রাঙ্গুনিয়া ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সীমাহীন দুর্নীতির আখড়া
শান্তি রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গুনিয়া: রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস সীমাহীন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি এমন চরমে পৌঁছেছে সরকারি নীতিমালার বাইরে চুক্তি অনুযায়ী মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না।
ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির ফর্সা তুলা, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, সরকারী খাস ভূমির হেফাজতকরন, ভূমিহীনদের কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, নামজারীর প্রস্তাব দেয়া, অফিসে হালনাগাদ ভূমি রেকর্ড সংরক্ষন করা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হাট বাজার হতে খাস আদায় করা, সরকারি জলমহাল গুলি রক্ষনাবেক্ষন করা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে।
টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় যায় না। বছরের পর বছর এসব কাজ ফাইলবন্দি থাকে। ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহক থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে। দালাল ছাড়া কোন কাজেই হাত দেন না অফিস কর্তারা। ভূমি সংক্রান্ত সেবাপ্রার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাঠ পর্যায়ের ঘাগড়া ইউনিয়ন তহশীলদার (ভুমি কর্মকর্তা) বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবী করেছেন।
ইসলামপুর গ্রামের ভূমির কাজে আসা মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, মালিকানার রেকর্ড জালিয়াতের মাধ্যমে চলছে ভূমিদস্যুতার দৌরাত্ম। ভূমিদস্যুদের দৌরাত্মে ভূমির মালিকরা নিজেদের জমিজমা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের সাথে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রে রয়েছে ব্যাপক গড়মিল। এমনকি ভূমিহীনদের নামে সরকারী বন্দোবস্তি দেওয়া দলিল ও হস্থাস্তর নিয়ে চলে লুকোচুরি খেলা।
রাজানগর গ্রামের মনির হোসেন বলেন, ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভূয়া নামজারি খতিয়ান তৈরি করে নিরীহ মানুষের জমির উপর জবর দখল চলছে। এ ভূমিদস্যু চক্র ভূয়া রেকর্ডের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করে নিরীহ মানুষ অহরহ প্রতারিত হচ্ছে। ভূমি অফিসের দালাল চক্রের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নাম জারির কাজটি পুরোদমে অনিয়মেই চলছে। দাবীকৃত নিদিষ্ট ঘুষের টাকা হাতে পৌঁছে না দিলে নাম জারির আবেদন ফাইল নড়েচড়ে না। মাসের পর মাস পড়ে থাকে ফাইল। ফলে সাধারন ভুক্তভোগীদের কষ্টের সীমা থাকেনা। মিউটেশন বা নামজারী মামলার সরকার নির্ধারিত ফি ২৪৯ টাকা হলেও দালাল চক্রের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নুরুল আবছার নিরীহ লোকদের কাছ থেকে ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। জায়গার কাগজপত্রে কিছু হেরফের থাকলে টাকা গুনতে হয় আরো বেশী।
সোনারগাঁও গ্রামের জনৈক মো. সুলতান আহম্মদ বলেন, ঘাগড়া ভূমি অফিসে ৪০ শতক বাড়িভিটা জমি নামজারি করার জন্য আবেদন করেছি। আজ নয় কাল করে র্দীঘদিন ধরে আমাকে হয়রানী করা হচ্ছে। কোন উপায় না পেয়ে ঘাগড়া ভূমি অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছার কে টাকা দিতে হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসা সেবাগ্রহিতা মো. ইসকান্দর। তিনি জানান, ২০ শতক জমি নামজারি করতে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। তবুও হয়রানীর শেষ নেই।
দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদ বলেন, রানীরহাটস্থ ঘাগড়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলাকার জনগণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায় করছে। নামজারীর অজু হাতে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে শতগুন বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। ঘাগড়া ভূমি অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছার ভূমির কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালালের মাধ্যমে নামজারি বা মিউটেশনর মত কাজটি হয়ে থাকে। এদের মাধ্যমে ভূমি নামজারি না করালে সাধারন জনগনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যার কারনে দালালরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারন জনগনের কাছ থেকে প্রতি নামজারির নামে ৭ হাজার থেকে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতে দ্বিধাবোধ করেনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইছামতি খালে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বালু দস্যুদের অবৈধ সুযোগ করে দেয়ায় বছরে সরকার এ খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে উত্তর রাঙ্গুনিয়া একাধিক গ্রাম ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
জানা যায়, রাজানগর ইউনিয়ন ভূমি অফিস (ঘাগড়া ভূমি অফিস) রানীরহাট বাজারের ইউপি রোডের পার্শ্বে ভূমি অফিস অবস্থিত। উক্ত ভূমি অফিস নিজস্ব সম্পত্তির উপর অবস্থিত। ভূমি অফিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হত। ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ (৬ষ্ঠ পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস (নতুন ভবন) নির্মাণ গত বছরের ১৪ মার্চ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি, গাফেলতি ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘাগড়া ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার মো. আকরাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন দায়িত্বরত তহশীলদার নুরুল আবছার। সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ নেন না। প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের ভূমির কাজে আসা লোকজনকে হয়রানী করে যাচ্ছেন। ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মো. নুরুল আবছার বলেন, উর্দ্ধতন মহলকে ঘুষের টাকা জোগান দিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া হচ্ছে। পত্রিকায় লিখলেও কোন কাজ হবে না। উর্দ্ধতন মহল আমার পক্ষে রয়েছে।