• January 18, 2025

রামগড়ে বিজিবি-প্রশাসন বিরোধঃ সুষ্ঠু সমাধান চায় সাধারণ মানুষ

 রামগড়ে বিজিবি-প্রশাসন বিরোধঃ সুষ্ঠু সমাধান চায় সাধারণ মানুষ

সাইফুল ইসলাম: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক মহকুমা ও বর্তমান উপজেলা রামগড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর একটি ঐতিহাসিক ফাঁড়ির ভূমি নিয়ে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে গত ২০০৮ সাল হতে টানাপোড়ন চলছে। এরই জের ধরে সম্প্রতি বিজিবির উক্ত ফাঁড়িটির চারপাশে থাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীর তারকাটার বেড়ার নিয়মিত সংস্কার করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের জন্য জেলে যেতে হয়েছে স্থানীয় দুজন দিনে এনে দিনে খাওয়া নিরীহ শ্রমিককে।

রামগড়ের ভারত সীমান্তের খুবই সন্নিকটে উপজেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমী, উপজেলা মিলনায়তন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাসভবন, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাচীন জরাজীর্ন এসডিও বাংলোসহ নানা সরকারী স্থাপনা এবং জনসাধারণের বসতবাড়ি লাগোয়া ভারত সীমান্তে কৌশলগত অবস্থান ও ইন্দিরা মুজিব চুক্তির কারণে উক্ত বিবাদমান ভূমি ও সেখানে থাকা রামগড় ব্যাটালিয়নের (৪৩ বিজিবি) বিশেষ ক্যাম্পটি দুদেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে দাবী বিজিবির। বিজিবি বলছে, ১৭৯৫ সালে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে রামগড়ে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গোড়াপত্তনের পর থেকেই আলোচ্য জায়গাটি বিজিবি তথা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অপারেশনাল কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছে।

অপরদিকে, উপজেলা প্রশাসন বলছে, উপজেলার ২৩৫ নং নাকাপা মৌজার ১৪৮ নং হোল্ডিংয়ে বিভিন্ন দাগে উপজেলা পরিষদের নামে ৫ দশমিক ৪৫ একর রেকর্ডীয় ভূমি বিজিবি’র দখলে রয়েছে । পরিষদের এ জায়গায় ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত সাবেক প্রাচীন মহকুমা প্রশাসকের (এসডিও) অফিস ও বাসভবন (বাংলো) রয়েছে। এছাড়া উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে। এসব সরকারি অফিসসহ পুরো জায়গায় বিজিবি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে।

প্রশাসনের দাবি, ‘ওই এলাকায় মোট জায়গা রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ একর। এর মধ্যে পরিষদের নামে রেকর্ডীয় ৫ দশমিক ৪২ একর জায়গা ছাড়াও অবশিষ্ট জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানের ৩ দশমিক ৩ একর জায়গা আছে। এ জায়গার মধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসের জন্য ১ দশমিক ৫০ একর ও প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য শূন্য দশমিক ৮৫ একর জায়গার প্রস্তাবনা রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। ২০১৯ সালে বিজিবি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন উক্ত জমি হতে বিজিবি’র স্থাপনা সরিয়ে নিতে বিজিবিকে পত্রের মাধমে জানায় যে, “অবৈধ দখলের জন্য নিয়ম অনুযায়ী ০২ বছরের কারাদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।” বিজিবির বিশেষ ক্যাম্পের জন্য ৩ দশমিক ৫ একর জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হলে, উক্ত প্রস্তাবনার মধ্যে ১১৮৩ নং দাগে এক শতাংশ জমির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্দোবস্তের প্রস্তাবনাটি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ফেরত পাঠায়। পরবর্তীতে বিজিবি উক্ত এক শতাংশ জমি সংশোধনপূর্বক ৩ দশমিক ৪ একর জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য পুনরায় প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করলেও জেলা প্রশাসক, খাগড়াছড়ি কর্তৃক কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।

