ফটিকছড়িতে ইসলামী ফ্রন্টে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক এবং আধুনিক ও সমৃদ্ধ ফটিকছড়ি গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ফটিকছড়িতে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী (মোমবাতি) সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। সকালে উপজেলার মাইজভান্ডার দরবার শরীফের নিজ বাস ভবনে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। সন্ত্রাসনির্ভর প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়’ রাজনীতি হউক দেশের কল্যাণ এবং গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নে এ প্রতিপাদ্যকে ধারন করে মানবিক ফটিকছড়ি গড়তে ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁকে বিজয়ী করার আহবান জানান তিনি। কারো কথায় প্রলোভিত না হয়ে, দলীয় প্রার্থী বিবেচনা না করে, কোনো পেশী শক্তির কাছে মাথা নত না করে পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেয়ার জন্য তিনি তরুণ প্রজম্মের ভোটারদের প্রতি আহবান জানান। ।

এসময় সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী সাংবাদিকদের বলেন ,গত ২৩ ডিসেম্বর (রোববার) বাগানবাজার, হেঁয়াকো, নারায়নহাট, দাঁতমারা ও কাজীরহাটে নির্বাচনী গণসংযোগ চলাকালে কাজীরহাট বাজারে তাঁর গাড়ী বহর সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়। ৭০/৮০ জনের এক দল স্থানীয় সন্ত্রাসী নৌকায় ভোট মারো, মোমবাতি ঠেকাও, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নির্দেশ মোমবাতি কর নিরুদ্দেশ বলে শ্লোগান দিয়ে হামলা করে। তাঁর গাড়ী বহরের ২টি গাড়ীর গ¬াস ভেঙ্গে ফেলে ও কর্মীদের মারধর করে। এ ঘটনা ভূজপুর থানা পুলিশকে অবহিত করার পর তাৎক্ষনিক পুলিশি উপস্থিতিতে বড় ধরনের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পান।

তিনি এ ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করেননা। তিনি এ নগ্ন হামলার বিচারের ভার ফটিকছড়ির জনগণের উপর ন্যস্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন করি ৩০ ডিসেম্বর ফটিকছড়িবাসী মোমবাতি প্রতীকে ব্যালটের মাধ্যমে রায় দিয়ে এর প্রতিশোধ নিবেন ।

নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারী বলেন উপজেলার সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে গণসংলাপের আয়োজন করা হবে। সরকারী যাবতীয় বরাদ্ধের সঠিক ও সমবণ্টন এর ব্যবস্থা করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার দলীয়করণ বা স্বজনপ্রীতিকে প্রাধান্য দেবেননা।

জনগণের জন্য বরাদ্ধকৃত টাকা জনগণের মাঝে বণ্টন করাসহ ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয় করা হবে। দেশের সর্ববৃহৎ এ উপজেলাকে তিনটি জোনে ভাগ করে মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত করা হবে।
তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে আরো বলেন বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও বেকার যুবকদেরকে কর্মক্ষম দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া বেকার ও হত দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উপজেলায় বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা করা। সকলের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি মাতৃসদন হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করাসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স গুলোকে আরো আধুনিকায়নে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক, নিরক্ষরতা দুরীকরণ, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ইউনিয়ন ভিত্তিক সেল গঠন করা হবে । সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দফতরে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহন কল্পে প্রতিমাসে এলাকা ভিত্তিক গন শুনানীর মাধ্যমে জনগনের দুর্ভোগ ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহন করা হবে।

যোগোযোগ ব্যবস্থার উন্নতি কল্পে পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহন করে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের সড়ক গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন করা হবে। ঢাকা – চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য খাগড়াছড়িতে জনগনের যাতায়াতের সুবিধার্থে সড়কটিকে আঞ্চলিক সড়কে পরিণত করা, বিদ্যুত সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগে নতুন বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন করা হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুুন্ন রাখতে সকল দল ও মতের সহাবস্থান নিশ্চিত করা সহ ফটিকছড়িতে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি অক্ষণœ রাখতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাব। ইসলামী শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানব সেবার লক্ষ্যে ফটিকছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সেবামূলক অর্ধশত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নির্বাচিত হলে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধির মাধ্যমে দুস্থ আর্তপীড়িত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায় তাঁর এ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া কৃষি খাতের উন্নয়নে কৃষি জমির সুষ্ঠ ব্যবহার, প্রকৃত কৃষকদেরকে সহজ শর্তে কৃষি ঋন প্রাপ্তিসহ কৃষি উপকরন সরবারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ইশতেহারে তিনি বলেন ইতিহাস প্রসিদ্ধ ফটিকছড়িতে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের উপজেলার সমৃদ্ধি- প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আজ এ উপজেলা উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে অবহেলিত জনপদে পরিণত হয়েছে। অতীতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ মুখের ফুলঝুড়ি ও চটকদার কথাবার্তা ছাড়া তারা জনগণকে কিছুই দিতে পারেনি। ফটিকছড়ির হৃত গৌরব- ফিরিয়ে আনতে, নির্যাতিত, অবহেলিত ও অধিকারহারা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপমহাদেশের সর্বাধিক পরিচিত দরবার শরীফের আওলাদ ও প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মনোনয়নে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন বলে ইশেেতহারে উলে¬খ করেন তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্ট নেতা এস এম মনজুরুল আনোয়ার চৌধুরী, প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এস এম সাহাব উদ্দিন, উত্তরজেলা ইসলামী ফ্রন্ট সভাপতি মঈনুল আলম চৌধুরী, যুব সেনা সভাপতি মো. শাহজাহান, মো. আজিজুর রায়হান আজিজ,মাষ্টার মো. আবুল হোসেন প্রমুখ।

Read Previous

দীঘিনালায় স্কুল শিক্ষিকা লীলা দাশ’র মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক

Read Next

মাটিরাঙ্গা জোন কর্তৃক সেলাইসহ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ও শীত বস্ত্র বিতরণ