করোনাকালে প্রত্যন্ত খাগড়াছড়ি থেকে সারাদেশে অনলাইনে শিক্ষার আলো ছড়ালো রুপা মল্লিক
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারী করোনার চরম প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ছন্দপতন ঘটিয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে প্রায় ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। উলট-পালট হয়ে গেছে শিক্ষার সকল রুটিন। করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি শিক্ষার এই স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে আন্তরিকভঅবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
সরকারের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় স্ব-উদ্যোগে অনলাইন স্কুলের পেইজ খুলে ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। তেমনি একজন শিক্ষিকা হলেন খাগড়াছড়ি জেলা সদরের টিএন্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুপা মল্লিক। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মনপুরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবন থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে সারাদেশে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। এখানকার দুর্বল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, বৈদ্যুতিক লোডশেডিং ইত্যাদি নানান প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি প্রিয় ঐ শিক্ষিকা প্রতিদিন অনলাইনে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলার ২০টির মত অনলাইন স্কুলে ১৮০টিরও বেশি পাঠদান দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন ICT4E জেলা এম্বাসেডর এই শিক্ষিকা। তিনি শিক্ষা বাতায়নের দুইবারের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা এবং ২০১৯ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রুপা মল্লিকের অনলাইন পাঠদান নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় তার সাথে। তিনি তার অনলাইন পাঠদান সম্পর্কে বলেন, ‘আমি অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি ১৮এপ্রিল থেকে ময়মনসিংহ অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২০ টির মত অনলাইন পেইজে ১৮০ টিরও বেশি ক্লাস নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লাস করার পর নিজ জেলার জন্য আমি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ICT4E জেলা এম্বাসেডর পরশ মামুদ স্যরের সহোযোগিতায় আমরা ‘খাগড়াছড়ি অনলাইন প্রাইমারী স্কুল’ নামে একটি অনলাইন পেইজ চালু করি। তখন জেলার ১০ জন প্রাইমারী এম্বাসেডর মিলে প্রথম এই পেইজের জন্য কাজ শুরু করি। এখন আমাদের এই পেইজে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৪০ জনের মত। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন পাঠ্যবই বিমুখ না হয় সেজন্যই আমাদের এই উদ্যোগটি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও a2i পরিচালিত ‘ঘরে বসে শিখি’ অনলাইন পেইজেও আমি ক্লাস নিচ্ছি। করোনা কালীন এই অবসরকে আমি কাজে লাগিয়েছি এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। সেই সাথে আমার জেলার সম্মানিত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং আমার উপজেলার সম্মানিত সকল শিক্ষা অফিসারগণ আমাকে সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। এতে আমি আরো কাজ করার সাহস পাচ্ছি। এছাড়াও আমি আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি আমার স্বামী এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদারের অনুপ্রেরনায়। তার সহযোগিতা না থাকলে আমি এভাবে কাজ করতে পারতাম না।’ এসময় তিনি যে সকল সম্মানিত শিক্ষকরা এই মহামারীতে বসে না থেকে নিয়মিত দেশের কোমল মতি শিশুদের জন্য এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
রুপা মল্লিক গত ১৮ এপ্রিল থেকে অনলাইন স্কুলে পাঠদান শুরু করেন। তিনি খাগড়াছড়ি অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, বাংলাদেশ অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক, চট্রগ্রাম অনলাইন স্কুল, আমার স্কুল আমার প্রাণ, মাদারীপুর অনলাইন স্কুল, টিচার্স ড্রিম অনলাইন এডুকেশন, দিনাজপুর অনলাইন প্রাইমারি স্কুল সহ, ১৫টিরও অধিক অনলাইন স্কুলে পাঠদানে যুক্ত আছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘রুপা মল্লিক একজন আদর্শবান শিক্ষিকা। সম্প্রতি করোনাকালীন সময়ে অনলাইন স্কুলে পাঠদান দিয়ে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। উনি খুবই সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠদান দিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তা সহজেই বুঝতে পারবে। আমরা তার অনলাইন ক্লাসগুলো দেখেছি। শুধু খাগড়াছড়ি জেলাতেই নয় পুরো বাংলাদেশের সেরা শিক্ষকদের মধ্যে উনি একজন সেরা শিক্ষক হবেন আশা করি। আমি তার ভবিষ্যৎ জীবনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।’