তবে বিবাদমান এ বিষয়টি কিছুদিন ধরে আলোচনার বাইরে থাকলেও সম্প্রতি আবারো পুরো খাগড়াছড়িজুড়ে আলোচনায় এসেছে। গত ১ আগষ্ট বিবাদমান উক্ত ভূমিতে বিজিবির ফাঁড়িটির চারপাশে থাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীর তারকাটার বেড়ার নিয়মিত সংস্কার করতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান অফিস টিলার আবুল কালাম ও দারোগা পাড়ার রুহুল আমিন নামের দুজন। তাদের কাজ দেখিয়ে দিয়ে বিজিবি সদস্যরা কিছুক্ষণের জন্য ক্যাম্পের অন্য পাশে গেলে শ্রমিকদেরকে একা পেয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত দুই দিনমজুরকে মোবাইল কোর্ট করে পুলিশের মাধ্যমে সেখান থেকে ২-৩ মিনিটের মধ্যে আটক করে নিয়ে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অফিসে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে উক্ত নিরীহ দুই শ্রমিককে ৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ বিষয়ে ৪৩ বিজিবির একটি সূত্র জানায়, তাদের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে দিনমজুর আবুল কালাম ও রুহুল আমিন রামগড় বিওপির ঘেরা বেড়া মেরামতের কাজ করতে গেলে ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁদের জেলে পাঠান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামগড়ের ইউএনও খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, ‘প্রতিশোধ হিসেবে শ্রমিকদের জেলে পাঠানো হয়নি। একজন বিচারক হিসাবে দুই বছরের জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমি দিয়েছি পাঁচ দিন।’

পরদিন ২রা আগষ্ট সকালে ক্যাম্পের ১০-১৫ জন বিজিবি সদস্য নিজেরাই তাদের পুরনো কাঁটাতারের বেড়ার সাথে লাগানো খুঁটি পরিবর্তন করেন। এদিনও খবর পেয়ে ইউএনও খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরবর্তীতে নিজ অফিসে ফিরে আসেন।

বিজিবির ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র এদিন গণমাধ্যমের কাছে জানান, নতুন করে সেখানে কোন বেড়া বা কিছু নির্মান করেনি বিজিবি। বিজিবি তাদের ফাঁড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর পুরাতন খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে শুধুমাত্র নতুন খুঁটি লাগিয়েছেন। যা তাদের নিয়মিত সংস্কার কাজেরই একটি অংশ।

এ ঘটনার পর গত ৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. আলীমউল্যাহ ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এসময় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বিজিবি-উপজেলা প্রশাসন জমি নিয়ে বিরোধ ও শ্রমিক জেলে যাওয়া দুঃখজনক।’

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিজিবি এবং প্রশাসন দুটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে আইনগত ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে আমরা তাদের (বিজিবি) সাথে সমাধানে বসতে পারি। ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। সেখান থেকে নিদেশনাও পেয়েছি । কে হারলো কে জিতলো ব্যাপারটি এমননা একটা সমাধান হলে দুই পক্ষেরই লাভ। সরকারি একটি বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের দৌড়াদৌড়ির ব্যাপার নয় এটি। দরকার হলে আমরা তাদের প্রস্তাব দেবো— আসেন বসি একটা সমাধানতো বের হবে। আর এটি সবাই চাচ্ছে।

এদিকে, ৫ আগষ্ট ৫দিনের জেল খেটে বাড়ি ফিরেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা পাওয়া নিরীহ দুই শ্রমিক। এরপরই তাদের সাথে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ সনের ৫৯ নং আইনের ধারা ৫ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ধারা ১১ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইন শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করিবার সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোন অপরাধ, যাহা কেবল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য, তাহার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হইয়া থাকিলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করিয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে, দোষী সাব্যস্ত করিয়া, এই আইনের নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করিতে পারিবেন মর্মে বিধান থাকলেও সাজা খেটে আসা দুই শ্রমিকেরই দাবী তারা যখন বিজিবির ফাঁড়ির বেড়া সংস্কারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের মাধ্যমে তাদের সেখান থেকে জোড় করে টেনে হিচড়ে ইউএনও অফিসে নিয়ে যান। সেখানে তাদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা বা কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিভিন্ন কাগজে জোড় করে সই রেখে তাদের থানায় প্রেরণ করেন এবং প্রায় আধঘন্টা পর থানা থেকে তাদের জেলে প্রেরণ করেন।

