গুইমারাতে বিজয়া দশমীতে সাঙ্গ হল মহামিলন মেলা
স্টাফ রিপোর্টার: শরতের কাশফুলের ভেলায় চড়ে সনাতন ধর্ম মতে জাগতিক সকল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে দেবী দূর্গার আগমন ৫দিন ব্যাপী দেবীর আরাধনা ভক্তদের অঞ্জলী ও চন্ডিপাঠ শেষে বিজয়া দশমীতে জগতের সকল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে ফিরে কৈলাশে। দেবী দূর্গার পূজার ৫টি শারদীয় দূর্গোৎসব এখন আর কোন নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মাঝে নাই এটি এক সার্বজনীন উৎসবে রুপ নিয়ে।
৫দিনের মহামিলন ও সাবর্জনীন উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটল ১৯ডিসেম্বর বিজয়ী দশমীতে। দুর্গাপুজার শেষ দিন শুক্রবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি’র গুইমারা উপজেলার পূজামন্ডপ গুলোতে শেষবারের মত দেবীর পায়ে অঞ্জলী, চন্ডিপাঠ ও দেবীর দর্শণের জন্য উপচেপড়া ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। বেলা তিনটায় একযোগে গুইমারা উপজেলার তিনটি পুজা মন্ডপ থেকে দেবী দূর্গা সহ, গণেশ, কার্তিক, লক্ষী ও স্বরসতী দেবীর প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্যদের সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হাজার হাজার মানুষ প্রতিমাগুলো নিয়ে পায়ে হেপে গুইমারা উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে গুইমারা মডেল হাই স্কুলমাঠে জড়ো হয়। সেখানে ঘন্টাব্যাপী আরতি, প্রমাণ ও রং মাখামাখি শেষে ৭পাক ঘুরি স্কুলের পুকুরে দার্জিলিংটিলা ও ডাক্তারটিলা পুজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা দেবীর দুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ করে সার্বজনীন মহা মিলনের আনুষ্ঠানিকতা।
৫দিনের পুজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারায় বিজয়া দশমীকে গুইমারা কেন্দ্রীয় কালি মন্দির শারদীয় দূর্গোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি নন্দন বনিক ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দে গুইমারা উপজেলা প্রশাসন,্ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সহ গুইমারা উপজেলাবাসীকে শুভেচ্ছা ও সহযোগীতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। একইসাথে ডাক্তারটিলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুমন কর, সাধারণ সম্পাদক রুপস ভট্টাচার্য্য, চন্ডি মন্দির পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সেন্টু দে ও সেক্রেটারী ভগিরথ চন্দ্র দে বাবুল বিজয়া দশমীকে গুইমারাবাসীকে শুভেচ্ছা ও পুজায় সার্বিক সহযোগীতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
গুইমারা উপজেলা প্রশাসন ও গুইমারা থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪টি পুজা মন্ডপে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ষ্ঠী থেকে দশমীতে বিসর্জন পর্যন্ত ৩স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা ২৪ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুজা মন্ডপে অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৫দিন ব্যাপী পুজায় ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পুর্নবাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কিত ট্রাস্কফোর্স চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ি’র সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ২৪আর্টিলারী ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম সাজেদুল ইসলাম, ১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব, র্নিবাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা, হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী ছাড়াও প্রতিবারের মত গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং গুইমারা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ ইউছুপের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ উপজেলা প্রতিটি পুজা মন্ডপ পরিদর্শন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দুর্গাপুজা হিন্দু সসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও একটি এখন আর একক ধমীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবন্ধ নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই কথাকে ধারণ করে শারদীয় দুর্গোৎসব এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল উদহারণ হিসেবে মহামিলন মেলায় রুপ নিয়েছে।