খাগড়াছড়িতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কোটি টাকা, চেঙ্গি খাল খননের দাবী
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাহাড়ী ঢলে, ব্যাবসায়ী ও মৎস্য চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। খাগড়াছড়ি চেঙ্গি নদী ভরাট হওয়ার কারণে এক ঘন্টা বৃষ্টি হলে খাগড়াছড়ি জেলা শহর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জানিয়েছে এ চেঙ্গি খাল খননের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন। খাগড়াছড়ি জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস থাকলেও সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের অফিসে পাওয়া যায়নি। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুম এলে খাগড়াছড়ির চারটি গ্রাম বন্যায় কবলিত হয়ে পড়ে।
সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সদরে অফিস থাকলেও খাগড়াছড়ির উপজেলার রামগড় থেকে সদরে আসে কম। কর্মকর্তারা থাকেনা খাগড়াছড়ির অফিসে। তাদের ইচ্ছা মতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম চলছে। প্রতি মাসে সরকারি বেতন পেয়ে থাকেন তারা। কিন্তু খাল ও নদ-নদী পরিদর্শনের খোঁজ খবর তারা রাখেন না। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি বাসী চেঙ্গি নদী খননের জন্য বর্তমান প্রধান মন্ত্রী নিকট এলাকাবাসী দাবী জানিয়েছে। বন্যার পরিস্থিতিতে মোকাবেলার জন্য খাগড়াছড়ির পৌর মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল আলম জেলা সদরে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হয়েছে। প্রথম বৃষ্টির বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনা খাবার বিতরণ করেছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা। এর পরের দিন অন্তত ৫ হাজার বন্যা দুর্গদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে আশ্রয় কেন্দ্রে বিতরণ করেছেন। তবে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ঢস এর আশংকা রয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি নেমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, পাহাড় ধসের আশংকায় কমেনি আতঙ্ক। এখনো নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি দুর্গত লোকজন। আবারও বর্ষণ শুরু হওয়ায় জেলার দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ঈদের ঠিক আগমুহুর্তে এমন পরিস্থিতি খাগড়াছড়ি বাসীর ঈদ আনন্দ করতে পারেনি।
টানা চারদিনের প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। প্রশাসনের সহযোগিতায় দুর্গতদের নেওয়া হয় আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে দুর্গত মানুষগুলোর চেহারায় এখনো হারানোর ছাপ। সোমবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ বিহীন ছিল খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা। বুধবার সকালের দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলেও দীঘিনালা, মেরুং ও মাটিরাঙ্গাসহ অনেক উপজেলাই বিদ্যুৎ সরবরাহের বাইরে রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানি খাগড়াছড়ি শহরের মুসলিমপাড়া, সবজি বাজার, মেহেদীবাগ, বাস টার্মিনাল, শান্তিনগর, গঞ্জপাড়া, মিলনপুর, মাস্টার পাড়া, শহীদ কাদের সড়ক, অর্পনা চৌধুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেমে গেলেও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। এখনো পানির নীচে তলিয়ে আছে দীঘিনালার মেরুংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ মেরুং বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাহাড় ধস ও সড়কে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক।
খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়ে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেছেন, প্রায় তিন হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ও স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারও পরিবার। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহনের কথা নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, দুর্গতদের জন পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।
খাগড়াছড়ি বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজ্বী লিয়াকত আলী চৌধুরী জানান, টানা বর্ষন ও চেঙ্গী নদীর পানিতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টানের প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বন্যা ও বৃষ্টির কারনে বাজারে ব্যাপক প্রভাব পরেছে বেচাকেনা নেই বল্লেই চলে। ফার্নিচার ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ শাহ জালাল জানান, পানিতে ভেসে গেছে অনেক কাঠ, নতুন নতুন তৈরিকৃত ফার্নিচার বন্যার পানিতে ভিজে গিয়ে প্রায় ৫০-৬০- লক্ষ টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে, বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও শত শত পুকুর ও মৎস খামার ও ক্রীকের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস চাষিদের মাথায় হাত। খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য অফিসার একে এম মুখলেছুর রহমান জানান, বিভিন্ন উপজেলার তথ্যমতে আনুমানিক ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলা মৎস্য অফিসার শরৎ কুমার ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ি, কমলছড়ি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারনে সদরের ১৮৮টি পুকুর-ক্রীক যার আয়তন ৪৪.৭৫৩ হেক্টর ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫৫ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণসহ সকল প্রকার সহযোগির আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। অপর দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরে পৌর এলাকায় যে বিশাল চেঙ্গি নদী রয়েছে তা ভরাট হয়ে গেছে। এই চেঙ্গি নদী খননের জন্য প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করছেন এলাকাবাসী।