ঘটনাস্থলে বিচার ও অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিচার করার কথা থাকলেও তাদের দাবী, ইউএনও খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত কোনটিই করেননি। এছাড়া, জেলে যাওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যরা অর্থকষ্টে না খেয়ে থাকার উপক্রম হলেও উপজেলা প্রশাসন মানবিকতার খাতিরেও তাদের কোন খোঁজ রাখেন নি বলেও দাবি এই দুজনের।

দিনমজুর আবুল কালামের স্ত্রী অজিফা খাতুন জানান, ‘আমাদের ৩ মেয়ে ২ ছেলেসহ ৭ জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে জেলে পাঠানোর ফলে আমাদের সংসার অচল হয়ে পড়েছে।’ একই পাড়ার সত্তরোর্ধ্ব হারিচা খাতুন (আলেয়ার মা) বলেন, ‘দিনমজুর আবুল কালাম কোনো দিন খারাপ পথে চলেনি, তাকে কেন জেলে পাঠানো হবে।’

তবে তারা জেলে যাওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যরা বিজিবির কাছে গেলে বিজিবি তাদের মাঝে তাৎক্ষনিক ০২ জনের ০৫ দিনের মজুরীর দ্বিগুন পরিমান ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা এবং পরবর্তীতে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের দুজনের পরিবারকে আরও ৩০ হাজার টাকা সর্বমোট ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

ভূমি বিরোধ ও ঐতিহাসিক ফাঁড়ি উচ্ছেদ নিয়ে কথা বলতে চাইলে, সীমান্তের কূল ঘেঁষে বসবাস করা এক হোটেল ব্যবসায়ী জানালেন তাদের নানা দুশ্চিন্তার কথা। তারা কথায়, “আমরা যারা নদীর কূলে ঘরবাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি তাদের সবারই মনে একটা অজানা আতঙ্ক থাকে সবসময়। তবে বিজিবির উপস্থিতির কারণে আমরা কিছুটা হলেও নির্ভিঘ্নে বসবাস করতে পারছি। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বাড়ির পাশের চরগুলোতে কিংবা জমিতে আমরা বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে থাকি, সেসময় নদী থেকে আমাদের পানি সরবরাহ করে জমিতে সেচ দিতে হয়। গতবছর পাশ্ববর্তী মহামুনি এলাকায় আমাদের লোকজন নদীতে কলস দিয়ে পানি আনতে গেলে বাঁধা দেয় বিএসএফ। এমনকি বন্দুক উঁচিয়ে বাংলাদেশীদের হুমকিও দেয় তারা। নানা সময় বিনা কারণে অকথ্য ভাষায় গালা-গালিও করে। এছাড়া নদীতে মাছ ধরতে নামলে কিংবা গোসলে নামলেও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আমাদের এখানে বিজিবি ক্যাম্প থাকায় আমাদের সাথে অতটা আধিপত্য বা জোর দেখাতে পারে না বিএসএফ। এখন যদি বিজিবি এখান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদেরও দীর্ঘদিনে পিতৃভিটা ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র, অথবা বিএসএফের গুলি খেয়ে মরতে হবে।

আরেক বাসিন্দা ও সিএনজি চালক জানালেন ভিন্ন কথা, তিনি বলেন, এত বছর ধরে বিজিবি-প্রশাসন কোন বিতর্ক ছাড়াই স্ব স্ব কাজ করে আসলেও হঠাৎ করে প্রশাসনের এমন আচরণে তারা হতাশ।

অতীত ইতিহাস

বর্তমানে উপজেলার উপকন্ঠে উপজেলা কোর্ট মসজিদের গাঁ ঘেষে তৎকালীন রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন বা বর্তমান বিজিবির উৎপত্তিস্থলটিকে একটি স্মৃতির ধারক দেয়াল ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। যেখানে পোড়ামাটির টেরাকোটায় লিখিত রয়েছে বিজিবির দীর্ঘ পরিক্রমার ইতিহাস। এছাড়া এর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার  উত্তরে রয়েছে বিজিবির রামগড় বিওপি (ক্যাম্প) এর অবস্থান। এর ঠিক মাঝামাঝি স্থানে অর্থাৎ তৎকালীন মহকুমার এসডিও অফিসের স্থানেই ১৭৯৫ সাল হতে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে রামগড় বিশেষ ক্যাম্প বা স্পেশাল বিওপি, যা ঠিক ভারত সীমান্তের একেবারে সন্নিকটে। ১৭৯৫ হতে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯০ বছর ধরে এখানে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর স্থাপিত রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন হতে বাংলাদেশ রাইফেলস পর্যন্ত সকল বাহিনীর সদর দপ্তর ছিল।

