বাসন্তী চাকমার মিথ্যাচারে উত্তপ্ত সবুজ পাহাড়
স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন-৯ (পার্বত্য চট্টগ্রাম) এর মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে দেয়া মিথ্যাচারের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সবুজ পাহাড়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ হয়েছে রাঙ্গামাটিতেও। অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যহারা করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সেই সাথে তার পদত্যাগও দাবি করা হয়। শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ। এসময় বক্তারা বাসন্তি চাকমাকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়াসহ তার অপসারণের দাবি করে। সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৩রা মার্চ খাগড়াছড়িতে যৌথ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণাও দেয় হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রামের মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা সংসদে তার জন্য নির্ধারিত স্বাগত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত শতকরা ৫১ শতাংশ বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপবাদমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট কল্পকাহিনী তুলে ধরেন। তার বক্তব্যের মূল অংশ ছিলো উগ্র সাম্প্রদায়িক। ১৯৯৬ সালের ১লা মে নিয়ে সংসদে বাসন্তি চাকমা যে বক্তব্য রাখেন তা ছিল সম্পূর্ণ অসত্য। তার কথার কোন ভিত্তি নেই। সে দিন জেলার পানছড়িতে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি।
লিখিত বক্তব্যে মাঈন উদ্দিন বলেন, বাসন্তি চাকমা সংসদে এ ঘটনাকে কখনো ১৯৮৬ এবং কখনো ১৯৯৬ বলেছেন, এতেই প্রমানীত তার বক্তব্য ছিলো উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও মিথ্যা। বাসন্তি চাকমা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে ডাকলেও তিনি মূলত সাম্প্রদায়িক একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই সংসদে ঢুকেছেন। তিনি তার বক্তব্যে তৎকালীন গেরিলা নেতা সন্তুলারমার শান্তিবাহিনীর খুনিদের ভাই সম্বোধন করলেও দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে খুনী হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মাঈন উদ্দিন আরো বলেন, বাসন্তি চাকমা সংসদে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে শান্তিবাহিনী সৃষ্টির ইতিহাস তুলে না ধরে বরং শান্তিবাহিনীর সদস্যদের নিজের ভাই বলেছেন, এতে প্রমাণীত হয় বাসন্তি চাকমা অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগের লেভেল গায়ে দিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থেকে মূলত সাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার ছিলেন। যেই তিনি সংসদে যাবার সুযোগ পেলেন, সেই তিনি সরুপে ফিরে আসলেন।
বাসন্তি চাকমা সংসদে তার বক্তব্যে শান্তিবাহিনীর কোন্দলে সন্তু ও প্রীতি গ্রুপের দ্বন্ধে বহু সাধারণ উপজাতীয়দের জীবননাশের কথা বললেও সুকৌশলে তিনি বাঙ্গালী গণহত্যার কথা এড়িয়ে গেছেন। বাসন্তি চাকমা বাঙ্গালীদের বহিরাগত ও সেটেলার বলে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে আবারো পাহাড়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পায়ঁতারা করছেন। তার এই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে তিনি তার উগ্র বক্তব্যের মাধ্যেমে ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও জেএসএস (সন্তু)’র সন্ত্রাসীদের আবারো পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির দিকে উৎসাহিত করছেন। বাঙ্গালীদের তিনি বহিরাগত বললেও তিনি বা তার চাকমা জাতিরা যে এদেশে মূল সেটেলার ও আরাকান থেকে ভেসে আসা আশ্রিত সেটা তিনি বলতে রাজি হননি। মূলত চাকমারাই বাংলাদেশে আশ্রিত ও সেটেলার। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বাসন্তি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রীরুপে সংসদে গেলেও তিনি তার প্রথম বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর হাতে ধর্ষিত মিতালী চাকমা, জোসনা চাকমা, দীপা ত্রিপুরা, ইতি চাকমা, আয়না চাকমা, বালাতি চাকমার মতো নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন মনে না করলেও ঠিকই শান্তিবাহিনীর গুনগান ও বাঙ্গালী এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করতে কার্পণ্য করেন নি। তিনি সেদিন সংসদে শুধুমাত্র কয়েকজন বাঙ্গালীকে সেটেলার বলে অপমানিত করেননি তিনি সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছেন, তিনি সন্ত্রাসীদেও হাতে নিহত প্রায় ৩০ হাজার বাঙ্গালীসহ সামরিক-বেসামরিক নিহতদের অপমান করেছেন। কালিমা লেপন করে দিয়েছেন ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে অংশ নেয়া বাঙ্গালীদের প্রতি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৮৬ সালে পানছড়িতে একটি গণহত্যা হয়েছিলো ঠিকই তবে সেটা বাসন্তি চাকমার দেয়া তথ্য ১লা মে তারিখে নয়। সেটি হয়েছিলো ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত সময়ে। স্থান ছিলো খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাং, চেঙ্গী, পানছড়ি, লতিবান, উল্টাছড়ি ৫টি ইউনিয়নের ২৪৫টি গ্রামে। ঐ দিন সেনাবাহিনী এবং বাঙ্গালী মিলে কোন পাহাড়িকে “আল্লাহু আকবার” বলে জবাইও করেনি। বরং বাসন্তি চাকমার শান্তিবাহিনীর ভাইয়েরা ঐ এলাকার প্রত্যেকটি বাংগালী গ্রামে অগ্নিসংযোগসহ লুটতরাজ এবং নিরস্ত্র নিরীহ ৮৫৩ জনের অধিক বাঙ্গালী নারী, শিশু, আবাল-বৃদ্ধ বনিতাকে হত্যা করে। বাঙ্গালী নারীদেরকে পাকিস্তানি সেনাদের মত করে গণধর্ষণ ও পরে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সংগঠনগুলোর নেতারা আগামীকাল ৩রা মার্চ খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেন। এছাড়া অবিলম্বে বাসন্তি চাকমা কর্তৃক সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে সংসদে দেয়া মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা দেন তারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন ছাড়াও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদেও জেলা সভাপতি প্রকৌশলী লোকমান হোসেন, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদ, মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি রবিউল হোসেন, পার্বত্য অধিকার ফোরামের জেলা সভাপতি এসএম হেলাল, পার্বত্য নারী অধিকার ফোরামের জেলা আহবায়ক সালমা আহমেদ মৌসহ সংগঠন দুটির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, মহিলা সাংসদ বাসন্তি চাকমা ২৬শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সংসদে তার জন্য নির্ধারিত স্বাগত বক্তব্যে বলেছেন, যে তাঁর যখন ১৬/১৭ বছর বয়স তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো। কিন্তু ঐ সময় যেই বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে “শান্তিবাহিনী” নাম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলো তারাই যে এই অস্ত্রের ঝনঝনানির সৃষ্টি করেছিলো সে বিষয়টি তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। উপরন্তু তিনি শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে নিজের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯৮৬ সালের ১লা মে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে ঐ দিন নাকি সেনাবাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা মিলে “আল্লাহু আকবার” শ্লোগান দিয়ে পানছড়ির দুই তিন গ্রামের পাহাড়িদেরকে জবাই দিয়েছিলো। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে সেনাবাহিনী ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের জড়িয়ে আরো কিছু মিথ্যা বক্তব্য দেন। তার এ মিথ্য বক্তব্যে উত্তপ্ত সবুজ পাহাড়।