প্রতিবন্ধীদের পাশে গুইমারা রিজিয়ন: ফাতেমাদের পথ চলাতেই যেন আনন্দ
স্টাফ রিপোর্টার: ফাতেমা আক্তার ১০বছরের কিশোরী উঠান জুড়ে দুরন্ত ছুটাছুটি আর খুনসুটিতে ব্যক্ত থাকার সময়ে শান্ত আর অপলক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে মায়ের কোলে। আর দশটা শিশু কিশোরের মত স্বাভাবিক পথচলা ও নিজ পায়ে দাড়ানোর মত সক্ষমতা তার নেই। ভাগ্যের নিমর্মতায় শুরু পঙ্গু নয় মানসিক ভারসাম্যহীতা তার জীবনের বাড়তি অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। খাগড়াছড়ি’র গুইমারা উপজেলাধীন সিন্দুকছড়ি এলাকার গাড়ী চালক সিদ্দীকুর রহমানের মেয়ে ফাতেমার মত আরো অনেকে পঙ্গুত্ব নিয়ে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সমতল এলাকা থেকে শিক্ষা চিকিৎসা সহ বিভিন্ন দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও নাজুক।পরিবারে একজন প্রতিবন্ধী সদস্য অন্যদের জন্যও বাড়তি সমস্যার কারণ। তাই এসব প্রতিবন্ধীরা সর্বত্র অবহেলার শিকার।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে বেচে আছে। খাগড়াছড়ি গুইমারা উপজেলার এসব প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি সম্প্রতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪আর্টিলারী ব্রিগেড গুইমারা ও ১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন।
গত রবিবার দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনীর ২৪আর্টিলারি ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন সদর দপ্তরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার ও শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়। গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিবন্ধীদের মাঝে চলার শক্তি হিসেবে হুইল চেয়ার বিতরন করেন। হুইল চেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধীদের আনন্দিত দেখা গেছে।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম সাজেদুল ইসলাম বলেন, আজকে হুইল চেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধীদের মুখে যে হাসি, এটি হাসি বিজয়ের হাসি ও আনন্দের হাসি। দেশের সকল বিত্তবানরা যদি প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষের কল্যাণে এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসে তাঁদের দু:খ-কষ্ট ভাগ করে নিতেন, তাহলে বিজয়ের আনন্দটা আরও বেশি আনন্দের হতো। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি সম্প্রীতি এবং উন্নয়নের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলের সকল ধর্মের মানুষের পাশে থেকে তাঁদের নানাভাবে সাহায্য এবং বিভিন্নভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এসময় গুইমারা রিজিয়নের জিএসও টু মেজর মঈন, ব্রিগেড মেজর(বিএম) মেজর ফাহিম মোনায়েম, ডিকিউ মেজর নাফিজাত হোসাইন, জিএসও-৩ মেজর পারভেজ,বিভিন্ন গনমাধ্যমের সাংবাদিক ও সামরিক পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আগে গত ১২নভেম্বর সোমবার সকালে জালিয়াপাড়াতে প্রতিবন্ধী কল্যান সমিতির কার্যালয়ে ১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোনের উদ্যোগে গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড় উপজেলার ১২০প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র(কম্বল) ও হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম।
উপস্থিত প্রতিবন্ধী শীতার্ত মানুষ ও সুধীজনের উদ্দেশ্যে রিজিয়ন কমান্ডার এ.কে.এম সাজেদুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের পাশে দূর্যোগে ও বিপদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতে যেমন ভাবে ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে। অত্র রিজিয়নের কোন মানুষ শীতের কারণে কষ্ট পেতে দিবে না বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। কোন অপশক্তি এ অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। এসময় তিনি আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিত যাতে অবনতি না ঘটে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানান।
এসময় ১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ¤্রাগ্য মারমা, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া, গুইমারা রিজিয়নের জিএসও টু মেজর মইন, সিন্দুকছড়ি জোনে কর্মরত ক্যাপ্টেন ফয়সাল, ক্যাপ্টেন সামিউল, হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী, পাতাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা, ইউপি সদস্য আরমান হোসেন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।