সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভুয়সী অবদান রাখছেন গুইমারা রিজিয়ন

                        নিরাপত্তা, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের মডেল

মোবারক হোসেন: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে সৌহার্দ্য,সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখছেন ভুয়সী অবদান। পুরো বছর জুড়েই থাকে নানা কর্মকান্ড। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন, রিজিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। ঈদ,দুর্গোৎসব ও প্রবারণা পুুর্ণিমা উদযাপনে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বৃক্ষ রোপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি, অমর একুশে বই মেলা ও বই উৎসব, চক্ষু চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা, দুস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র, নগদ অর্থ ও ঢেউ টিন বিতরণ, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজে গুইমারা রিজিয়নের সার্বিক সহযোগিতা ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মতবিনিময় সভার আয়োজন থাকে নিয়মিত। সচেতন ও বিজ্ঞমহলের মতে নিরাপত্তা, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের মডেল ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন। এখানকার পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর নানা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা, চিকিৎসা এবং দুস্থ্যদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরল অবদান রাখছেন গুইমারা রিজিয়নের সেনাবাহিনী। গৃহহীন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর নির্মাণ, নগদ অর্থ সহায়তা, মসজিদ-মন্দির-কিয়াং নির্মাণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, চক্ষু শিবির আয়োজন উল্লেখযোগ্য। গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোন, সিন্দুকছড়ি জোন, মাটিরাঙ্গা জোনের সমস্ত এলাকায় রিজিয়ন কমান্ডারের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে মানুষের সেবায় গুইমারা রিজিয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। রিজিয়ন সদর দপ্তরে প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত দিনে সেনাবাহিনীর ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। অপর দিকে প্রত্যেকটি জোন সদরের পক্ষ হতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ দিন বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা। অনেক ক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজনেও রোগীরা ছুটে যান সেনাবাহিনীর ডাক্তারের কাছে। শুধু তাই নয়, মূমূর্ষ রোগীদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর নিজস্ব এ্যাম্বুল্যান্স’র সহায়তার পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগেও জরুরীভিত্তিতে রোগী পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা সিএমএইচএ। গুইমারা রিজিয়ন এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জোনের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লার লায়ন আই হসপিটাল ও চট্টগ্রামের লায়ন্স হসপিটালসহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় সবকয়টি উপজেলাতেই বিনামূল্যে চক্ষু শিবির পরিচালনা করে আসছেন সেনাবাহিনী।

সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে গুইমারা রিজিয়ন কর্তৃক চক্ষু শিবির পরিচালনা করে প্রায় ৯০০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ১৩০ জন ছানি পড়া রোগীকে বিনামূল্যে অপারেশন করার সুযোগ করে দিয়েছে। চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প পরিচালনা করে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২’শর অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র এবং ওষধ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে গুইমারা রিজিয়নসহ রিজিয়নের আওতাধীন প্রত্যেকটি জোন সদরে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো-

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম অত্র রিজিয়ন অধীনস্থ সকল জোন এলাকার বিভিন্ন পূজাম-প পরিদর্শন করে পূজা পরিচালনা কমিটির নিকট অনুদান প্রদান করেন। জানা যায়, সিন্দুকছড়ি জোনের আওতাধীন গুইমারা কেন্দ্রীয় কালি মন্দির পরিদর্শন করে রিজিয়ন কমান্ডারের সহধর্মীনী অনুদান প্রদান করেন। এছাড়া মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় কালি মন্দির ১৫ হাজার টাকা, লক্ষ্মীছড়ি কালি মন্দির ১৫ হাজার টাকা, মাটিরাঙ্গা বলিটিলা কালি মন্দির ৩৫ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন পূজাম-পে ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা রিজিয়নের পক্ষ হতে অনুদান প্রদান করা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চিবর দান অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সিন্দুকছড়ি আমতলী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে ৩৫ হাজার টাকা, কুশিনগর বনবিহারে ১৫ হাজার টাকা, গুইমারা ও মানিকছড়ি এলাকার বৌদ্ধ বিহারে ৫০হাজার ৫০০ টাকা এবং মাটিরাঙ্গা বাজার বৌদ্ধ বিহারে ২০ হাজার টাকাসহ মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।

