• July 27, 2024

খাগড়াছড়িতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের “বাকীর হাট”

 খাগড়াছড়িতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের “বাকীর হাট”

স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের “বাকীর হাট”এই কনসেপটি খুবই চমৎকার;জেলা প্রশাসক সহিদুজ্জামান “যা প্রয়োজন এখন বাকীতে নিন, পরে সামর্থ্য হলে অন্য কোন অভাবীকে ফেরত দিন” এই স্লোগানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “বাকীর হাট ” নামে সুপারশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মূলনীতি ছিল “বাকী ভেবে নিয়ে যান,পরে অভাবীকে দাম দিয়েন”। ২৬সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা শহরস্থ অফিসার্স ক্লাবে এ বাকীর হাট সুপারশপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো: জামাল উদ্দিন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাকীর হাটের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান। এ “বাকীর হাট” সুপারশপ থেকে নির্দিষ্ট টোকেন নিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষজন নিজেদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ৬০০টাকার ভিতরে বাকীতে বাজার করেছেন। এ সুপারশপে ২১টি পণ্যের সমাহার ছিলো।

এ সকল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান বলেন,বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আজকের এই “বাকীর হাট ” সুপারশপ অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। বিদ্যানন্দের এই সকল মানবিক কার্যক্রমগুলো দেখে আমি খুবই আনন্দিত। সর্বোপরি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এই কনসেপটি খুবই চমৎকার। দীঘিনালা থেকে আসা এন্টন চাকমা বলেন,মেয়েটার জন্য একটি স্কুল ব্যাগের দরকার ছিল। এই বাজারে এসে আমি তাকে সেটি উপহার দিতে পেরেছি।আজ আমার মেয়ে খুবই খুশি। তার সাথে আমিও অনেক খুশি। খাগড়াছড়ি সদর থেকে সুপারশপে বাজার করতে আসা রাজিয়া বেগম বলেন,আজকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুপারশপে এসে নিজের পছনন্দ মতো মুরগী,ডিম,নুডলস,আলু,চাউল পেয়ে আমি অনেক খুশি। পানছড়ি থেকে বাজার করতে আসা মিথুই চিং মারমা বলেন,বাকীর হাটে এসে বাজার করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। জীবনে ভাবিনি ভাবিনি বড়লোকের মতো করে স্বাধীনভাবে এভাবে শপিং করতে পারবো। অনেকদিন পর ছেলেমেয়েদর মুরগী মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াবো। আমি বিদ্যানন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

বিদ্যান্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুবারক হোসেন বলেন,খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় তিনশত কাছাকাছি অস্বচ্ছল পরিবার তাদের নিজেদের পছন্দ মতো বাজার করেছেন সম্পূর্ণ বাকীতে। তারা প্রত্যেকে ৬০০টাকার পন্য নিতে পেরেছেন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পণ্য বাছাই করে নিজে ক্রয় করার স্বাধীনতা তৈরি করতে এ ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। আর তারা যেন কোনোভাবেই নিজেদের ভিক্ষুক মনে না করেন,এজন্য বাকীতে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। পরে তারা সামর্থ্য হলে,আরেকজন অভাবীকে দান করতে পারবে। না পারলেও সমস্যা নেই। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো: জামাল উদ্দিন বলেন,ভোজ্যতেল, চাল-ডাল, লবণ, ডিম, মাছ, সবজি ও নুডলসসহ ২১ টি পণ্যের সমাহার ছিল সুপারশপে। নির্দিষ্ট টোকেন নিয়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষজন নিজেদের চাহিদা মতো বাজার করেছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের তদারকিতে বাকীর হাটে চলেছে অসচ্ছল নারী ও পুরুষের কেনাকাটা। মুলত দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বাজারের আয়োজন করা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারনে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে আছে। তাঁর উপর সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি জেলা অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সারাদেশে সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য একটি অভিনব বাজার পরিচালনা করে থাকে। প্রথাগত ত্রানের বিপরীতে ত্রানপণ্য দিয়ে বাজার বসানো হয় যেখান থেকে মানুষ তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী পন্য বাছাই করে নিতে পারেন। ফলে যার যে পন্য দরকার তিনি সে পন্য বাছাই করতে পারেন। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরও যে বাছাই করে নেয়ার অধিকার আছে সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক পাহাড়ি বন্যায় খাগড়াছড়ির জনসাধারনের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় এদিন ” সেই বাজারে দুস্থ মানুষজন প্রায় ৬০০ টাকার পণ্য সম্পূর্ণ বাকীতে বাছাই করে নিতে পারে। এ সময় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাশেদুল হক,বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়ব ব্রাঞ্চ’র ভলান্টিয়ার মনিস্বপন দেওয়ান(জুনো),বিভিন্ন ব্রাঞ্চের স্বেচ্ছাসেবকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাকির হাটে পন্যের মূল্য: এ সকল পণ্যে যেমন..চাউল প্রতি কেজি ৫০টাকা,পেন্সিল ১ডজন ১২০টাকা,কলম প্রতি ডজন ৬০টাকা,ডিম প্রতি ডজন ১০০টাকা,খাতা প্রতি পিস ৫০টাকা,মুরগী প্রতি পিস ২৫০টাকা,চিনি প্রতি কেজি ১৪৫টাকা,এংকর ডাল প্রতি কেজি ৭০টাকা,পিয়াজ প্রতি কেজি ৭০টাকা,রুই মাছ(বড়) প্রতি পিস ২৫০টাকা,আলু প্রতি কেজি ৪৫টাকা,মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ৫০টাকা,লাউ প্রতি টিস ৫০টাকা,জুতা প্রতি জোড়া ১২০টাকা,ছাতা প্রতি পিস ২৫০টাকা,টি-শার্ট প্রতি পিস ৮০টাকা,লবণ প্রতি কেজি ৪২টাকা,দেশী মসুর ডাল ১২০টাকা,অরেঞ্জ বিস্কুট প্রতি প্যাকেট ৫০টাকা,নুডলস প্রতি প্যাকেট (বড়) ১২৫টাকা,সুজি প্রতি প্যাকেট ৪৫টাকা,আটা প্রতি দুই কেজি ১২০টাকা,সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৪টাকা দরে।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post