না ফেরার দেশে সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ: সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
পাহাড়ের আলো ডেক্স: ‘সোনালী কাবিন’-এর কবি আল মাহমুদ আর নেই। শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর ইবনে সীনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়াা ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কবি আল মাহমুদের মৃত্যু হয়েছে বলে তার সহকারী আবিদ আজম নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রাত সোয়া ১১টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ধানমন্ডির শংকরে ইবনে সিনা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিউরোলজিস্ট ডা. আবদুল হাইয়ের অধীন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে কবি আল মাহমুদের মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে একাডেমির নজরুল মঞ্চে তার মরদেহ রাখা হয়। সেখানে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন কবি, সাহিত্যিকসহ সর্বস্তরের মানুষ। বাংলা একাডেমিতে কবির মরদেহ আনার পর সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এসময় কবি নুরুল হুদা, কবি আব্দুল হাই শিকদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে টেনিস গ্রাউন্ডে তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘কবি আল মাহমুদ ছিলেন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দেশের সর্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, সেখানে তাঁর গুরুতপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি এই সমাজকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সমাজে কবি আল মাহমুদকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। আল্লাহ তাকে সর্বোত্তম স্থান দান করুনন, সবাই সেই দোয়া করি।’ কবি আল মাহমুদের ছেলে মীর মোহাম্মদ মুনির বলেন, ‘উনার ইচ্ছা ছিল শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহ উনার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। এসময় জানাযা নামাজে উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে তিনি বরেন, কবি অজান্তে কোনও ভুল করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘উনার মতো কবি সাধারণত সবসময় সব জায়গায় জন্ম নেননি। প্রতিটি ধারাতেই ওনার উপস্থিতি আমরা দেখেছি। এতে আমরা অভিভূত হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। সেই অনুপ্রেরণাটুকু উনি রেখে গেছেন আগামী প্রজন্মের জন্য।’ জানাযার নামাজে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, শহিদুল ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ যোহর কবির দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে। জানাজা শেষে কবির মরদেহ মগবাজারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামীকাল (রবিবার) বাদ জোহর তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইলের মোল্লাবাড়িতে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হবে। কবি আল মাহমুদের সহকারী আবিদ আজম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুসারে কবি আল মাহমুদকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌরাইল মোল্লবাড়িতে পৌত্রিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এদিকে, আল মাহমুদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অনুমতি চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কাছে আবেদন করেছেন কবি পরিবারের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, তারা অনুমতির জন্য এসেছেন। উপাচার্য এখনও সিদ্ধান্ত জানাননি।