স্বীকৃতি মেলেনি আজও: বিনাজুরি খালে গণহত্যা দিবস

এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: আজ ২ জুন ফটিকছড়ি উপজেলার বিনাজুড়ি খালের গণহত্যা দিবস। এই গণহত্যায় নিহত ৬ জন শহীদের স্বীকৃতি মেলেনি আজও। সরকারী-বেসরকারী কোন উদ্যোগে গণহত্যা দিবসটি উদযাপনও করা হয় না। এ ব্যাপারে সচেতন মহলের ক্ষোভের সীমা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২ জুন ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ এর পূর্ব মাইজভান্ডারের বাড়ী থেকে তার বৃদ্ধ বাবা ও অসুস্থ স্ত্রীকে পাক বাহিনী আটক করে বিনাজুড়ি খালের পাড়ে নিয়ে যায়। মির্জা আবু পরিবারের সন্তান মির্জা মনসুর কে না পেয়ে তাদের ম্যানেজার হিরেন্য কুমার দত্ত কেও এখানে ধরে আনে। অপদ দিকে এই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো ৫/৭ জনকে এনে সেখানে আটক রেখে নানান প্রকার নির্যাতন করে পাক-বাহিনী। পিতা ও স্ত্রীকে আটকের খবর পেয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ সুদুর চট্টগ্রাম শহর থেকে চলে আসেন। নানুপুর এসে পাক-সেনাদের কাছে পিতা ও স্ত্রীকে আটক এবং তাকে খোঁজা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাকে আটক করে তার পিতা ও স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  এ দিকে বিনাজুড়ি খালের পাড়ে ম্যানেজার হিরেণ্য কুমার দত্ত (এইচ কে দত্ত), প্রদীপ দত্ত ও জয় বাংলা খ্যাত যুবক জসিমকে আটক করে চরম নির্যাতন চালাতে থাকে। বিকেলে চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ সহ ৬ জনকে  বিনাজুড়ি খালের পাড়ে সেতুর নীচে নামিয়ে ব্যানেট দিয়ে খুচিয়ে-খুচিয়ে এবং পানিতে ছুবিয়ে হত্যা করে।

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, গণহত্যার স্থানে বিনাজুড়ি সেতু হওয়ায় সেখানে কোন স্মৃতি সৌদ করা হয়নি। ২০/৩০ হাত পূর্ব পাশ্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের শশ্মাণ খোলায় হিরেণ্য কুমার দত্ত’র সমাধি স্থল। এটি বাঁশ ঝাাঁড়, জংগলে ঢাকা পড়েছে। তার পাশে বর্ধভূমি লেখা একটি সাইন বোর্ড মাটিতে পড়ে আছে। এই স্থানে যাওয়ার কোন পথ নেই। স্থানটি দেখলে মনে হবেনা এটি একটি বর্ধভূমি।
এলাকাবাসী জানান, ফটিকছড়ির বিনাজুড়ি খালের গণ হত্যা দিবসটি কোন আনুষ্টিনিকতায় স্মরণ করা হয়না। ফটিকছড়ির শিশু-কিশোররা এই গণ হত্যা সম্পর্কে জানেনা। এজন্য ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, ফটিকছড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও ফটিকছড়ির রাজনৈতিক সংগঠন গুলো একে বারেই উদাসীন। এজন্য ফটিকছড়ির সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নানুপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (বাবুল মেম্বার) বলেন, সেদিন আমি বাড়িতেই ছিলাম। পাকিস্তানি হানাদারের ভয়ে লুকিয়ে ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের খুজে দিতে নানান নির্যাতন করে নুর আহমদ চেয়ারম্যান সহ এলাকার তরুন, মেধাবী প্রাণ গুলোকে হত্যার পর আর নিজের বিবেককে ধরে রাখতে পারিনি। রামগড় সীমান্ত হয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যাই। দেশ স্বাধীন হলে প্রত্যেক বুদ্ধিজিবী হত্যা দিবসে আমরা ক’জন মুক্তি যোদ্ধারা গিয়ে সেখানে মোমবাতি প্রজ্জলন করি।

স্থানীয় নানুপুর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ওসমান গনি বাবু বলেন, বিনাজুড়ি খালের গণহত্যার স্থানে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ একটি স্মৃতি সৌদ নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দিয়েছে। এখানে এখন কাজ চলছে। এজন্য জেলা পষিদের চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

Read Previous

রামগড়ে মাদক বিরোধী অভিযান: আটক ৫ ব্যবসায়ী

Read Next

লক্ষ্মীছড়িতে বিএনপির ইফতার মাহফিল