শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ‘র অভাবে ৩ পাবর্ত্য জেলায় পাঠদান ব্যহত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষার শিক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার: বিগত শিক্ষাবর্ষে তিন পার্বত্য জেলার সব কয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিশুদের প্রথমবারের মতো প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের নিজ নিজ মাতৃভাষার বই দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবছরও ১শত ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিক্ষার্থীরা প্রথম শ্রেণীর বই পেয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায়  বিদ্যালয়গুলোতে বই পেলেও পাঠদান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে শক্ষক, অভিবাবক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র সচেতন নাগরিকদের মনে। সরকারের পক্ষ থেকে “জাতীয় স্কুল শিক্ষা পাঠ্যক্রম (এনসিটিবি)” বিগত শিক্ষাবর্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিশুদের পাঠদানের উদ্দেশ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শুরুতে তিন পার্বত্য জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই ও খাতা পৌছনো হয়। কিন্ত প্রয়োজনীয় দাফতরিক নির্দেশনা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত না হওয়ায় প্রেরিত বই-খাতাগুলো গেল বছর (অথাৎ ২০১৭ সালে) নিজ নিজ বিদ্যালয়ে আলমারিতেই বন্দি ছিল। ২০১৮ চলতি শিক্ষাবর্ষে পর্যপ্ত বই সরবরাহ থাকার পরও অনিশ্চিত হয়ে পরেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদান। কারন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট ও স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের প্রশিক্ষণ অভাবে পাঠদান নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশিষ্ট সব মহল।

জানা গেছে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এজিওগুলো) একদশক পরিক্ষামূলক ভাবে বিদেশী অর্থায়নে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার কার্য্যক্রম অব্যহত রাখে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার এনসিটিবির মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চুড়ান্ত করে ২০১৬ সালে দেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, রাখাইন ও সাদ্রি ভাষায় পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক বই ও প্রাসঙ্গিক ভাবে অলঙ্কৃত খাতা প্রণয়ন করে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পৌছানো হয়। কিন্ত বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের দক্ষ শিক্ষক না থাকায় কার্যক্রমটি শুরু থেকেই মূখ থুবড়ে পড়ে। সেচ্ছাসেবী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারের লক্ষ্যকে এগোতে মাঠে নামলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। বাবুছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীপুলাক্ষ চাকমা বলেন, প্রাক প্রাথমিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি’র শিক্ষার্থী চাহিদা অনুসারে পাঠ্য বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে চাকমা শিক্ষরা চাকমা ভাষায় কথা বলতে পারে কিন্তু ভাষার অক্ষর লিখতে পড়তে পারে না, বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের ক্ষেত্রে উচ্চারণ, শব্দার্থ ও বানানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাতৃভাষাভিত্তিক পাঠদানের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রশিক্ষণ জরুরী।

এছাড়াও ত্রিপুরা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সূর্যশ্বর ত্রিপুরা, মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও শিক্ষকার ক্লাস নিতে পারছেনা কারন তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাতৃভাষার অক্ষর লিখতে ও পড়তে পারে না।
জাবারাং কল্যাণ সমিতি‘র দীঘিনালা উপজেলা মাতৃভাষা প্রকল্প পরিচালক বিদ্যুৎ জ্যোতি চাকমা বলেন, সরকার মাতৃভাষায় প্রকাশিত বই দিয়ে এটা ইতিবাচক দিক তবে শিক্ষকদের স্বল্প মেয়াদি মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ প্রদান করে শিশুদের পাঠদান করানো সম্ভব নয়। গুণগত ভাবে মাতৃভাষায় শিশুদের পাঠদানের লক্ষে প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা সময়ের দাবী। বর্তমানে শিক্ষা কারিকুলামে অর্ন্তভূক্তি করতে হবে। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সেট্রক্টর মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, সরকারী ভাবে মাঠ পযার্য় শিক্ষকরা এখনও প্রশিক্ষন পায় নাই।এনজিও জাবারাং কল্যাণ সমিতি কেন্দ্রীয় ভাবে মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সচেতন ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিশুদের মাতৃভাষার পাঠ্য বই সঠিক সময়ে সকল বিদ্যালয়ে সরবরাহ  করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে স্ব স্ব ভাষার শিক্ষকরা পাঠদান করতে আন্তরিক হতে হবে। তবে সরকারী ভাবে প্রশিক্ষন দেওয়ার নাম তালিকা প্রেরন করা হয়েছে।
জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড(এনসিটিবি) চাকমা ভাষায় বই লেখক আনন্দ মোহন চাকমা বলেন, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেয়াটা খুব জরুরী এবং শিক্ষক নিয়োগ ক্ষেত্রে স্ব-স্ব ভাষা দক্ষব্যাক্তিকে অগ্রধিকার দিতে হবে। তাহলে মাতৃভাষায় পাঠদান করতে সক্ষম হবে। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড(এনসিটিবি) ত্রিপুরা ভাষার বই লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষার বই দিয়ে অনেক ভাল করেছে। তবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষনেরও ব্যবস্থা করা দরকার এবং সরকারী ভাবে শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার জন্য নির্দেশ থাকা দরকার।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা বলেন, সরকারের আন্তরিকগতার অভাব। আর অবকাঠামো একটি বড় সমস্যা,তবে সরকার চাইলে সবকিছু সম্ভব সমস্যাগুলোকে চিহ্নি করে পর্যায়ক্রমে সমাধান করতে হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং শিক্ষদরে দায়িত্বের প্রতি আন্তারিকগতা থাকবে হবে।

Read Previous

Clock is companies underage ticking for e-cig users

Read Next

‘শিলং তীর’ জুয়ায় নিঃস্ব হচ্ছে রামগড়ের মানুষ