করোনাভাইরাস থেকে কীভাবে দূরে রাখবেন আপনার শিশুকে?
ঢাকা অফিস: আজকের দিনে এই প্রশ্নে শতকরা একশোজন বোধ হয় বলবেন ভালো নেই, খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী আপদকালীন এই স্বাস্থ্য সংকটের সময় ভালো থাকাটাই বরং চিন্তার উদ্রেক করবে। সেই একই কেমন আছো? যদি ছোটদের জিজ্ঞেস করা হয়, একটা বড় অংশই বোধ হয় বলবে দারুণ আছি, স্কুল, টিউশন, সাঁতার, ক্লাস পরীক্ষা বাতিল এর এমন; ‘সব পেয়েছির দেশ’ কি বারবার আসে? যদিও বিচক্ষণ, গম্ভীর এবং সুচিন্তিত মতের অধিকারী ছোটরা হবে এটা ভাবা ভুল। এই অসময়ে যেখানে আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন এই শব্দগুলো আমাদের কাছে নতুন সেখানে ছোটরা এরকম পরিস্থিতি কতটা বা কিভাবে বুঝছে সেটা আমরা খেয়াল রাখছি তো?
এক নজরে বুঝে নেয়া যাক, বাড়িতে থাকা অবস্থায় শিশুদের কিভাবে সুস্থ রাখবো। কয়েকটি সাধারণ নিয়ম যা অবশ্য পালনীয়। পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের মনোচিকিৎসক ডাঃ তনয় মাইতি-
১। বাচ্চাদের ঘরে রাখুন। বাইরে যাওয়া, বাইরে খেলা করা সব বন্ধ রাখুন।
২। আপনার আবাসন / কমপ্লেক্সে অন্য শিশুরা থাকলে আপাতত সবাইকে সবার থেকে দূরে রাখুন। আপনার ঘরে একের বেশি শিশু আলাদা রাখতে। যথাসম্ভব শারীথাকলে চেষ্টা করুন তাদের রিক স্পর্শ থেকে দূরে রাখুন।
৩। সরকার/ হাসপাতাল / WHO দ্বারা প্রচারিত স্বাস্থ্যবিধি নিজেও মানুন শিশুদেরও শেখান।
৪। সহজ ভাষায়শিশুদের এখনকার অবস্থা বুঝিয়ে বলুন; আজকের ছোটরা তুলনামূলকভাবে অনেক পরিণত। অবস্থার গুরুত্ব ঠিকই বুঝবে।
শিশুর সামনে যা করবেন না:
১। বারবার খবর দেখবেন না; অসুখে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা ধারাবিবরণী অতিমাত্রায় শুনে বা দেখে বিশেষ লাভ নেই। মনে রাখবেন, আপনি না চাইলেও আপনার অবচেতনে আশংকা ঠিকই দানা বাঁধতে পারে; আর মনে রাখবেন আপনার বাচ্চারা আপনাকে দেখেই শিখবে, আপনার ভয় পাওয়া দেখেই ভয় পাবে। স্বাভাবিকভাবেই সেটা সামলানোর ক্ষমতা তাদের তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
২। নিজেকে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী বা খুব চিন্তিত রাখবেন না শিশুর সামনে; দুটোতেই প্রভাব ক্ষতিকর হতে পারে।
৩। শিশুর হাতে মোবাইল, টিভির রিমোট দেবেন না। ওদের নিজে থেকে খবর বা নিউজফিড দেখতে দেবেন না।
৪. ভুল বুঝাবেন না। আপনার উপর আপনার সন্তানের বিশ্বাস নষ্ট হতে দেবেন না। অহেতুক শান্ত্বনা দিতে গিয়ে এমন কিছু করবেন না, যা পরে ভুল প্রমানিত হয় এবং আপনার শিশু আপনাকে বিশ্বাস করতে দ্বিধা করে।
৫. লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন – শিশুর কাছে অত্যন্ত নতুন বিষয়। তাই এদের দুষ্টমি বা ব্যবহারের অপ্রাসঙ্গিকতা খুবই স্বাভাবিক এ পরিস্থিতিতে ; তাই অহেতুক বকাবকি বা মেজাজ খারাপ করবেন না। মনে রাখবেন, এ অবস্থা এখন বেশ কিছুদিন থাকতে পারে। শিশুকে গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রেখে এ অবস্থা সহজের কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
শিশুকে ব্যস্ত রাখার জন্য যা করতে পারেন-
১. ওদের একটা রুটিন করে দিন। স্কুলের দিনের মতো। কিছুটা সময় নিদিষ্ট রাখুন পড়াশুনার জন্য,একটু ছোট শিশুদের জন্য সপ্তাহের বিভিন্ন দিন বা সময় ভাগ করে দিতে পারেন, স্কুলের মতোই, তাতে ওরা উৎসাহ পাবে আর একঘেঁয়েমি ও কাটবে।
২. বহু স্কুল এইসময় অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করছে, অবশ্যই সেগুলোতে অংশ নিতে উৎসাহ দিন। এতে এদের পড়াশুনাও সমান তালে চলবে,স্কুলের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ ও বন্ধুদের সাথে পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করা স্পষ্টত তাদের মনের দিক থেকে সতেজ রাখবে।
৩. বাড়ি, স্কুলের মতো বন্ধুবান্ধবরা শিশুদেরর মনের জগতের অনেকটা জুড়ে থাকে, তাই লকডাউনের সময় সেটি অগ্রাহ্য করবেন না। ক্লাস পড়াশোনা বাদ দিয়েও বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কথাবার্তা শোনার বা গল্প করার সুযোগ দিন, নিজেও অংশ নিতে পারেন শিশুদের আলোচনায়।
৪. অল্প হলেও শিশুদের শারিরীক ব্যায়ামের মধ্যে রাখুন, ঘরের মধ্যেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, যোগ ব্যায়াম, এ্যরোবিক্স করাতে পারেন।
৫. বাড়ির বিভিন্ন কাজে শিশুদের সামিল করুন নিশ্চিতভাবেই এই সুযোগ আপনি আর পাবেন না, নিজেদের সেলফ- হেল্প শিক্ষার সাথে সাথে এতে শিশুদের বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হবে, আর বলা বাহুল্য বাড়িতে আপনারও অনেক উপকার হবে।
৬. নতুন কিছু শখ-এ অভ্যস্ত করানোর সময় হতে পারে আগামী কয়েক সপ্তাহ। ইন্টারনেট থেকে শিখবার সাথে সাথে খুব সাধারণ কিছু শিক্ষা যেমন- গাছ বা গাছের পাতা চেনা, জানালা দিয়ে পাখি দেখা এগুলো কিন্তু একঘেঁয়েমি কাটাতে পারে।
৭. খুব ছোট শিশুর সাথে আপনি গল্প পড়ায় অংশ নিতে পারেন, তাদেরকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক গল্পের চরিত্রের অভিনয় করাতে পারেন, অবশ্যই তা আনন্দের হবে।
ওএস-জেএন/এএইচএমএফ