‘মানুষ মানুষের জন্য’ মানবতার সেবায় এগিয়ে এসে গুইমারা রিজিয়ন দুরারোগ্যব্যধিতে আক্রান্ত থলিবাড়ি এলাকার রেমা মারমাকে মানবিক বিবেচনায় ৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এছাড়াও পাতাছড়া এলাকার কোরআনে হাফেজ ফেরদৌসি বেগম খেলাধুলা করার সময় একটি হাত ভেঙ্গে গেলে তাঁর চিকিৎসা বাবদ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এদিকে সিন্দুকছড়ি জোনের অধীন তারণ্যের সংশপ্তক সামাজিক সংগঠক কর্তৃক পরিচালিত আকবরী পাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অনুদান হিসেবে ৩০ ব্যাগ সিমেন্ট প্রদান করা হয়। গুইমারা রিজিয়ন কর্তৃক লক্ষ্মীছড়ি জোন পরিদর্শনকালে ৮ জন গরীব ও অসহায়কে ৩৪ হাজার টাকা এবং ২ বান্ডেল ঢেউ টিন প্রদান করা হয়। সিন্দুকছড়ি গড়াইছড়ি এলাকায় একজন গরীব ও অসহায় মহিলাকে একটি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেয়াসহ শীত বস্ত্র ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম গুইমারা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত উন্নয়ন মেলা পরিদর্শন করে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং ২০ জন বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করেন। অমর একুশে বই মেলা উপলক্ষ্যে মানিকছড়ি টাউন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বই মেলা উপলক্ষ্যে গুইমারা সরকারি কলেজ,মানিকছড়ি গিরি মৈত্রি সরকারি ডিগ্রি কলেজকে ১০ হাজার টাকা এবং গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয় ২০ জন বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করেন। অমর একুশে বই মেলা উপলক্ষ্যে মানিকছড়ি টাউন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বই মেলা উপলক্ষ্যে গুইমারা সরকারি কলেজ, মানিকছড়ি গিরি মৈত্রি সরকারি ডিগ্রি কলেজকে ১০ হাজার টাকা এবং গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয় শহীদ লে: মুশফিক স্কুল, রানী নিহার দেবী উচ্চ বিদ্যালয় ও মানিকছড়ি ইংলিশ স্কুলকে ৭ হাজার টাকা করে ২৮ হাজার টাকাসহ মোট ৪৮ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। রিজিয়ন কমান্ডার লক্ষ্মীছড়ির বাইন্যাছোলা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনাবাহিনী পরিচালিত বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে স্কুলটির উন্নয়নে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা অনুন্নত অবহেলিত এই লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ একটি মহতি উদ্যোগ।

১০ জানুয়ারি বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন বছরের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রিজিয়ন কমান্ডার। এসময় শিক্ষার্থীদের শুব্ধ ভাষায় জাতীয় সংগীত পরিবেশেনসহ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেন। এসময় ৩৯০ জন শিক্ষাথীর মাঝে বই বিতরণ এবং স্কুল ড্রেস তৈরী বাবাদ ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা অনুদান প্রদান করেন রিজিয়ন কমান্ডার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্য রিজিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সকল স্কুল কলেজে জাতির পিতার ‘মহান জীবন ও আদর্শ’ বিষয় রচনা প্রতিযোগীতার ১২ জন বিজয়ীকে পুরষ্কার দেয়া হয় এবং ৭৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই উপহার দেয়া হয়। শহীদ লে: মুশফিক উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ৩০জন বিজয়ীদের মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডারের পতœী রেগম ফাহমিদা সাজেদ। ২১ নভেম্বর এ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।

