মানিকছড়িতে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মো. রবিউল হোসেন: অপ্রয়োজনীয় স্থানে মানহীন কালভার্ট নির্মাণ, মসজিদ ও সড়ক সংস্থার-উন্নয়নের নামে লাখ টাকা আত্মসাৎ, ভিডব্লিউবি (ভিজিডি) কার্ড করে দেয়ার নামে উৎকোচ গ্রহণসহ দরিদ্রদের চাল বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য কহিনুর বেগমের বিরুদ্ধে। ২৪ এর ৫আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর তিন ওয়ার্ডের পুরুষ মেম্বাররা ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত থাকার সুবাদে মহিলা মেম্বার কহিনুর বেগম এই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে জানান স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়নের বাঞ্চারামপাড়া (শনখোলাপাড়া) জামে মসজিদে কার্পেট সরবরাহ ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ নেন ১ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। টিনের তৈরি ছোট্ট মসজিটিতে নিম্নমানের ৩টি কার্পেট, ছোট্ট একটি বেড়া আর অজুখানার ওপর ছোট্ট এক টুকরো রঙ্গিন টিন স্থাপন করেই সমাপ্ত করেন লক্ষাধিক টাকার এই উন্নয়ন কাজ। জানতে চাইলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘মসজিদের নামে বরাদ্দ নিয়ে ৩০ হাজার টাকার কাজও করেননি মহিলা মেম্বার কহিনুর। কতটাকা বরাদ্দ এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানাননি’।
গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়নের ডাইনছড়ি মাষ্টারঘাটা ব্রীজ থেকে বাঞ্চারামপাড়া মসজিদের পাশে রাস্তা সংস্কার ও সলিং করণের জন্য বরাদ্দ নেন ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। অথচ সেই সড়কের খানাখন্দে কিছু পুরাতন নিম্নমানের ইটের টুকরো আর মাটি ফেলেই চলছে এই কর্মসূচির কাজ। সলিং করণের কোন দৃশ্যই চোখে পড়েনি। এছাড়াও ঢাকাইয়া শিবির থেকে পূর্বদিকে কাঁচা সড়কের মাঝখানে প্রয়োজন ছাড়াই অবৈধ কয়লা চুলা ঘেঁষে লাখ টাকা বরাদ্দে তৈরী করা হয়েছে কালভার্ট। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরী করা ঐ কালভার্টটি নির্মাণের তিনদিন পরই একাংশ ভেঙ্গে যায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য কহিনুর মেম্বার অপ্রয়োজনে এই কালভার্টটি নির্মাণ করেন। হাসিনা সরকার পতনের পরই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। একটি প্রত্যয়ন নিতে গেলেও হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে’।
অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, সরকারি ভিডব্লিউবি (ভিজিডি) কার্ড করে দেয়ার নামে স্থানীয় নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন থেকে ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করেন কহিনুর বেগম। যাদের কেউই পাইনি সরকারি এই সুবিধা। এছাড়াও অতিদরিদ্র,অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত ভিজিএফের ১০ কেজি করে চাল বিতরণের তালিকাকরণ ও স্লিপ বিতরণেও ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেন নারী ইউপি সদস্য কহিনূর বেগম।
প্রতিবন্ধী হুমায়ুন কবির আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার দুটি পা নাই, ‘ভিক্ষা করে সংসার চালাই। অথচ আমি কখনোই ভিজিডি, ভিজিএফ বা অন্য কোন সুবিধা পাইনি’। স্থানীয় আকবর আলী বলেন, ‘মহিলা মেম্বার এখন দায়িত্বে আছেন, ওনার অনেক ডিমান্ড। তাই ওনার আত্মীয়রাই সুবিধা পাচ্ছে। গরিব মানুষের কোন দাম নেই’।
এ বিষয় স্থানীয় প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মো. নুরুজ্জামান মাষ্টার বলেন, ‘মহিলা মেম্বার কহিনুর বেগমের বেশকিছু অনিয়মের তথ্য ও অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বেশ কয়েকবার ওই মহিলা মেম্বারের সাথে কথা বলেছি, ওনার ব্যবহার খুবই অশালীন। ওনার সকল দুর্নীতির বৈধতা দিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ’। অতি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এসকল অভিযোগ মিথ্যা ও যড়যন্ত্রমূলক দাবী করে নারী ইউপি সদস্য কহিনুর বেগম বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত ৩ বছরে আমি কোন কাজ পাইনি। আমাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি আমি কিছু কাজ পাওয়ায় স্থানীয় বিএনপি’র দলীয় লোকজন আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে। কাজের অংশীদার না রাখায় তারা এমন বিরোধীতা করছে’। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তো ভিজিএফ সুফলভোগীদের তালিকা করা সম্ভব নয়, গ্রাম পুলিশ দ্বারা তালিকা নেয়ায় এক পরিবারে দশজন সুবিধা পেয়েছে। ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও সচেতনতার সাথে দেখা হবে’।
এবিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘মহিলা মেম্বার কহিনুর বেগমের সাথে কোন কাজের বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির কারও সঙ্গে কোন প্রকার কথা হয়নি৷ যদি তিনি বলে থাকেন, তবে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। তবে কি কারনে মিথ্যা বলেছেন তিনিই ভালো জানেন’।
টিআর ও কাবিটা কর্মসূচিতে মসজিদ উন্নয়ন ও সড়ক সংস্কারে অনিয়মের প্রশ্নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দুটি কাজেরই অর্ধেক বিল প্রদান করা হয়েছে। কাজের গুনগত মান যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে’