মানিকছড়ি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ
স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলাধীন ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় চলতি ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বরাদ্ধে চলতি এপ্রিল মাসে প্রায় ৪৪ মেট্রিক টন আতপ চাল উপ-বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। যা উপজেলার ১,৪৬৪ জন সুবিধাভোগীর মাঝে ৩০ কেজি করে বিতরণের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ভিজিডি’র বরাদ্ধকৃত খাদ্য শস্যের ছাড়পত্রের (ডি.ও) তথ্য গোপন করে আতপের পরির্বতে সিদ্ধ চাল ছাড় দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে পুরো উপজেলা জুড়ে। আর এ অনিয়মের সঙ্গে পরিপূর্ণ সম্পৃক্ততা রয়েছে মানিকছড়ি খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিনের। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাথমিক তদন্ত শেষে আতপের স্থলে সিদ্ধ চাল সরবরাহের সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯ এপ্রিল সোমবার দুপুরে তাদের দুইজনকে এ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দপত্র অনুসারে মানিকছড়ি উপজেলায় ১, ৪৬৪ জন ভিজিডি সুবিধাভোগী রয়েছেন। তারা প্রতি মাসে ৩০ কেজি হারে সরকারি খাদ্যশস্য (চাল) ভোগ করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে চলতি এপ্রিল-২১ মাসের ভিজিডি’র খাদ্য শস্যের ছাড়পত্রে গত ১১ এপ্রিল স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ। একই দিন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জুলিয়াস চাকমা (ডিও নং- ৬৫৩৯১৬৮-৬৫৩৯১৭১) ছাড়পত্র প্রদান করেন।
উক্ত ছাড়পত্রে আতপ চাল বিতরণের নিদের্শনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ওসিএলএসডি মো. শামিম উদ্দিন ৪নং তিনটহরী ইউনিয়ন ব্যতিত অন্য ৩টি ইউনিয়নে অফিসিয়াল রেকর্ডপত্রে আতপ চাল সরবরাহ করা হয়েছে দেখালেও বাস্তবে খাদ্য গুদাম থেকে তিনি সিদ্ধ চাল সরবরাহ করেন। ফলে সরকারি অফিসিয়াল রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিনে বাস্তবচিত্রে সম্পূর্ণ গড়মিল দেখা যায়।
এ বিষয়টি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ভিজিডির খাদ্য শস্য বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। এ নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল বিকাল থেকেই প্রশাসনসহ জনপদে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যার ফলে ১৯ এপ্রিল সোমবার সকালে ইউএনও তামান্না মাহমুদ সরজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ছাড়পত্র অনুযায়ী সরকারি নির্দেশনা বহির্ভূত ভাবে আতপ চালের পরির্বতে ১নং মানিকছড়ি ইউনিয়নে ৩৬৬ বস্তা সিদ্ধ, ২নং বাটনাতলীতে ২৯০ বস্তা এবং ৩নং যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে ৩০৯ বস্তা সিদ্ধ চাল সরবরাহের সত্যতা পান।
অন্যদিকে ভিজিডির চাল বিতরণকালে নিন্মমানের চাউলের বস্তা পাওয়া গেলে, তা খাদ্যগুদামে ফেরত দিয়ে পরিবর্তন করে নিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বলেন, ভিজিডি’র চাল সরবরাহে অনিয়মের কথা শুনে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। বরাদ্দপত্র অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করে কেন আতপের পরির্বতে সিদ্ধ চাল সরবরাহ করা হয়েছে, তার জবাব চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মানিকছড়ি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জুলিয়াস চাকমা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভিজিডি’র চাল সরবরাহে অনিয়মের ব্যাখা চেয়ে আমাকে শোকজ করায় আমি নিয়ম অনুযায়ী খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি মো. শামিম উদ্দিনের নিকট লিখিত ব্যাখা চেয়েছি।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন সরকারি বরাদ্দকৃত চাউল মোটা অংকের অর্থের বিনিময় কালোবাজারে বিক্রি করে কম দামী ও নিম্নমানের চাল খাদ্য গুদাম থেকে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ দেন। এসবের প্রতিবাদ করায় খাদ্য গুদামে অনেকেই তার হাতে নাজেহাল হয়েছেন। গুচ্ছগ্রামে সরকারি খাদ্য শস্য বিতরণের নামেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে কমিশন বাণিজ্যের আরো অনেক অভিযোগ।
তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত মানিকছড়ি খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রকার কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কানিজ জাহান বিন্দু’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সরকারি আদেশ অমান্য করে আতপ চালের পরিবর্তে কিভাবে সিদ্ধ চাল দেওয়া হলো, তা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতির সাথে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।