সিন্দুকছড়ি জোনে বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে’র আয়োজন করা হয়। ১৬ অক্টোবর আয়োজিত ফাইনাল ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ট্রপি বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল হতে ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা মানিকছড়ি উপজেলায় সিন্দুকছড়ি জোনের তত্ত্বাবধানে থ্যালাসেমিয়া(রক্তশূন্যতা) এবং শিশুসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় গত ১৭ মার্চ। পাহাড়ি-বাঙ্গালিসহ মোট ২’শ ৭১জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

‘সুস্থ্য চোখে দেখি সুন্দর পৃথিবী’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ওষধ বিতরণ করা হয়। ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এ চক্ষু সেবা কেন্দ্রে পাহাড়ি-বাঙ্গালি মিলে ৩’শ ৭৫জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়াও প্রথম ধাপে ৪২জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪০জনসহ মোট ৮২জনকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করা হয়। গুইমারা রিজিয়নের পক্ষ হতে ১২ নভেম্বর জালিয়াপাড়া প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি এলাকায় ১২০জন দরিদ্র জনগণের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ৩টি হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়।

লক্ষ্মীছড়ি জোনের তত্ত্বাবধানে বাইন্যাছোলা এলাকায় জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সহায়তায় বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরি ও ওষধ বিতরণ করা হয় গত ১৭ ডিসেম্বর। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাসহ মানিকছড়ি ও ফটিকছড়ি এলাকার ২’শ ৫৩জন রোগীকে চক্ষু চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্য থেকে ৪৪ জন রোগীকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করা হয়। একই দিনে ৫৫০জন দুস্থদের মাঝে ২৮০টি কম্বল, ৩৭০টি শীতবস্ত্র এবং ৪ বান্ডেল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়।

মাটিরাঙ্গা জোন সদরে ৬ সেপ্টেম্বর ঘর নির্মাণের জন্য আ: ছাত্তারকে ৩ বান্ডেল টিন, বিলকিস বেগমকে চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা এবং চাচুই মারমাকে ৫হাজার টাকা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়। পলাশপুর জোনের মতবিনিময় সভা শেষে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা কমিটিকে ৩০ব্যাগ সিমেন্ট ও ঘর নির্মাণের জন্য ২জনকে ৯বান টিন বিতরণ করা হয়। রামগড় জোনে মতিবিনিময় সভায় রিজিয়ন কমান্ডার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা শেষে রামগড় মসজিদ সংস্কারের জন্য ৬ব্যাগ সিমেন্ট একজনকে ২বান টিন এবং অপরজনেক ৪হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন রিজিয়ন কমান্ডার।

মুসলিম পাড়া ও রামসু পাড়ায় পাহাড়ি ও বাঙ্গালিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীতের রাতে ৬০টি কম্বল বিতরণ করেন। ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিনে রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম শীতার্ত মানুষের পাশে গিয়ে এ সহায়তার হাত বাড়ান। মাটিরাঙ্গা জোনে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রিজিয়ন কমান্ডার। এতে ১৭জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ নেন। ২৪ ডিসেম্বর এ কার্যত্রম উদ্বোধন শেষে ২৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। গুইমারা রিজয়নের পক্ষ হতে ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বিভিন্ন এলাকার ৮৮টি কম্বল শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে ৫টি হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়। সিন্দুকছড়ি জোন সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে ৫০জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় ১৩ ডিসেম্বর। রিজিয়ন কমান্ডার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং ২টি টেলিভিশন এবং প্রত্যেককে শাল চাদর প্রদান করা হয়।

গুইমারা রিজিয়নে মুশফিক হলে বৌদ্ধ পূর্নিমা ও ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ১৪ মে নিরাপত্তা সমস্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল জোন কমান্ডার, উপজেলা চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যান, সকল ধর্মের গুরু, হেডম্যান-কার্বারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন। ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। এ সভায় ৭০জন ধর্র্মীয় গুরু অংশ নেন। ১৬ মে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মীছড়ি জোন এলাকায় ১০৩জন ভিডিপি, সিন্দুকছড়ি জোনে ৩৮৫জন ভিডিপি এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ১৮১জন ভিডিপিকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসব প্রশিক্ষণে অস্ত্র বিহীন দ্বন্দ যুদ্ধের(আন কম্ব্যাট প্রশিক্ষণ) তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ, স্যালুটিং, ড্রিল, ব্যাক্তিগত শৃঙ্খখলা, ফায়ারিং ও দক্ষতা অর্জন এবং রণকৌশলগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২১ এপ্রিল থেকে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ অক্টোবর গুইমারা রিজিয়নের অধীনে লক্ষ্মীছড়ি জোনের তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায় ২৬জনকে বাছাই করে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা লায়ন হসপিটালে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় গুইমারা রিজয়নের অধীন লক্ষ্মীছড়ি জোনের সার্বিক তত্ত্ববধানে পরিচালিত চক্ষু শিবির থেকে ছানি অপারেশন করে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছেন এমন একজন হলেন হাতিয়া ছড়ার মো: আবু বক্কর। তিনি বলেন, আমি চোখে কিছু দেখতে পেতাম না। সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় ছানি অপারেশনের পর সবকিছু দেখতে পারছি। সে জন্য আমি সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাদের জন্য দোয়া করি।

পৃথিবীর আলো ফিরে পাওয়া এমন এক ব্যক্তির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম সুরেশ চাকমা। চোখে ছানি পড়া অন্ধত্ব নিয়ে বিষম অসহায় দিন যাপন করতেন। একা একা বসে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। এ যেনো এক দুর্বিষহ জীবন-যাপন। সর্বক্ষেত্রে প্রিয়জনদের কাছে অবহেলার পাত্র। নানা কথা শুনতে হয় ছেলে-মেয়ে ও পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে। জীবনের এমন করুন কাহিনী অনেক অন্ধ ব্যাক্তির জীবেন ঘটেছে। কিন্তু বর্মাছড়ি উপর বৈদ্য পাড়ার সুরেশ মোহন চাকমার কাহিনীটা এরকম “আমি তো আগে কিছু ‘ন’ দেখিতো এখন সব দেখে তোমারেও (সাংবাদিককে লক্ষ্য করে) দেখিতে পায়”। বয়স ৬০। ছেলে-মেয়েরা সবাই বড়। ঘরে বিয়া আর আমি। স্ত্রী মিরন্তী চাকমা কিছুটা দেখতে পায়। আমি একে বারেই দেখতে পাই নি। অপারেশন করার পর সব কিছুই দেখতে পাই। আর্মিকে ধন্যবাদ দেই, আর্শিবাদ করি। এ কথাগুলোই বলছিলেন কুমিল্লা থেকে চক্ষু অপারেশন করে ফিরে আসা সুরেশ চাকমা। জানতে চাওয়া হয়েছিল যদি বিনামূল্যে এই সেবা না পেতেন তাহলে? সাব জানিয়ে দেয় আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করে চক্ষু চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হতো না। একই ভাবে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া প্রমিলা চাকমা, মং মং মারমা, ইতালি চাকমা ও কমলা চাকমা পৃথিবীর আলো ফিরে পেয়ে খুশি হওয়ার অনুভতি প্রকাশ করেন।

গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভুয়সী অবদান রেখে চলেছে গুইমারা রিজিয়ন। এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বিশেষ করে যেসব পাহাড়ি ভাইয়েরা শহরে গিয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে না তাদের জন্য শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছে অত্র রিজিয়ন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পাহাড়ের যেসব দূর্গম স্থানে এখনো কোন সরকারী চিকিৎসা সেবা পৌঁছেনি সেখানে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ছুটে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা গুইমারা রিজিয়ন মানুষের কল্যাণে সাধ্যমত সম্ভব নিজেদের সবটুকু দিয়ে সাহর্য্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করা। শান্তি শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় থাকলে উন্নয়ন কখনো বাধাগ্রস্থ্য হবে না উল্লেখ করে এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে গুইমারা রিজিয়ন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম।

Read Previous

ফটিকছড়িতে ১৪ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা প্লাবিত

Read Next

খাগড়াছড়ির রূপা মল্লিক শিক্ষক বাতায়নে সপ্তাহের সেরা কনটেন্ট নির্মাতা