• November 2, 2024

মাহে রমজানের সওগাত-৬

                                    মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ষষ্ঠ দিবস। এই মাসে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ মানুষ যে কাজই করে তাতে দুটি বিষয় অবশ্যই থাকবে। প্রথমতঃ কাজের পেছনে থাকবে একটি উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়তঃ সেই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য থাকবে কর্মপন্থা। তেমনি সিয়াম সাধনার রয়েছে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। এ সম্পর্কে সিয়াম পালনের হুকুম দেয়ার পাশাপাশি আল্লাহতায়ালা বলেছেন, লায়ল্লাকুম তাত্তাকুন অর্থাৎ তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে এই জন্য যে, সম্ভবতঃ তোমরা মুত্তাকী ও পরহেজগার হতে পারবে। আল্লাহপাক কিছু বলেননি যে, রোজা রেখে তোমরা নিশ্চয়ই পরহেজগার ও মোত্তাকী হয়ে যাবে। কারণ রোজার মাধ্যমে যে সুফল লাভ করা যায় তা কেবল রোজাদারের নিয়ত, ইচ্ছা-আকাংখা ও আগ্রহের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। যে ব্যক্তি রোজার উদ্দেশ্য জানতে ও ভাল করে বুঝতে পারবে এবং তা দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করবে সে তো কমবেশী মুত্তাকী বা পরহেজগার নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি রোজার উদ্দেশ্যই জানবেনা এবং তা হাসিলের জন্য চেষ্টাও করবেনা, রোজা দ্বারা তার কোন উপকারই হবার আশা নেই। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) নানাভাবে রোজার আসল উদ্দেশ্যের দিকে ইংগিত করেছেন এবং বুঝিয়েছেন যে, উদ্দেশ্য না জেনে ক্ষুধার্ত ও পিপসার্ত থাকার কোন সার্থকতা নেই। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করবে না, তার শুধু খানাপিনা ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। অপর এক হাদীসে রাসুলে করীম (সাঃ) বলেছেন, অনেক রোজাদার এমন আছে কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তার ভাগ্যে অন্য কিছু জোটে না। তেমনি রাতে ইবাদতকারী অনেক মানুষও এমন আছে যারা রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারে না। এই দুটি হাদীস থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, শুধু ক্ষুধার্ত ও পিপাসায় কাতর থাকাই ইবাদত নয়, আসল ইবাদতের উপায় অবলম্বন মাত্র। আসল ইবাদত হচ্ছে, আল্লাহর ভয়ে তার দেয়া বিধান ভঙ্গের অপরাধ না করা, আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের চেষ্টা করা এবং অহংকার বা নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দেয়া। আল্লাহকে ভালোবেসে ঐকান্তিক ভাবে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলাই আসল ইবাদত। রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহর রসুল আরো বলেছেন, ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে তার সকল অতীত গুনাহ-অপরাধ মাফ করে দেয়া হবে। মূল বিষয় হচ্ছে, একজন মুসলমান সব সময়ই আল্লাহর মর্জি-মাফিক চলবে এবং তার মর্জির খেলাফ কিছু করবে না। আল্লাহর রসুল (সা.) আরও বলেন, গুনাহ থেকে যে ব্যক্তি তওবা করে, সে একেবারে নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মাহে রমজানই হচ্ছে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার উৎকৃষ্ট ও উত্তম সময়।

 

আরো পড়ুন মাহে রমজানের সওগাত-১
রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান আমাদের সামনে সমাগত। আজ পহেলা রমজান। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম মিলল্লাতের উপর মাহে রমজানে সিয়াম পালন বা রোজা রাখা ফরজ করেছেন। আর এই সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে তাকওয়া, পরহোজগারী বা আল্লাহ ভীতির গুণ সৃষ্টি করা। এই সম্পর্কে আল-কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন : হে ঈমানদারগণ, সিয়াম তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও যেমনিভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হবে।
ইসলাম বিশ্ব মানবতার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতি সাধন করে কিভাবে সসীম বান্দা অসীম প্রভুর সঙ্গে অনুপম দিদার বা সাহচর্যের সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে তাই নির্দেশ করে। বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার সাথে সাথে কিভাবে একজন মুসলমান তার অভ্যন্তরীণ রোগ সমূহের নিরাময় সাধন করবে ইসলামী শরীয়াহ সেদিকেও দিয়েছে যুগান্তকারী পথ নির্দেশনা। সিয়াম বা রোজা সে রকম একটি মহিমানি¦ত ইবাদত। মাহে রমজানের এই সিয়াম পালনের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ ভীতি, পরম পুরস্কার প্রাপ্তি, আর্তপীড়িত মানবতার কল্যাণে উদ্বুদ্ধকরণ ও নফসে আম্মারা বা আমিত্বের বিরুদ্ধে একটি সফল ট্রেনিং কোর্স । মুসলিম ঐতিহ্য ও চেতনার স্মারক, দ্বীন-দুনিয়ার সমৃদ্ধি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা , শারীরিক ও মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব আর গৌরব ও মর্যাদার অবিস্মরণীয় অম্লান স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে মাহে রমজান। ঝঞ্চা-বিক্ষুব্ধ অশান্ত এই পৃথিবীতে মানব জীবনে রহমত, বরকত, মাগফেরাত, নাজাত, অনাবিল শান্তি আর নিরাপত্তার সওগাত বয়ে নিয়ে আমাদের মাঝে আসে মাহে রমজান। সিয়াম আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে তাকওয়ামুখী জীবন গঠনের নির্দেশনা প্রদান করে । জাগতিক ভোগ-বিলাস আর ভঙ্গুর জীবন দর্শনের কৃত্রিম মহোৎসব বর্জন করে জীবনের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্ণয় করে মনজিলে মকসুদে পৌঁছার প্রদীপ্তমান চেরাগ জ্বলে উঠে পবিত্র রমজানুল মুবারকে। এই বরকতময় মাসেই নাজিল হয়েছে মানবতার মুক্তির অদ্বিতীয় সনদ, সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল করিম। হেরা গুহার দীপ্তিমান প্রভাব গোটা বিশ্ব-জাহানের মানুষের হৃদয়কে করেছে হেদায়েতের জ্যোতিতে আলোকিত ও উদ্ভাসিত। হাজার মাসের চাইতে শ্রেষ্ঠ সেই রাত লাইলাতুল কদর। হাজার বছরেও যে কল্যাণ নাজিল হয়নি, বিশ্ববাসীর উপরে তা যেন একটি রাতেই নাজিল হয়েছে। সেই কল্যাণের অনুপম ফল্গুধারা আল-কুরআনুল কারিম। কালের মহাগর্ভে হারিয়ে যায় একেকটি মাহে রমজান। কিন্তু মাহে রমজানের মৌলিক শিক্ষা তাকওয়া সমৃদ্ধ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের নিমিত্ত পবিত্র কুরআনের যথাযথ অনুসরণ করতে আজ ব্যর্থতার গ্লানি আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। পৃথিবীর অধিকার বঞ্চিত মজলুম জনতার আর্তচিৎকারে যখন বাতাস ভারী হয়ে উঠছে তখন মাহে রমজানের মহান শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের কুরআন-মুখী জীবন যাপনে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানোর বিকল্প নেই। আল্লাহ এই মাহে রমজানে সেই তৌফিক দান করুন কায়মনো বাক্যে এই প্রার্থনা মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে। আমীন !

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post