতীক ও সাবেক বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নিলবর্ণ চাকমা ঘোড়া প্রতীক। মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী অংগ্য প্রু মারমার গনংসংযোগ জোড়ে-সোড়ে চালাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ী পল্লীগুলোতে। শো-ডাউন কিছুটা কম থাকলেও ভোটারদের ঘরে ঘরে বেশি যাচ্ছেন এই প্রার্থী এমনটাই জানালেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এলাকার মানুষকে সুখে-দু:খে ছিলাম, শান্তিতে রাখার জন্য অতীতে চেষ্টা করেছি আগামীতেও আমি নির্বাচিত হলে সকল মানুষের জন্য কাজ করবো এবং শান্তি ও সৌর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করা দরকার আমি তাই করবো। সাধারণ মানুষ আমাকে পরীক্ষিত একজন নেতা হিসেবে এ উপজেলার উন্নয়নের গুরু দায়িত্ব আমার কাঁধে দিবে এ প্রত্যাশা আমি করি।

লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন বলে দাবি করলেও গুঞ্জন রয়েছে নেপত্থে আঞ্চলিক দলের সমর্থন দেয়ার বিষয়টি। যদিও সংঘঠনের পক্ষ হতে তা নাকচ করা হয়েছে। রাজেন্দ্র চাকমা আনারস প্রতীক প্রার্থী বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালি সকলের জন্য কাজ করেছি। আমার অতীতের কর্মকান্ড বিবেচনা করে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী করবে এনটাই আশাবাদী।

ঘরে বসে নেই বর্মাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদেরর সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন চাকমা যিনি লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে। এই প্রার্থীর দাবি বিগত উপজেলা নির্বাচনে দুর্ভাগ্যবসত শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকতে পারিনি। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অনেক দু:খ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে না পারায়। এবার সুযোগ এসেছে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার। আমি ৩ বছর আগে থেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ভোটার এলাকার মানুষ ভোটের তারিখটির জন্য অপেক্ষো করে আছেন। বিপুল ভোটে আমাকে বিজয়ী করবে এমন মনোভাব ব্যাক্তি করেন তিনি। আপনার প্রতিদ্বন্ধি কাকে ভাবছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি না হলেও নৌকা প্রতীক কাছাকাছি থাকবে বলে তার ধারনা। এদিকে গণসংযোগে পিছিয়ে নেই বর্মাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিলবর্ণ চাকমা। ভোটের দৌড়ে ঘোড়া এগিয়ে থাকবে সবাইকে পিছে ফেলে এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রতি দিনই গংসংযোগ চালাচ্ছেন সবার মুরুব্বী প্রবীণ এই প্রার্থী।

এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: নুরে আলম(টিউবওয়েল), রাজু চাকমা দিপান্তর (তালা), উল্লাচি মারমা(চশমা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুমনা চাকমা(তীর-ধনুক), মেরিনা চাকমা (ফুটবল), মিনুচিং মারমা (পদ্ধফুল) ও রতœা চাকমা (কলস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন।

একমাত্র বাঙ্গালী প্রার্থী বয়সে তরুন ভাইস-চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন মো: নুরে আলম (টিউবওয়েল) প্রতীক নিয়ে। প্রচারণা চলছে বেশ জোড়ে-সোড়ে। সম্প্রীতির এই লক্ষ্মীছড়িতে পাহাড়ি-বাঙ্গালি মিলেমিশে থাকার প্রত্যয়ে সরকার দলীয় এই প্রার্থীর বিশ্বাস একবার অন্তত ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করলে এলাকার সকল মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে আমি কাজ করবো ।

লক্ষ্মীছড়ি কলেজের জমিদাতা সত্যরঞ্জন চাকমার ছেলে রাজু চাকমা দিপান্তর। লড়ছেন তালা প্রতীক নিয়ে। ৩য় উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন তিনি। সামান্য ভোটের ব্যবাধানে হেরে যান রাজু চাকমা। সকলের পরিচিত মুখ রাজু চাকমা এবারের সুযোগটি কাজে লাগাতে চান শতভাগ। আমি আগেও ভোটের জন্য মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েছি। সবাই আমাকে চিনে আমার নির্বাচনী পরিবেশ অনুকোলে আমাকে বিজয়ী করে পরিষদের চেয়ারে বসাবে এই আশা করছি।

মানুষের সুখে-দু:খে এগিয়ে আশা যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থাকা যে মানুষটি তীর-ধুনক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন নারী নেত্রী সুমনা চাকমা। পিতার নাম প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান সুনীতি কুমার চাকমা। বাবার ইমেজ ও পরিবারের রয়েছে বিশাল পরিচিতি। বিজয়ের মালা তাঁর গলেই যাবে সেই প্রত্যাশা থেকে উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ছুটে বেড়াচ্ছেন অপর প্রান্ত। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই, মানুষ আমাকে ভালোবাসে, এবার আমাকে নির্বাচিত করবে এ উপজেলার উন্নয়নের জন্য কাজ করবো এমন প্রত্যাশার কথাই ব্যক্ত করলেন সুমনা চাকমা।

এছাড়াও প্রতিদ্বন্ধিতার মাঠে আছেন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে উল্লাচি মারমা লড়ছেন চশমা প্রতীক নিয়ে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরো প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন ৩জন প্রার্থী মেরিনা চাকমা (ফুটবল), মিনুচিং মারমা (পদ্ধফুল) ও রতœা চাকমা (কলস)। জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে তারাও নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় রয়েছেন।

Read Previous

নানিয়ারচরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রচারণায় সুজিত তালুকদার এগিয়ে

Read Next

মানিকছড়িতে ‘দি মারমা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন সভা