• July 27, 2024

পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার ১৮তম কাউন্সিল সম্পন্ন

 পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার ১৮তম কাউন্সিল সম্পন্ন

পাহাড়ের আলো: “ব্যক্তির সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ছুঁড়ে ফেলে অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রামের আদর্শিক ও উৎকর্ষ চিন্তা চেতনায় বলিয়ান হয়ে সংগঠনে নিজেকে উপযুক্ত কর্মী হিসেবে গড়ে তুলুন” এই স্লোগানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ঢাকা মহানগর শাখার ১৮তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে নরেশ ত্রিপুরাকে সভাপতি ঝিমিত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও অভি চাকমা সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।১১ নভেম্বর শনিবার বেলা ৩ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমা’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ণব চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যেতি চাকমা, পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক তীর্থ ত্রিপুরা।

পিসিপি’র সাবেক সভাপতি সুনয়ন চাকমা সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য কাউন্সিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যাঁরা ভীতু তাঁরা পিসিপি করতে পারে না। পিসিপি করতে হলে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, যারা এম এন লারমার নাম বার বার বলে, ১০ নভেম্বরে শোকের অশ্রু ভাসিয়ে দেয়, একটু লক্ষ্য করে দেখবেন, তারাই মহান নেতার আদর্শ বিক্রি করে খাচ্ছে। বিপরীত আদর্শ ধারণ করে জনগণকে বিভক্ত করেছে। যে সংঘাতে মহান নেতাকে আমরা হারিয়েছি সেই সংঘাত জেএসএস জিইয়ে রেখেছে। এতে বুঝতে পারি স্বয়ং সন্তু লারমা নিজেই ভাইয়ের আদর্শকে ধারণ করতে পারেননি। তাই শুধু মুখে এম এন লারমার নামে ফেনা না তুলে তা বাস্তবে রুপ দিতে হবে।

তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী চায় আমরা গৃহপালিত পশুর মত থাকি। আমরা যাতে প্রতিবাদ না করে চুপ করে থাকি। কারণ আমাদের প্রতিবাদ শাসকরা ভয় পায়। এক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠি কিছুটা সফল হলেও আমাদের আন্দোলন দমাতে পারেনি। আমাদের দাসত্বের শিকল ভেঙে জাতীয় মুক্তির লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে। শাসকগোষ্ঠীকে দেখাতে হবে আমাদের উপর আঘাত আসলে আমরাও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে পারি। তিনি যাঁরা নতুন কমিটির নেতৃত্ব নেবেন তাঁরা নিজের ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জারি রাখবেন বলে প্রত্যাশা রাখেন।

পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্য বলেন, পাহাড়ের পরিস্থিতি নাজুক। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি স্পষ্ট, পিসিপি’র নেতৃত্বে ভবিষ্যতে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসবে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি সম্পর্কেও তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত, শোষিত সমাজ ভেঙ্গে নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য পিসিপির নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে।

অমল ত্রিপুরা আরো বলেন, ছাত্র সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে সুবিধাবাদী অংশটি নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সন্তু লারমা নিজেই ছাত্র সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন, যেমনি ৮০’র দশকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি বিভেদপন্থীদের সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থেকে পিসিপি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হারাবার মতো আর কিছু নেই। তাই লড়াই সংগ্রামে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে জয় নিশ্চিত হবে।

শুভাশীষ চাকমা বলেন, সেনা নির্যাতনে ছাত্র নেতা রমেল চাকমাকে হত্যা, ঠ্যাঙারে বাহিনীর দ্বারা দিনদুপুরে তপন-এল্টনদের হত্যা, কাথাং ত্রিপুরাসহ অনেক যোদ্ধা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সহযোদ্ধাদের হারানোর শোক আমাদের শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে উঠেছি।

তিনি আরো বলেন, অন্যায় দেখেও যারা নিরব হয়ে থাকে তারা অন্যায়কারীর পক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ তিনি যদি প্রতিবাদ করতেন অন্যায়কারী এসব সুযোগ পেত না। তাই আমাদের ভয়কে দূর করে প্রতিবাদী রূপ ধারণ করতে হবে। পাহাড়কে শাসকের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।

প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, দেশের শ্রমিকের নায্য মজুরি নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। শ্রমিকদের মজুরির দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো আন্দোলন দমন করতে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তাই নিপীড়িত জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ছাত্র-যুবক- শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে।

সভাপতি রনেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী ধর্ষণ, ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ছাত্র সমাজকে শাসকের নীলনক্সার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পাহাড়কে বুঝতে হলে ছাত্র সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। তবেই পাহাড়িদের মুক্তির লড়াইয়ের আন্দোলন বেগবান হবে।

পরে পুরাতন কমিটিকে বিলুপ্ত করে নরেশ ত্রিপুরাকে সভাপতি, ঝিমিত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও অভি চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য নতুন কমিটি ঘোষণা ও শপথ বাক্যপাঠ করান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post