কোরআন শরীফ অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামিয়ে দিলো লক্ষ্মীছড়ি জোন
স্টাফ রিপোর্টার: হতে পারতো নাসির নগর কিংবা রামুর মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। হতে পারতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পাহাড়ি-বাঙ্গালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও বেধে যেতে পারতো। কিন্তু সব আশংকাকে তড়িত গতীর হস্তক্ষেপে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে থামিয়ে দিলো লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনাবাহিনী। সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রে লক্ষ্মীছড়ি জোন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। ঘটনা ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে জুর্গাছড়ি এলাকায়। পবিত্র কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলা হয়েছে সত্য সংবাদটি প্রচারের সাথে সাথে নানা গুজব ছড়াতে থাকে। একই সাথে বাঙ্গালি মুসলমানরাও জড়ো হতে থাকে ঘটনাস্থলে। ধর্মীয় শ্লোগান দিয়ে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে বিভিন্ন এলাকায়। মুহুর্তের মধ্যে কয়েকশ মুসলমান একত্র হয়ে যায়। ভয়ে আতংক বিরাজ করে উপজাতীয় এলাকায়। এরি মধ্যে খবর পৌছে যায় সেনাবাহিনীর কাছে। মুূহুর্তের মধ্যে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজিত মুসলিম বাঙ্গালি জনতাকে নিবৃৃত করে। পুলিশও পৌছে যায় দ্রুত। স্থানীয় নেতৃবৃন্দরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। প্রকৃত ঘটনা কী তা জানতে চাওয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে পরিস্থতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী। ঘটনার
বিবরণে জানা যায়, ঈদের ছুটির ভিতরে কেবা কাহারা জুর্গাছড়ি মাদ্রাসায় প্রবেশ করে পবিত্র কোরআন শরীফের কয়েকটি পাতা ছিড়ে ফেলে এবং ৪-৫ টি রেহাল ভেঙ্গে ফেলে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করলেও তা আর গোপন থাকেনি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানা জানি হলে স্থানীয় বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে অবস্থা বেগতিক দেখে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ২-৩ দিন আগে স্থানীয় মুরুব্বীদেরকে বিষয়টি অবহিত করে। ঘটনাটি স্পর্ষকাতর হওয়ায় সমাধান প্রক্রিয়াটা ছিল একটু ধীরগতি। বিষয়টি সমাধানের লক্ষে বৈঠক বসলেও ঘটনার সাথে জড়িতরা উপস্থিত না হওয়ায় তা মিমাংসার দিকে যায় নি।
লক্ষ্মীছড়ি ভারপ্রাপ্ত জোন কমান্ডার মেজর জান্নাতুল ফেলদৌস সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একটি স্বার্থন্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং তারা গুজব রটায় যে পাহাড়ি গতকাল রাতে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে পবিত্র কোরআন শরীফ ছিঁড়ে ফেলে ও রেহাল ভাঙ্গে। এই গুজব শুনে মগাইছড়ি ও আশে পাশের এলাকা থেকে শতশত বাঙ্গালী মুসলমান মাদ্রাসার রাস্তায় সমবেত হতে থাকে। লক্ষ্মীছড়ি জোন বিষয়টি জানতে পেরে ক্যাপ্টেন রেজার নেতৃত্বে একটি টহল অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রনে আনে। এরপর নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যস্থতায় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। পরবর্তীতে লক্ষ্মীছড়ি জোন সদরের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রন জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে পরের দিন সকাল ১০টার দিকে উপরোল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ জোন সদরে উপস্থিত হলে বিষয়টি নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়। রিজিয়নের দিক নির্দেশনায় এবং জোনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আলোচনা ফলপ্রসু হয় এবং সবাই ঐক্য মতে পৌছায় যে বিষয়টির অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যার পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের জন্য একত্রিত হয়। বিচার-সালিশের মাধ্যমে ৪ জন পাহাড়ি ছোট ছোট ছেলেকে সনাক্ত করা হয় বিষয়টির সাথে জড়িত থাকার জন্য। পরবর্তীতে পাহাড়ি ছেলেরা তাদের ভুল হয়েছে মর্মে উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাদের অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে খুবই লজ্জিত বোধক করেন। এরই ফলশ্রুতিতে পাহাাড়িদের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না মর্মে অঙ্গীকার নামা প্রদানের মাধ্যমে বিচার-সালিশ শেষ হয়।
মেজর জান্নাতুল ফেরদৌস আরো বলেন, এখানে উল্লেখ্য যে, পাহাড়ি- বাঙ্গালি উভয় গ্রুপই ধৈর্য্য ও আন্তরিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তারা প্রমান করেছেন সদিচ্ছা থাকলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ন সহাবস্থান রক্ষা করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। নিরাপত্তাবাহিনী প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে অত্যন্ত সক্রিয় থেকে অতিদ্রুততার সাথে বড় একটা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন এবং লক্ষীছড়িকে বড় সংঘাতের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই স্থানীয় জনগন গুইমারা রিজিয়ন ও লক্ষ্মীছড়ি জোনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো: আজিবর রহমান গাজি বলেন, সাথে সাথে সেনাবাহিনী না গেলে গন্ডগোল বেঁধে যেতো। সবাই ধৈর্য্যের পরিচয় দিছে। তবে যারা উস্কানী দিয়েছে ঠিক করেনি। এটা পরিকল্পিত কোনো ইসলামকে অবমাননা করার মত ঘটনা নয়। শিশুরা না বুঝেই দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকে কোরআন শরীফের পাতা ছিড়েছে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। স্থানীয়ভাবে বসে ক্ষমা চাওয়ার মধ্য বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। আশা করি এমন ঘটনা আর পূণরাবৃত্তি ঘটবে না।