রামগড় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজার নিয়মিত অফিস করেন না
এম সাইফল ইসলাম, রামগড়: রামগড় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২৫ দিন ও একই অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার একনাগাড়ে ৩৬ দিন ধরে কর্মস্থলে নেই। এ দুই কর্মকর্তা নিজেদের খেয়াল খুশিমত কর্মস্থলে আসেন আবার চলে যান। তাদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে দিনের পর দিন অনুপস্থিতিসহ ভুয়া টিএ, ডিএ এবং মোটরসাইকেলের জ্বালানি ও মেরামত খরচ দেখিয়ে বছরে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলা মাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ভুইয়া ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী এবং একই বিভাগের উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলী ২০১৫ সালের জুলাই মাসে রামগড়ে যোগদান করেন। এখানে যোগ দেয়ার পর থেকেই ওই দুই কর্মকর্তা দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ। মাসের শেষে বেতন ভাতা উত্তোলন বা সরকারি কোন বিশেষ প্রোগ্রাম থাকলেই তারা কর্মস্থলে আসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকায় এবং একাডেমিক সুপারভাইজার বগুড়ায় স্বপরিবারে থাকেন। একজন করে অফিস সহকারী এবং অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরী -এ তিন কর্মচারিই মূলত অফিসটি চালান। দুই কর্মকর্তার লাগাতার অনুপস্থিতির কারণে দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও স্কুল পরিদর্শনসহ দায়িত্বপূর্ণ কার্যক্রম অচলাবস্থায় রয়েছে।
১৩ ও ১৪ মে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে সরেজমিনে গিয়ে ওই দুই কর্মকর্তার একজনকেও অফিসে পাওয়া যায়নি। কর্মরত কর্মচারিরা জানান, দুই কর্মকর্তাই রামগড়ের বাহিরে আছেন। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, অফিস হাজিরা বইয়ে ২২ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভুইয়ার কোন স্বাক্ষর নেই। অপরদিকে ৮ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত অফিস হাজিরা বইয়ে স্বাক্ষর নেই একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীর। অফিস স্টাফরা জানান, দুই কর্মকর্তা মাসের শেষে এসে হাজিরা বইয়ে এক সাথেই সব কার্যদিবসের স্বাক্ষর করে দেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মস্থলে থাকেন না বিধায় এখানে তাদের কোন বাসাও নেই। অগত্যা রাত্রিযাপন করতে হলে অফিস কক্ষের ফ্লোরে ঘুমিয়ে রাত কাটান।
অভিযোগে জানা যায়, কর্মস্থলে নিয়মিত না থাকলেও ওই দুই কর্মকর্তা ভুয়া টিএ, ডিএ, মোটরসাইকেলের জ্বালানী, মেরামত ও অফিসের আনুসাঙ্গিক খরচ দেখিয়ে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। সূত্রটি জানায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রায় ৪২ হাজার টাকার টিএ, ডিএ এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিকসহ প্রায় ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া অফিসের কম্পিউটার মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ৮০ হাজার টাকাও নিজের পকেটস্থ করেন।
অন্যদিকে, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার জন্য প্র্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২-৪ হাজার টাকা ব্যয় করে দায়সরাভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। একডেমিক সুপারভাইজার মীর মো. আলীর বিরুদ্ধেও ভুয়া টিএ, ডিএ ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। কর্মস্থলে নিয়মিত না থেকেও তিনি মোটরসাইকেলের জ্বালানী ও মেরামাতের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দকৃত ৩০-৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। অফিস সহকারী তপন চন্দ্র মজুমদার জানান, ‘স্যাররা নিজেরাই নিজেদের টিএ, ডিএসহ বিভিন্ন বিল-ভাতা করে টাকা উত্তোলন করেন।
এদিকে কর্মস্থলে লাগাতার অনুপস্থিতি ও অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে সোমবার (১৪ মে) মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘ঢাকায় প্র্রোগ্র্রাামে এসেছি। এখন খুব ব্যস্ত। আগামীকাল কথা বলবো।’ অপরদিকে একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মো. আলীর মোবাইল নম্বরে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।