খাগড়াছড়ির ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ১ম শ্রেণিতে পাবে মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ
রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার রেগা লাইব্রেরী হলরুমে সম্প্রতি স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতির সেতু-এমএলই প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত ৫দিনব্যাপী ১ম শ্রেণির চাকমা, মারমা ও ককবরক ভাষায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রশিক্ষণ থেকে ফিরে প্রত্যেকে যেন নিজ নিজ বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে প্রয়োগ করেন। বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় পাঠদান ও রুটিন প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনে করেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৭ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কালে পর্যায়ক্রমে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক স্কুলে দেয়া হয়েছে। সকল শিশু যেন তাদের জন্য বরাদ্দ করা বই পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পাঠ্যপুস্তকগুলো হাতে পেলেও সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষকেরা মাতৃভাষায় পাঠদান করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে জাবারাং শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কারিগরী সহায়তা দিয়ে সরকারের উদ্যোগ সফল করার জন্য অবদান রেখে চলেছে। তবে মাতৃভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার উপর যেন সমান মনোযোগ থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে পরামর্শ দেন এবং বক্তব্য শেষে আয়োজিত মাতৃভাষায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের শুভ কামনা জানিয়ে ৫দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
জাবারাং সংস্থার কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা।
সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা বলেন, জাবারাং দীর্ঘদিন ধরে চাকমা, মারমা ও ককবরক ভাষাভাষি শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় বই ও সহায়ক শিক্ষা উপকরণসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণের মতো কারিগরী কাজে অবদান রেখে আসছে। দেড় দশক ধরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি চলমান রাখতে এ সংস্থা বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সেতু-এমএলই প্রকল্পের প্রস্তাবনা প্রস্তুতির প্রাক্কালে জাবারাং শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও শিক্ষক প্রতিনিধির মতামতসহ, এ প্রকল্পের সাথে শিক্ষা বিভাগের আত্মিক সম্পর্ক নিহিত আছে বলে মত ব্যক্ত করেন।
পানছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা তাঁর বক্তব্যে একটা জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসী জ্ঞান কতটুকু গুরুত্ব তা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন। ছড়ায় কাঁকড়া থাকা না থাকা নিয়ে ছড়ায় শুষ্ক মৌসুমেও পানি কতটুকু থাকবে,থাকবে না তা যে কোন স্থানীয় জনগোষ্ঠী তার আদিবাসী জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বলতে পারে। চিকিৎসাবিদ্যার একাডেমিক জ্ঞান না থাকলেও স্থানীয় লতাপাতার গুণাগুণ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বহুকাল ধরে ভেষজ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। তিনি আদিবাসী জ্ঞানসমূহকে টিকিয়ে রাখতে এবং স্থানীয় ভাষাসমূহকে লিখিত রূপ দিয়ে সংরক্ষণ ও বিকাশ করতে মাতৃভাষায় শিক্ষার বিকল্প নেই বলে মত ব্যক্ত করেন।
২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি ভাষায় বই সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বই সরবরাহ হলেও পাঠদান সম্ভব হয়নি ২০১৯ সালে জাবারাং এর এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত। মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, প্রকৃত সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যত করণীয় চিহ্নিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজনে সরকারকে সহযোগিতা করতে চান বলে ইচ্ছা পোষণ করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।