• November 7, 2024

গুইমারা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, তদন্ত দাবি

স্টাফ রিপোর্টার:  গুইমারা উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে এখন আতংকের নাম এএসআই মতিউর। প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজীসহ মাদক সেবনের মত জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত হবার অভিযোগ উঠেছে এই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। মানুষের জানমালের হেফাজত করার শপথ নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে কনষ্টবল হিসেবে যোগ দিয়ে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে এএসই হিসেবে গুইমারা থানায় যোগদান করার পর তার কার্যকলাপে অতিষ্ট মানুষ। আইনের অপ-ব্যবহার ও যখন তখন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অবৈধ ভাবে অর্থ আদায় করা তার নিত্য দিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে এখন। তার এসব অপকর্মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে মিডিয়া কর্মীদেরও হুংকার ছুড়তে দিধাবোধ করেননি ক্ষমতাধর পুলিশ এই কর্মকর্তা। দাবী উঠেছে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
সম্প্রতি প্রকাশ্য দিবালকে গুইমারা বাজারের মসজিদ সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাবু নামের নিরহ এক মুরগি দোকানদারকে স্কেলের (মাপ যন্ত্র) নিচে ৪পিচ ইয়াবা রেখে কয়েক মিনিট পর তাকে প্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রায় সর্বমহলেই সমালোচনার মুখে পড়ে গুইমারা থানা পুলিশ। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে গুইমারা থানার মিলনায়তনে ওপেন হাউজ ডে’তে রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো: ফরহাদের উপস্থিতিতে বক্তারা বিষয়টি নিয়ে বক্তোব্যের মধ্যে পুলিশ প্রশাসনকে এক হাত ধুলেন। অধিকাংশের বক্তোব্যে সেদিন পুলিশ প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হবার আহবান জানানো হয়। কিন্তু এতসবের পরও থামছেনা গুইমারা থানার এএসআই মতিউরের অপকর্ম।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে গুইমারা উপজেলার হাজাপাড়া এলাকার জনৈক ব্যক্তি জানান, প্রায় প্রতি রাতেই এএসআই মতিউর ঐ এলাকায় মাদক সেবন করতে যায়। সেখানে উপজাতীয় একটি বাড়িতে প্রায় ঘন্টা খানেক থেকে দেশীয় মদ পান করে মটর সাইকেল যোগ পুনরায় চলে আসে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা গুইমারা উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। এখন প্রশ্ন উঠেছে যাদের সহযোগীতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন হবে, দেশের যুব সমাজ মাদকের ছোবল থেকে ফিরে আসবে, সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যদি এসব সেবনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে তাহলে সাধারন মানুষ কার সহযোগীতা চাইবে?
গত দুই মাসে এএসআই মতিউরের অপকর্মের অভিযোগের পাল্লা দিন দিন ভারি হচ্ছে। গত সপ্তাহে উপজেলার আমতলী পাড়া থেকে ৪ জুয়াড়ীকে আটকের পর ঘটনাস্থল থেকে ২ বাঙ্গালীকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে অপর দুই পাহাড়ীকে থানায় নিয়ে আসে এএসআই মতিউর। পরবর্তীতে স্থানীয় ভাবে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়।
গত মার্চ মাসে গুইমারা বাজারে জাহাঙ্গীর ফার্ণিচার থেকে সেগুন কাঠের অধিক মজুদ অভিযোগ তুলে দোকানের কর্মচারীকে থানায় নিয়ে আটকে রেখে বিশ হাজার টাকা আদায় করে এই গুনধর পুলিশ। এর সপ্তাহ খানেক পর গুইমারা উপজেলার গাছ ব্যবসায়ী মোঃ সহিদের বৈধ জোত পারমিটের গাছের গাড়ি আটক করে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়িটি ছেড়ে দেয় এএসআই মতিউর। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে সংবাদ কর্মীরা গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনিও বিষয়টি অস্বীকার করেন।  স্থানীয় ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের অভিযোগ প্রতি মাসে চালক সমিতির মাধ্যম্যে পুলিশ প্রশাসনকের একটা এমাউন্ড দেয়া হয়, তারপরও এএসআই মতিউর দুই/একদিন পরপরই তাদের মোটর সাইকেল আটক করে থানায় নিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে ছেড়ে দেয়।
চলতি মাসের ২ তারিখে ভুয়া অভিযোগে রাতের বেলায় মদ্যপাবস্থায় গুইমারা বাজারের এক ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে যায় এএসআই মতিউর। পরে সারা রাত থানায় রেখে সকালে তাকে ছেড়ে দেয়। বাজার ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ মতিউরের মুখ থেকে তখনও মদের গন্ধ বের হচ্ছিলো। এছাড়াও গত মার্চ মাসে বড়পিলাক এলাকায় স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সাবেক মেম্বার সাইফুল ইসলামের ছেলেকে মাদকসহ আটককের ১দিন তথ্যদাতাদের নাম প্রকাশ করে এলাকায় একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এএসআই মতিউর।
গত মার্চ মাসের ২য় সপ্তাহে উপজেলার বুদুংপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ আবুল খায়ের মিয়া’কে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৩শ বোতল ব্যাটারীর পানিসহ বিনা কারনে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এএসআই মতিউর। পরবর্তীতে বিশ হাজার টাকা আদায় করে তাকে মালসহ ছেড়ে দেয়া হয়।  এসব অপকর্মের অভিযোগে সংবাদকর্মীরা এএসআই মতিউরের কাছে জানতে চাইলে তিনি অপর এক অফিসারের (এসআই) সামনে সাংবাদিকদের হুংকার দিয়ে বলেন, “এখন সাংবাদিক গনার টাইম আছে?? এখন কিন্তু আগের ওসি নাই”। তার এমন মন্তব্যে হতাশ গনমাধ্যম কর্মীরা।
এ বিষয়ে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি সম্প্রতি গুইমারা থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টা আমি জানতাম না, আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোঃ আলী আহাম্মদ খান জানান, এএসআই মতিউরের বিরুদ্ধে আমার কাছে ইতিপূর্বে কেউ কোন অভিযোগ করেনি, সাংবাদিকদের সাথে সে বাজে আচরণ করেছে আপনারা জানিয়েছেন, বিষয়টি থানার ওসির সাথে আলাপ করে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাধারণ মানুষের জান-মাল রক্ষার দায়িত্ব যাদের কাছে, তারাই এখন ভক্ষকে পরিনত হয়েছে। এএসআই মতিউর এখন গুইমারা উপজেলার মানুষের কাছে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ হাজারো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আর তাইতো গুইমারাতে এখন “আতঙ্কের নাম এএসআই মতিউর”। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ প্রশাসনের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার দাবী এলাকাবাসীর।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post