এর ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত স্থানটিতে ১৯২০ সালে নিরাপত্তার প্রয়োজনে তৎকালীন মহকুমার এসডিও এর অফিস এবং বাসবভন বেঙ্গল মিলিটারী পুলিশ ক্যাম্পের ভিতর স্থাপিত হয়, যা বর্তমানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ওই সময়ের এসডিও অফিসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাৎ আশির দশকে রামগড় উপজেলায় পরিণত হলে উক্ত এসডিও অফিসটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে এবং সেটি বাংলাদেশ রাইফেলস এর অধিনায়কের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ অঞ্চলে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর উপদ্রবসহ চোরাচালান কিংবা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অবাধ চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রনে গত ২২৭ বছর যাবৎ এই ক্যাম্পটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এরপর বিজিবির ব্যাটালিয়নের কলেবর বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মানে বাঁধা থাকায় উপজেলার তৈছালাপাড়ায় (বর্তমানে যেখানে ব্যাটালিয়ন অবস্থিত) বিজিবির ব্যাটালিয়নটি ১৯৮৬ সালে স্থানান্তর করা হয় এবং পুনরায় উক্ত সীমান্তবর্তী এসডিও অফিস ও অধিনায়কের বাংলো ঘরটি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে।

রামগড়ে জেলার অন্যান্য স্থানের মতো সেনা ক্যাম্প না থাকায় এখানে ১৯৮৬ কিংবা তৎপরবর্তী সময়ে শান্তিবাহিনীর নৃশংসতা বেড়ে যায় এবং সীমান্তবর্তী এসডিও অফিসের পরিত্যাক্ত স্থানটিকে ব্যবহার করে চোরাকারবারীরা অবাদে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত শুরু করে যা বাংলাদেশের জন্য একটি নিরাপত্তা ঝুকি তৈরী করে, এছাড়া সেসময় অর্থাৎ ৯০ এর দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে নিরাপত্তার খাতিরে উক্ত স্থানে বিজিবি পুনরায় একটি বিশেষ ক্যাম্প (স্পেশাল বিওপি) গঠন করে এ অঞ্চলে আবারো শান্তিবাহিনীর তৎপরতা ও সীমান্তের অবাদ চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রন নেয়।

৯০ এর দশকের শেষের দিকে সর্বপ্রথম বিজিবির ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ন জন্মস্থানটিকে চিহ্নিত করার প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। খাগড়াছড়ির তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার ওয়ালিউল্যাহ এর হাত ধরে সর্বপ্রথম সেখানে ছোট একটি পিলার (যার নাম দেয়া হয় “সার্থক এ জন্ম”) সম্বলিত স্মৃতি স্মারক স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় সুশীল সমাজের অনুরোধে রামগড় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল আতিক এর উদ্যোগে সেখানে নির্মিত হয় আজকের বিশাল আকারে বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মারক দেয়াল। তবে উক্ত ভূমিটি ছিলো উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন খাস ভূমি। রামগড় ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আতিক বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে অফিসিয়াল ভাবে উক্ত স্থানটি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্তি নেন।

এছাড়া বতর্মান রামগড় বিশেষ ক্যাম্প (স্পেশাল বিওপি)টি তৎকালীন এসডিও অফিস এবং পরবর্তী বিজিবির প্রথম ব্যাটলিয়ন সদর দপ্তরের স্থানেই অবস্থিত। ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে বিওপিটি স্বগৌরবে সেখানকার সার্বভৈৗমত্ব রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, রামগড়ের মতো ঐতিহাসিক একটি জনপদের বাজার, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের বাসভবন, রামগড়ের একমাত্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, নদী তীরবর্তী লোকজন ও বর্তমানে নির্মিতব্য স্থলবন্দরের একাংশসহ নানা স্থাপনার অবাদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এলেও সম্প্রতি উক্ত বিওপির ভূমি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের একটি “ভূমি উদ্ধার পরিকল্পনা” শুরু হয়েছে।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক খাগড়াছড়ি প্রকাশ্যে বলেন এবং সভার কার্যবিবরণীতে সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করেন,  “রামগড়ে বিজিবির অবৈধ বিওপি দখলমুক্ত করে নির্ধারিত জায়গা মডেল মসজিদ করা হবে। তিনি বলেন, বিজিবি রামগড় ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মসজিদের জন্য নির্ধারিত যে জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে তা উদ্ধারের জন্য আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে অবৈধ দখলকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের ও অবৈধ কাঁটাতারের বেড়া ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

