• May 17, 2025

লক্ষ্মীছড়ির সজীব চাকমা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, কষ্টের গল্পটা ক’জনে জানে !

 লক্ষ্মীছড়ির সজীব চাকমা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, কষ্টের গল্পটা ক’জনে জানে !

পাহাড়ের আলো অনলাইন ডেস্ক: খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার শিলাছড়ি গ্রামের সন্তান সজীব কান্তি চাকমা। তবে লোকালয়ে থাকার মতো ঘর ছিল না তাঁদের। কারণ তাঁরা যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝির জেলেদের মতো গরীবের মধ্যে আরো গরীব। মা-বাবা দুজনই জুমচাষি।

মজুরিও করতেন। থাকতেন পাহাড়চূড়ায় ছোট একটি জুমঘরে। সেখানেই জন্ম সজীবের। উঁচু-নিচু বাধার পর্বত পেরোলেন। পাহাড়ের সজীব পাহাড়ে সবুজের খেলা দেখে কেটেছে শৈশব।

জীবন মানেই যুদ্ধ- এটা সজীব কান্তি চাকমার চেয়ে ভালো আর কে জানে। ৪ নভেম্বর দিনটি অক্ষয় হয়ে থাকবে এই তরুণের মানসপটে। শৈশব থেকে পাওয়া অপমান, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর ঘাত-প্রতিঘাত পেছনে ফেলে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শুরু করেছেন।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, লোকপ্রশাসন বিভাগে। আফসোস একটাই—খবরটা মাকে জানাতে পারেননি। ছলছল চোখে বলছিলেন, মা শুনলে কী যে খুশি হতেন।

মা আকাশের ঠিকানায়। বাবা যেন থেকেও নেই! কয়েক মাস পর নতুন সংসার পাতলেন তিনি। সেই থেকে আর কখনো বাবার বাড়িমুখো হননি সজীব! তিনি বড় হতে লাগলেন দাদু-দাদির কাছে। তাঁদের সংসারেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু নাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। বলতেন, যত কষ্টই হোক, পড়াশোনা ছেড়ো না দাদু।

লক্ষ্মীছড়ি কিন্ডারগার্টেন-সজীবের প্রথম স্কুল। তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর ভর্তি হলেন লক্ষ্মীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দাদুকে বাঁশ বিক্রিতে সাহায্য করতেন।

স্কুলে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ৪০০ টাকা মজুরিতে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন সজীব। নিজের খরচ চালিয়ে দাদুর সংসারেও দিতেন। বার্ষিক পরীক্ষার পর গেলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। একটা সুতার কারখানায় মাসখানেক কাজ করে পাঁচ হাজার টাকা পেলেন। মাটি কাটার কাজও করেছেন মাসখানেক।

সজীব বললেন, ভীষণ কঠিন ছিল সেসব দিন। নতুন জুতা কেনার মতো টাকা ছিল না। তখন এক বন্ধুকে বললাম, ‘তুই আমাকে এক জোড়া জুতা কিনে দে।’ সে কিনে দিয়েছিল।

সজীবকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শান্তানু চাকমা। এইচএসসি পরীক্ষার পর চলে গেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেখানে জুম একাডেমিতে বিনা পয়সায় কোচিংয়ের সুযোগ পেলেন।

ভালোভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এই অবস্থায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলেন। হলো না। শেষে সুযোগ পেলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এলাকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে ভর্তির টাকা জোগাড় করে দিয়েছিল অদম্য এই তরুণকে।

তবে ভর্তি হলেও শঙ্কার মেঘ কাটেনি সজীবের। আপাতত একটা মেসে উঠেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ কিভাবে চলবে, এ নিয়ে চিন্তায় আছেন। বললেন, এ পর্যন্ত আসতে অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি। আমৃত্যু তাদের মনে রাখব। ভবিষ্যতে আমার মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াব।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post