• February 19, 2025

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর শাহাদাৎ বার্ষিকী আজবীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

 বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর শাহাদাৎ বার্ষিকী আজবীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

পাহাড়ের আলো: আজ ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর শাহাদাৎ বার্ষিকী। রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাটের একটি দ্বীপে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন বাঙালির অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম ইপিআরের ১১নং উইং-এ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে একটি টিলার উপরে তাকে দাফন করা হয়।

কাপ্তাই লেকের অথৈ নীল পানির মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপে মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি। এর অবস্থান রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২০এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তিনি। ২৬মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও ছুটে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট আক্রান্ত হলে শত্রুবাহিনীর তিনটি নৌযান একাই ধ্বংস করেন তিনি।

তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটি-মহালছড়ি পানিপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যের সাথে বুড়িঘাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানি সৈন্য, বেশ কয়েকটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য আক্রমন করে। মর্টার আর ভারী অস্ত্র দিয়ে চালানো আক্রমণে প্রতিহতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন মুন্সি আব্দুর রউফ। হঠাৎ একটি গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার দেহ। স্থানীয় দয়াল কৃষ্ণ চাকমা তার মরদেহ উদ্ধার করে তাকে এই দ্বীপে সমাহিত করেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর উদ্যোগে সেই দ্বীপে নির্মিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি সৌধ।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ সমাধি সৌধের কেয়ার টেকার দয়াল কৃষ্ণ চাকমার ছেলে বিনয় কুমার চাকমা বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। বাবাকে দেখেছি দেশের একজন বীরশ্রেষ্ঠের কবর দীর্ঘদিন দেখাশুনা করতেন। এখন তার শারিরীক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমিই দেখাশুনা করি। এই সমাধি স্থলটা দেখাশুনা করতে পারাই যেন আমার মুক্তিযুদ্ধ।

গাজীপুর থেকে সমাধি সৌধে দেখতে এসেছেন মল্লিকা সেন। তিনি জানান, বইয়ে পড়েছি সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজনের সমাধি রাঙামাটিতে। তাই ওনার সমাধি স্থানটি দেখতে আসছি। এই সমাধি স্থানটি আরও সুন্দর ও প্রচার হলে অনেকেই আসবে দেখার জন্য।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি সংরক্ষণে ও নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে কাজ শুরু করেছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশন। ইতিমধ্যে ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা বৃত্তি চালু করেছে। ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশন পরিচালক ইয়াসিন রানা (সোহেল) জানান, প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানানো হলেও তাঁর শাহাদাৎ বার্ষিকীর দিনে তেমন কোন আয়োজন হতো না। এ বছর থেকে শাহাদাৎ বার্ষিকীর দিনে ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা বৃত্তি প্রদানসহ নানা আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা আশা করছি আগামী বছর থেকে এই বীরশ্রেষ্ঠের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে শিশুদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বীরশ্রেষ্ঠের জীবন সম্পর্কে সকলে জানতে পারবে। এবছরই প্রথমবারের মত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে তার মৃত্যু বার্ষিকী পালন করছেন।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বড় বোন জোহরা বেগম বলেন, আমার এক ভাইকে হারিয়ে, মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। সবার প্রতি আমার আবেদন, আসুন সবাই মিলে সোনার দেশ গড়ি।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১মে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ। বাবা মেহেদী হোসেন স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে আব্দুর রউফ ছিলেন সবার বড়। উপজেলার কুমারখালী হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় তৎকালীণ ইপিআর বর্তমানে বিজিবিতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post