করোনায় ‘লকডাউন’ কী?
পাহাড়ের আলো: নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী মহামারিতে রূপ নিয়েছে কোভিড-১৯। এই অবস্থায় ‘লকডাউন’ শব্দটি বেশ আলোচনায় এসেছে। দেশের অনেকের প্রশ্ন ‘লকডাউন’ কী?
ইতোমধ্যে দেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে একটি ভবন, ফরিদপুরের দুটি যৌনপল্লী, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় এবং মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা এবং (আজ ২২মার্চ) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন থেকেই লকডাউন ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনসহ ইউরোপের কিছু দেশ। এছাড়া লকডাউন করা হয়েছে লন্ডনসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় শহর।
কিন্তু এই ‘লকডাউন’ শব্দ দ্বারা আমরা কী বুঝি? ‘লকডাউন’-এর শাব্দিক অর্থ তালাবদ্ধ করে দেয়া। শব্দটির ব্যাখ্যায় ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গা থেকে বের হতে না দেয়া কিংবা ওই জায়গায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়াই হলো ‘লকডাউন।’ এছাড়া অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে কোনো নিদিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করাই ‘লকডাউন।’
তবে ‘লকডাউন’ শব্দটির সরল বাংলা ‘অবরুদ্ধ’ কিংবা ‘প্রিজনে রাখা’ বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুনতাসির হাসান। এই মতটিকেই সমর্থন করে ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, এই শব্দটি নতুন আসায় এর বাংলা প্রতিশব্দ এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে এর অর্থ ‘অবরুদ্ধতা’ হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, জরুরি প্রয়োজনে কোনো এলাকায় প্রবেশ ও প্রস্থানের নিষেধাজ্ঞাই অবরুদ্ধতা।
সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্স টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমরা এখন যুদ্ধে আছি, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। পাশাপাশি তিনি ৫টি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেন। এর মধ্যে রয়েছে- এমন কাজ যা বাসায় বসে করা যায় না এবং যা থামিয়ে রাখাও যাবে না, সুপার মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করা, বাসার সন্তান ও বৃদ্ধদের খোঁজে কিংবা পরিবারের জরুরি প্রয়োজনে, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু সময় ব্যায়াম এবং জরুরি ওষুধপত্র কেনা। এসব কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়াকেই ফ্রান্সে ‘লকডাউন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো ব্যতীত বাহিরে বের হলে জেলসহ জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে করোনার বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ওষুধ, কাঁচামাল ও মুদি দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণজমায়েত ও গণপরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটি আক্ষরিক অর্থে ‘লকডাউন’ নয়। তবে লকডাউনের মতোই আমরা সাবধানতা অবলম্বন করছি। এর মাধ্যমে উপজেলায় নিত্যপণ্যের ও ওষুধের দোকান ছাড়া সকল প্রকার দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে ঘুরাঘুরি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া অন্যসব দোকানপাট যেমন ইলেকট্রনিকস, তৈরি পোশাক, প্রসাধন, আসবাবের মতো দোকানের মালিকদের সীমিতভাবে দোকান খোলা রাখার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
-সম্পাদনা: মোবারক হোসেন।