আজ মহান ১০ মাঘ: লাখো ভক্তের সমাগম মাইজভান্ডার দরবার শরীফে
এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: মাইজভান্ডারী দরবার শরীফের আধ্যাত্মিক সরাপতের প্রতিষ্টাতা গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) ১১৩তম বার্ষিক ওরশ শরীফ গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। এই ওরশ শরীফে দেশ-বিদেশের লাখো ভক্তের সমাহম ঘঠেছে বিগত ৩-৪ দিন পূর্ব থেকে। আজ বুধবার রাত ১২.০১ মিনিটে স্ব-স্ব মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীনেদের আখেরী মুনাজাত করবেন শাহসুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), শাহসূফী ডা: সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) সৈয়দ মোহাম্মদ হ্সাান মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সৈয়দ আহমদ উল্ালহ মাইজভান্ডারী (ক.) মাজার শরীফে গোসল ও গিলাফ ছড়ানোর মাধ্যমে ওরশের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)। এসময় উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী, ব্যবসায়ী সাইদুল হক খান, ক্যাপটেন সৈয়দ সোহেল হাছনাত, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ ফজলুল কাদের, আনজুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী শাহ এমদাদীয়া খেদমত কমিটির মহাসচিব সৈয়দ আবু তালেব, চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন, অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন শৈবাল প্রমুখ।
অপর দিকে বিকেল ৩টায় দরবারে গাউছিয়া আহমদীয়া মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীন ও আনজুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব শাহসূফী ডা: সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) মাজার শরীফে গোসল ও গিলাফ ছড়ানোর মাধ্যমে ওরশের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মাইজভান্ডার গাউছিয়া হক মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীন সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান (মা.জি.আ), নায়েবে সাজ্জাদানশীন আলহাজ্ব শাহসূফী সৈয়দ সহিদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), শাহজাদা সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার, শাহজাদা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল, শাহজাদা সৈয়দ নুরুল ইসলাম রুবাব, আনজুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব এস এম জাকারিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জানে আলম বাবুল, নুরুল আলম চৌধুরী, কাজী জাহাংগীর হাফিজ, সৈয়দ মাহমুদুল হক, জাহেদ হোসাইন কাউছার, আকরাম হোসেন সবুজ প্রমুখ।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রধান ওরশ উপলক্ষ্যে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, দরবারে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, গাউছিয়া হক মঞ্জিল, রহমানীয়া মঞ্জিল, মঈনীয়া মঞ্জিল কোরআন খতম, খতমে গাউছিয়া, খতমে খাজেগান, মিলাদ মাহফিল, হালকায়ে জিকির, ছেমা মাহফিল, বিশেষ মুনাজাদ ও সকল মাজার গুলোকে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করেছে। এ উপলক্ষ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও ফটিকছড়ি থানা পূলিশ ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষায় থানা পুলিশ-র্যাব-আনসার ও দুই সহস্রাদিক বিশেষ সেচ্ছা সেবক বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে।
নায়েবে শাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী জানান, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ১১৩তম ওরশ উপলক্ষ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা, আত্ম-মানবতার সেবায়, বেকার যুবসমাজকে যুবশক্তিতে রুপান্তর করতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা ও মেধা বিকাশ বৃত্তির মাধ্যমে ১০ দিন ব্যাপী নানান আনুষ্টানিকতা উদযাপন করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো ভক্তের সুবিধাত্বে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার বাইরের আশেক ভক্তদের ২-৩ দিন আগে থেকে দরবাওে আসা যাওয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দরবারে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের শাহজাদা সৈয়দ নুরুল ইসলাম রুবাব জানান, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ১১৩তম ওরশে আগত আশেক-ভক্ত, জায়েরীনদের জন্য থাকা-খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, নির্বিঘেগ্ন চলাচলের জন্য লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর জীবনী, শান-মান সম্ভলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে।
মাইজভান্ডারের বিভিন্ন মঞ্জিলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, গত ৩-৪ যাবৎ বংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা মাইজভান্ডার শরীফে আসতে শুরূ করেছেন। এদিকে গতকাল মাইজভান্ডার দরবার শরীফ ঘুরে দেখা গেছে, দেশ-বিদেশের লাখো-লাখো ভক্ত উঠ, গয়াল, গরু, মহিস, ছাগল হাদিয়া, নজর-নেওয়াজ নিয়ে আসছেন। ভারত, পাকিস্তান, বার্মা, ভুটান, মালদ্বীপ থেকেও অনেক আশেক ভক্ত-অনুরক্তরা হাদিয়া নিয়ে এসেছেন। দুইদিন আগে থেকে ১০ মাঘ মাইজভান্ডার শরীফের ওরশ উপলক্ষ্য করে মাইজভান্ডারের ২-৩ মাইল এলাকায় বিশাল মেলা বসে। কৃষি ব্যবহার্য্য পণ্য, কুঁটির শিল্প উৎপাদিত পণ্য, গ্রামীণ গৃহস্থালী সামগ্রী, ডালা, কুলা দা, বটি, বেলুণ, কাঠের পিড়া, মোড়া, পিটা তৈরীর বিভিন্ন চাচ, চুড়ি, বাশি খেলনা, মোলা-ওড়া ইত্যাদির বিশাল মেলা বসেছে।
ফটিকছড়ির উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ওরশ উপলক্ষে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামরা ও ভিডিও চিত্র ধারণের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক নজরদারি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিধান্তের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান আদালত সব সময় টহলরত আছে। যানবাহন পার্কিং এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে নাজিরহাট নতুন রাস্তার মাতায়, ফটিকছড়ি সদরে ও নানুপুর লায়লা-কবির কলেজ মাঠে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুকুর আবর্জনা মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমানে ভ্রাম্যমান স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল প্রকার যোগাযোগের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, এই মহান অলির ওরশ শরীফ লাখো ভক্তের অংশ গ্রহণে সুষ্ট ভাবে শেষ হবে আশা করি। চলাচলের জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকা বেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।