খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাণের উৎসব বৈসাবি শুরু
আলমগীর হোসেন: খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈ-সা-বি উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন উপজাতীয় শরণার্থী ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। এর পর পরই পুরো শহরে উৎসবের রং- ছড়িয়ে পড়ে। নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে আগামীকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) পাহাড়ে জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে উৎসবে রং ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণিল পোষাকে তরুণ-তরুণী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের হাজারো বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণে একটি র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী গড়িয়া নৃত্যসহ মনোজ্ঞ মারমা সম্প্রদায়ের পাখা নৃত্য, পানি উৎসব ও সাওতাল নৃত্য মনোজ্ঞ ডিসপ্লে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হক, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরজ্জামান, জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোস চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে সম্প্রীতির বন্ধন আরও সু-দুঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যত্ত করে বলেন, আমরা একই ছাতার নিচে একই মায়ের সন্তান হিসেবে বসবাস করতে চাই।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূলত: খাগড়াছড়িতে শুরু হবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। ঐদিন সকালে চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীতে ফুল ভাসানো হবে। ১৩ এপ্রিল (শনিবার) চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিঝু আর পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা। একই দিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেই সাথে সব বয়সী মানুষ নদী খাল অথবা ঝর্ণায় গঙ্গা দেবীর পূজা আরাধনা করবেন। ১৪ এপ্রিল (রবিবার) পালিত হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব এবং বাংলা নববর্ষের র্যালি। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে পাহাড় এখন আনন্দের জেয়ারে ভাসছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিঝু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।