তবে বিষয়টির উদ্রেক হয় মূলত ২০২০ সালের দিকে, যখন সরকার সারাদেশের সকল উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মানের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। সেসময় তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ এর পাশ্ববর্তী দীর্ঘদিনের পুরনো কোর্ট মসজিদটি ভেঙে সেখানে উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মানের পরিকল্পন করে।

এসময় ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মানে বাঁধা থাকার বিষয়টি বিজিবির পক্ষ হতে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয় এবং মডেল মসজিদটি অন্যত্র কোন নির্ভেজাল ভূমিতে স্থাপনের পরামর্শ ও পূর্ন সহায়তার আশ্বাসও দেয়া হয়। এছাড়া কৌশলগত কারনে বিজিবির উক্ত ক্যাম্পটি কতটা গুরুত্বপূর্ন তা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়।

সেসময় বিষয়টির গুরুত্ব অবলোকন না করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন উক্ত ভূমিটি উদ্ধারে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে চিঠি লিখে সহায়তা চায়। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিজিবির তৎকালীন মহাপরিচালকও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ন উক্ত বিওপিটির স্থান পরিদর্শন করেন এবং অদূর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মডেল মসজিদটি অন্যত্র স্থাপনের অভিমত ব্যক্ত করেন।

তবে সেসময় জেলা বা উপজেলা প্রশাসন বিষয়টির কর্ণপাত না করে মন্ত্রনালয়ের দ্বারস্থ হন। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয় বিজিবির নিকট বিওপিটির গুরুত্ব তুলে ধরে, কিন্তু সরেজমিনে বিষয়টির অবলোকন বা গুরত্ব বিবেচনা না করে জেলা প্রশাসনকে উক্ত বিওপির ভূমিটি জেলা প্রশাসনকে বুঝে নেবার ও বিজিবিকে উক্ত ভূমি বুঝে নিতে জেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়।

বাস্তবতা ও পরিণতি

উক্ত বিবাদমান স্থানটি কৌশলগত বিবেচনায় সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ন স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। বিগত ১৯৭০-১৯৮০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে সৃষ্ট বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের সাথে বর্ণিত স্থানে একাধিকবার গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। উক্ত সময়কালে ব্যবহৃত বাংকারসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা অদ্যাবধিও সেখানে বিদ্যমান রয়েছে। ভবিষ্যতে উদ্ভূত যে কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় কৌশলের অংশ হিসেবে রণকৌশলগত গুরুত্বের কারণে উক্ত স্থানে বিজিবি কর্তৃক অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও বর্তমানে উক্ত স্থানের কাছাকাছি রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ চলছে এবং স্থলবন্দর স্থাপিত হলে সীমান্তের নিকটবর্তী এ স্থানটির রণকৌশলগত গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভের নিরাপত্তায় এ বিওপিটির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাস্তবতা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত মডেল মসজিদটির উক্ত ভূমিটি সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের দেড়শ গজের ভেতরে (১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর নতুন করে কোন স্থাপনা নির্মান করা যাবে না) মোটামুটি ৩০-৫০ গজের ভেতরে, যা মোটেও সীমান্ত আইন অনুযায়ী ওখানে স্থাপন করা যাবে না, কিংবা স্থাপন করতে গেলে বিএসএফ এর বাঁধার মুখে পড়তে হবে। এর আগে সীমান্ত আইনের দোহাই দিয়ে রামগড় থানা ভবনের কাজে কয়েকবার বাঁধা দেয় বিএসএফ, এছাড়া রামগড় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মানে অবিরত বাঁধার মুখে নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। বিএসএফের সাথে বিজিবি পতাকা বৈঠক করে বারবার কাজ শুরু করলেও পরক্ষনে ফের বাঁধা দেয় বিএসএফ। নিজ দেশের স্কুলের কাজ বন্ধ হওয়ায় কাশিবাড়ী-পিলাক সীমান্তের ভারতীয় অংশে সম্প্রতি বেশ কিছু স্থাপনা নির্মানেও সীমান্ত আইনে বাঁধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিজিবি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে রামগড় বিশেষ ক্যাম্পের বিপরীতে ভারতের সাব্রুমের কাঁঠালছড়ি নামক স্থানে ফেনী নদীর তীরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তাদের সাথে কাঁটাতারের বেড়ার ইস্যু নিয়ে এ বৈঠক করেন দেশটির স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সীমান্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ত্রিপুরা সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সৃষ্ট জটিলতার কারণ প্রত্যক্ষ করতে তিনি সাব্রুম সফরে আসেন। বৈঠকে ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, বিএসএফের মহাপরিচালক পংকজ সিংসহ সেদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ফেনী নদীরকূল ঘেঁষে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করেন।

