নির্বাচন ফটিকছড়ি: আওয়ামীলীগ-বিএনপি গৃহ বিবাধে সুুবিধাজনক অবস্থানে ইসলামী ফ্রন্ট
এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রার্থী নিয়ে বড় দুই জোটের মধ্যে যখন গৃহ বিবাদ তুঙ্গে, তখন অনেকটা সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন সম্মিলিত ঐক্য জোট তথা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। তিনি ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য। সম্মিলিত ঐক্য জোটের অংশিদার এবং মহাজোটের অংশ ইসলামীক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে অংশ নিয়ে মহাজোট নেত্রীর ইতিবাচক সাড়া পেয়ে নির্বাচনে নেমেছেন বলে জানান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। ফটিকছড়ি ছাড়াও ঢাকা-১৪ আসন থেকেও মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। মোমবাতি প্রতীক ছাড়াও মহাজোটের প্রতীক নৌকা পেতেও নেত্রীর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে উপজেলার সমমনা ইসলামী দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন তিনি। সম্মতি নিয়েছেন তাঁর নিজ গ্রামের দশ মহল্লাবাসির কাছ থেকে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সহ-সাধারন সম্পাদক মো. মঈনুল আলম চৌধুরী বলেন, রাজনৈতি অঙ্গনে নতুন হলেও তাঁর রয়েছে উপজেলা জুড়ে ক্লিন ইমেজ। সুন্নি আকিদা ও সুফিবাদের মতাদর্শি জনগোষ্টি ছাড়াও মাইজভান্ডারী তরিকার বড় ধরনের সমর্থক রয়েছে উপজেলা জুড়ে। ফটিকছড়িতে সুন্নি আকিদা ও মাইজভান্ডারী তরিকা পন্থিদের ভোট রয়েছে প্রায় এক লাখের মত। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে অনেকাংশে। শুধু সুন্নি আকিদা বা সুফিবাদী নয় আওয়ামীলীগ বিএনপি’র মধ্যেও রয়েছে তাঁর ব্যাপক গ্রহন যোগ্যতা। কেননা এ বড় দু দলের অনেকেই আছেন মাইজভান্ডারী তরিকার ভক্ত। এ ছাড়া উপজেলার বাইরে দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার কারণে তাঁর রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি।
সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দু এক দিনের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে সমমনা ইসলামী দল গুলো নিয়ে বৃহত্তর ইসলামী জোটের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। যা নির্বাচনী মাঠে তাঁর পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ছোট খাট মতানৈক্য মিটাতে পারলে হয়তো বা হেফাজতও তাদের সাথে এক হতে পারে বলে ধারনা করছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দ মাঈনুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। নির্বাচিত হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতিরোধ এবং মদিনার সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশে^র দরবারে প্রতিষ্ঠিত করাই তাঁর মুল লক্ষ্য। এ আসনে মহাজোটের অপর হেভিওয়েট প্রার্থী স্ব গোত্রিয় সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হলেও ইমেজের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী।
আওয়ামীলীগ+তরিকত নজিবুল বশর:
দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মহাজোট প্রার্থী তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর। তাঁকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে মহাজোটের দুই শরীকদল আওয়ামীলীগ ও তরিকত ফেডারেশনের দ্বন্ধ সম্প্রতি আরো প্রকট হয়েছে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত করায় ক্ষুদ্ধ উপজেলার সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন তরিকত চেয়ারম্যান নজিবুল বশর ভান্ডারী। নির্বাচনের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের গত ৫ বছরে নজিবুল বশর ভান্ডারীর নানা বিতর্কিত ভুমিকায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় আওয়ামীলীগ। প্রকটাকার ধারন করে দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল। দলের কোন্দল বৃদ্ধির পেছনে এমপি নজিবুল বশরের নেপথ্যে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিগত ৫ বছরে কাংখিত উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত ফটিকছড়ি। অভিযোগ রয়েছে টেন্ডারবাজি, জামায়াত ঠিকাদারদের পৃষ্টপোষকতা, বাস্তবায়ত প্রকল্পে অনিয়ম-দূর্নীতির। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে নজিবুল বশরের সাথে দুরত্ব বাড়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের। তার শোডাউন পোগ্রামে বাঁধা দেয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। ইতিপূর্বে নজিবুল বশরকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন না দিতে দলের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারনী মহলে চিঠি দিয়েছে বলে জানান উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মজিবুল হক চৌধুরী। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নাজিমুদ্দিন মুহুরী বলেন, নেত্রী তৃনমুলের দাবীকে উপক্ষো করলে উপজেলা আওয়ামীলীগ পরবর্তী করনীয় নির্ধারন করবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে । ফলে মহাজোট নয় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সংগঠিত হচ্ছে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে ফটিকছড়িতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে মহাজোটের দুই শরীক দল আওয়ামীলীগ ও তরিকত ফেডারেশনের দ্বন্ধ আরো প্রকট হয় গত শনিবার। নজিবুল বশরকে প্রার্থী করায় বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা আওয়ামীলী ও অঙ্গ সংগঠন।
বিএনপি:
এদিকে আওয়ামীলীগের মত প্রার্থী নিয়ে বিবাদ রয়েছে অপর বড় জোট ঐক্যফ্রন্টেও। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি থেকে ইতোমধ্যে ৫ জন প্রাথর্িী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কাকে চুড়ান্ত প্রার্থী ঘোষনা করা হয় তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। চুড়ান্ত যাকেই করা হউক সে প্রার্থীর পক্ষে শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকবে কিনা নেতাকর্মীরা তা নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। মাঠে নেতা কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে ৫ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এ আসনে নানা কারণে ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল জামায়াতের সাথে দুরত্ব রয়েছে বিএনপি’র। সবচেয়ে বড় বিষয় গত ১০ বছরের অব্যাহত মামলার কারণে এখনো নিজেদের ঘর গোছাতে পারেনি বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। যুবদল কর্মী সরোয়ার মফিজ জানান- মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রার্থীরা এলাকায় এসে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধকরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ইতিহাস নষ্ট করেছে ওরা। তারা গ্রামে তো আসেনি, বরং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে যার যার মতো বসে আছে।