বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে বসত বাড়ি প্লাবিত, লক্ষ্মীছড়িতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৩দিনের প্রবল বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে ধুরুং নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে ওঠে গেলে পানিতে ডুবে যায় অসংখ্য বাড়ি-ঘর। উপজেলা সদরের বেলতলী পাড়া, হাইস্কুল এলাকার ২০-২৫টি বসত ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া গুচ্ছগ্রাম, মেজর পাড়া, হাতিয়াছড়াসহ দুল্যাতলী ও বর্মাছড়ি এলাকার পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসরত বেশ কিছু ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে যায় এবং পাহাড় ধ্বস হয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায় নি। পানির তোড়ে ভেসে গেছে অসংখ্য গবাদী পশু হাঁস-মুরগী। ধুরুং এর পাড়ে নির্মিত লক্ষ্মীছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪তলা ভবনের ছাত্রাবাসের বাউন্ডারি ওয়াল ধ্বসে গেছে। ভেঙ্গে গেছে ছাত্রাবাসের রান্নার ঘরটিও। লক্ষ্মীছড়ি-মানিকছড়ি সড়কে ৯নাম্বার এলাকায় পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সদর লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ যাওয়ার রাস্তায় জোন এলাকায় মাটি ভেঙ্গে গেলে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া ভাড়ি বর্ষনে এ ভয়ঙ্কর প্লাবনের সৃষ্টি হয়। স্মরনকালের এই ভয়াভহ পানির ¯্রােত এবং ঢল দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। বলতে দেখা গেছে বিগত ৩০ বছরেও এমন পানির ঢল চোখে পড়ে নি। হঠাত করে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঘরে কোনো মালামাল বেড় করতেও পারে নি অনেক মানুষই। বেলতলী পাড়ার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, ৩০ বছর আগে এই জায়গায় পানি ওঠেছিল তবে এতো বেশি নয়। গত বছরেও বর্ষায় পানি ওঠেছে। কিন্তু এই বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পানি ওঠতে পারে এমন ধারনা থেকে মালামাল সরাতে শুরু করি। কিন্তু ভাবতেও পারিনি এতো পানি ওঠবে। গত বছরের তুলোনায় দুই থেকে আড়াই ফুট পানি বেশি ওঠেছে বলে তিনি বলেন।
এদিকে প্রবল বর্ষন ও ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীছড়ি-বর্মাছড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এখানো। এছাড়া কৃষি ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কলা, কচু, ধান, শাক-শব্জির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূইয়াকে জিগ্যেস করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এই মূহুর্তে অবশ্য কৃষি জমিতে তেমন কোনো ধানের ফসল নেই। কিছু আউশ ধান রয়েছে, বীজ তলার কিছু ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপন করা যাবে বলে তিনি জানান।
তবে এই অবস্থায় দেখা পাওয়া যায় নি দুর্যোগ মনিটরিং টীম কিংবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন(পিআইও) অফিসের কোনো লোকজনকে। উপজেলার প্রকৃত চিত্র কী, ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সংখ্যা কিংবা সার্বিক সহযোগীতাই ক্ষতিগ্রস্থরা পেয়েছে কতুটুক এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেনকে কোনো ভাবেই পাওয়া যায় নি।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবাল বলেন, যারা পানিতে ডুবে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ আ: জব্বার বলেন, বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এক যুবক পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সৌভাগ্য ক্রমে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বানভাসী মানুষের দাবি পাহাড় ধ্বস এবং বন্যার পানি থেকে সাময়িকভাবে মাথা গোজার ঠাই পেতে লক্ষ্মীছড়িতে একটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা এখন সময়ের দাবি।