মোবারক হোসেন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ একটি রাষ্ট্রের জনগণের যতগুলো মৌলিক অধিকার রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। কিন্তু প্রকৃত ও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় পিছিয়ে থাকা, অবহেলিত দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করা প্রাথমিকে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪০টি। ২৩৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ১৬০জন শিক্ষক। ৭৪টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক ২২জন এবং সহকারি শিক্ষক ৫২জন। অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে প্রাথমিক শিক্ষার এ বেহাল অবস্থার চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪টি বিদ্যালয়ে ১জন করে মাত্র শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো ফুত্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বানরকাটা মধ্য পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারান্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুরছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে বানরকাটা মধ্য পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৬জন। একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালানো কি আদৌ সম্ভব। ৯টি বিদ্যালয়ে আছে মাত্র ২জন করে শিক্ষক। এর মধ্যে বিনাজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বাকি ৮টি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে গড়ে ৬০ থেকে ১০০জনের মধ্যে। অথচ এসব বিদ্যালয়ে ৬জন করে শিক্ষক কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু কেনো এসব স্কুলে এত পদ শুন্য জানতে চাইলে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার লিটন চন্দ্র সূত্র ধর বলেন, এক সময় সবগুলো স্কুলেই নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছিলো। কিন্তু যোগদানের পর নানা অজুহাতে প্রভাব বিস্তার করে অন্যত্র বদলী হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ না দেয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে তাঁর ধারনা। যোগ্যতা সম্পন্ন স্থানীয়দের অগ্রাধীকার দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে এ সমস্যা কিছুটা হলেও দুর হতে পারে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেও ৪টি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘিদিন ধরে। তার মধ্যে ১জন অফিস সহকারি, ১জন উচ্চমান সহকারি, ১জন হিসাব সহকারি ও ১জন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষার মান নিন্মগতির পাশাপাশি অফিসিয়াল কাজেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা মনে করেন, এ উপজেলায় এমন ১৫টি বিদ্যালয় রয়েছে প্রতি ক্লাশে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী কিংবা ১ম শ্রেণী হতে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত ৬০-৮০জন কোনো কোনো স্কুলে ১০০ থেকে ১২০জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে। একজন শিক্ষকের পক্ষে কিভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালাবেন তা বোদগম্য নয়। এতে করে নি:সন্দেহে বলা যায় এ স্কুল গুলোতে পাঠদান কার্যত্রম সঠিকভাবে হচ্ছে না। এছাড়াও বিশেষ কোনো সরকারি আদেশে ওই স্কুলের শিক্ষক যদি উপজেলা সদরে শিক্ষা অফিসে আসতে হয় জরুরী প্রয়োজনে তাহলে তো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া কি আর কোনো উপায় আছে? এমন প্রশ্নেই করলেন একজন অভিভাবক। তবে অবাক করার বিষয় হলো সদর কেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক তুলোনামূলকভাবে বেশি থাকলেও দুরবর্তি দুর্গম এলাকার স্কুলে গুলোতে শূন্য পদের সংখ্যাই বেশি। যে ৪টি স্কুলে একজন করে শিক্ষক এবং ৯টি স্কুলে ২জন করে শিক্ষক রয়েছে এ স্কুলগুলোর অবস্থান প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। যে কারণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিই মূলত শিক্ষক স্বল্পতার কারণে তাদের ছোলে-মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রæ মারমা বলেন, স্কুল গুলোতে শূন্য পদের সংখ্যা যে হারে রয়েছে, আমরা কি করে শিক্ষার মান বাড়াবো। বিগত সকারের সময় অন্য উপজেলার শিক্ষকরা তদবির করে বদলী হয়ে চলে গেছে। শূন্যস্থানে আর কোনো শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি। ফলে মাত্র ১জন শিক্ষক তাও আবার অন্য স্কুল থেকে ডেপুটিশনে এনে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার মান চরম অবনতির দিকে। অচিরেই শিক্ষার মান বাড়াতে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ: দা:) তাহমিনা আফরোজ ভূইয়া বলেন, বিষয়টি যেহেতু জানলাম উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষকে অতি গুরুত্বের সাথে জানাবো।