এর আগে, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা সীমান্তের বিপরীতে কয়েকটি স্থানে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে দুদেশের যৌথভাবে অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ করার চেস্টা করলে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিজিবি কর্তৃক বাধা দেয়া হয়। এ কারণে বেড়া নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রে জানা যায়, সেদিনের বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে দুদেশের সরকার পর্যায়ে যোগাযোগের উদ্যোগ নিতে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র কাছে আবেদন জানানো হয়।

সর্বোপরি, বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের অন্তত ২০-৩০ ও ৫০ গজের ভেতর স্থাপিত রামগড় উপজেলা অডিটোরিয়াম, উপজেলা প্রশাসনের অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসবভন, শিল্পকলা একাডেমী, রামগড় বাজার, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, থানা ভবনসহ অসংখ্য সরকারী স্থাপনা ও নদী তীরবর্তী বরবাসকারী লোকজনের নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধসহ নানা কারণে বিজিবির রামগড় বিশেষ ক্যাম্পটি কৌশলগত ও ভৌগলিক ভাবে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাম্প। এছাড়া রামগড় স্থলবন্দরটি চালু করে ওদিকে মহামুনি বিওপি থেকে শুরু করে এদিকে রামগড় বিশেষ ক্যাম্প পর্যন্ত উক্ত সীমানাটি ভৌগলিকভাবে দুদেশের কাছেই অতি গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বিজিবির দায়িত্বও বেড়ে যাবে এ সীমানায়। এসময়টি সামান্য নিরাপত্তা ঘাটতি একটি বিশাল ঝুঁকি তৈরী করতে পারে দেশের সার্বভৌমত্তের।

এ অঞ্চলটিতে মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে মাদক কারবারী, অবৈধ চোরাকারবারী, শোভা পাউডারের (যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে পাচারের সময় বিজিবি উদ্ধার করে) মতো ব্যয়বহুল পন্য পাঁচার হতে পারে, এতে সরকারের ব্যাপক রাজস্ব কমে যাবে। এছাড়া অরক্ষিত হয়ে পড়বে সীমান্তসহ সরকারী সব স্থাপনা, বেড়ে যাবে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা, সীমান্ত ব্যবহার করে সাজেকের মতো সহজেই এদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যাতায়াত বাড়বে ভারতে।

সরকারি জায়গা নিয়ে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে চলা টানাপোড়নের ঘটনায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘সকলের জন্য বিব্রতকর এ অবস্থার দ্রুত নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।’

রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলেন, ‘সরকারি জায়গা নিয়ে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও সবার জন্য বিব্রতকর। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সহজেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

উপজেলা আওয়ামী লীগেরর সভাপতি মোঃ মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘সরকারি জায়গা নিয়ে দুই সংস্থার সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছে তা মঙ্গলজনক নয়। চিঠি চালাচালিতে এ সমস্যার সমাধান হবে না। দুপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনার টেবিলে বসলেই সমাধান হবে।’

বিষয়টি বিজিবি এবং প্রশাসন দুপক্ষ হতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌছেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে সকল জনগণ।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post