পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
পাহাড়ের আলো: বহুল প্রত্যাশিত রাঙামাটির নানিয়ারচরে চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারি বুধবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময় তিনি কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত সংযোগ সড়কের উদ্বোধন করেন। এসময় ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাপ্রধান এসএম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানিয়ারচরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণের ফলে শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগিয়ে গোলো। এতে করে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করেছিলাম। এখনো শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।’ বান্দরবানের সীমান্ত সড়ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুনঘুম পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই সড়কটি নির্মাণের ফলে স্থানীয়দের যাতায়াত ব্যবস্থা এবং সীমান্ত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পার্বত্য এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী কাজ করছে।’ ভিডিও কনফারেন্সে নানিয়ারচর প্রান্ত থেকে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্য ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা, জেলা সওজের নিরবাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফিন, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান তিন্নী ছাড়াও সুধীজনেরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড অধীস্থ ২০ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) রাঙামাটির নানিয়ারচরে ‘চেঙ্গী সেতু’টি নিমার্ণ করেন। চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫শ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২ মিটার। এপ্রোচ সড়কসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় খরচ ২২৭ কোটি টাকা।
এছাড়া কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সীমান্ত সংযোগ সড়কের নিরমকণ ব্যয় প্রায় ৭৯ (৭৮. ৮৫) কোটি টাকা। সূত্র জানায়, সরাসরি রাঙামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন (ইসিবি)।
উল্লেখ্য সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে প্রায় ১শ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এবং দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১শ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।