লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাচন: চেয়ারম্যান পদে লড়াই কি ত্রিমুখী?
মোবারক হোসেন: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাও শেষ পর্যায়। চলছে প্রার্থীদের শেষ হিসেব-নিকেশ। নির্বাচনী মাঠে শেষ সময়ে আলোচনায় উঠে এসেছে ভোট বিশ্লেষনে চতুর্থ অবস্থানে থাকা দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী স্বপন চাকমার নাম। একেবারে প্রচারণায় পিছিয়ে থাকা ঘোড়া প্রতীকের নীলবর্ণ চাকমার নামও আলোচিত হচ্ছে জোড়ে-সোড়ে। ভোটারদের ভাবনা এবার খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নিশ্চিত হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে মোট ভোটার ১৮হাজার ৩০০জন। এর মধ্যে প্রায় ৯হাজার ভোট চাকমা। মারমা ভোট ৪হাজার বাকী ভোট মুসলিম, হিন্দু ও সাঁওতাল। প্রার্থী ৫জন জন। মারমা ২জন এবং চাকমা প্রার্থী রয়েছেন ৩জন।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৫জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন বাবুল চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে। প্রতিদ্বন্ধিতায় আছেন রাজেন্দ্র চাকমা আনারস প্রতীক, স্বপন চাকমা দোয়াত কলম প্রতীক ও নিলবর্ণ চাকমা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। লড়াইটা নৌকা, মোটরসাইকেল ও আনারস প্রতীকের মধ্যে হচ্ছে এমন আলোচনা ভোটারদের মধ্যে থাকলেও শেষ মূহুর্তে এসে ভোটারদের নতুন ভাবনা দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে চতুর্থ অবস্থানে থাকা দোয়াত কলম প্রতীকের স্বপন কুমার চাকমার নাম। তাঁর প্রচারণা ও গণসংযোগের কৌশলের কাছে পরাজীত হতে পারেন নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে থাকা ৩ প্রার্থী রাজেন্দ্র চাকমা আনারস, নৌকা প্রতীক বাবুল চৌধুরী ও মোটারসাইকেল প্রতীক অংগ্র প্রু মারমা। নিলবর্ন চাকমা ঘোড়ার প্রতীকের বা´ে যত বেশি ভোট পরবে রাজেন্দ্র চাকমা ও স্বপন চাকমার পরাজয়ের লালবাতি জ্বলে ওঠার আশংকা ততই বেশি। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বাঙ্গালি কোনো প্রার্থী না থাকায় লড়াইটা কি তাহলে চাকমা-মারমা? এমনটাই যদি ভোটাররা হিসেব করেন ৩জন প্রার্থী চাকমা আর ২জন প্রার্থী মারমা। ১৮হাজার ভোটারের মধ্যে চাকমা ভোট রয়েছে প্রায় ৯হাজার। বাকি ভোট মারমা ও বাঙ্গালি। হিসেবে মতে মারমা ভোট ৪হাজার। এখানে দু’জনের মধ্যে ভাগাভাগি হবে ভোট। ভোট বিশ্লেষকদের মতে বাঙ্গালি ভোট যে বেশি টানতে পারবে সেই হবে চেয়ারম্যান। যদি চাকমা ভোট ৩ভাগে বিভক্ত হয় একমাত্র সেই ক্ষেত্রেই এ হিসেব। তা না হলে রাজেন্দ্র চাকমা আনারস প্রতীকের জয়ে পাল্লা অনেকটাই ভারি বলে ভোটাররা মনে করে।
অংগ্য প্রু মারমা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এই প্রার্থী মনে করে চাকমা, মারমা, বাঙ্গালি, হিন্দু, সাঁওতালসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে এমনটাই তাঁর বিশ্বাস। এদিকে সরকার দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বাবুল চৌধুরী আছেন ফুরফুরে মেজাজে। জয়টা তাঁর পক্ষে এই আত্মবিশ্বাসে প্রচারণার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ভোট পেয়েছে ৫হাজার ২৪৬। ইউপিডিএফ সিংহ প্রতীক পেয়েছে ৮হাজার ৫১৭ ভোট। বিএনপি ধানের শীষ পায় মাত্র ১হাজার ৪৭ ভোট। তবে ৯০এর পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগের হিসেবে অনুযায়ী আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক গড় হিসেব করলে ২৫০০ থেকে ৩০০০ ভোট রয়েছে। তবে জয়ের জন্য এই ভোটই যথেষ্ট নয়। প্রার্থীকে অবশ্যই মারমা এবং চাকমা ভোটের দিকে নজর দিতে হবে বিজয় নিশ্চিত করতে হলে। সরকারের ধারবাহিক উন্নয়ন এবং জনকল্যাণে কাজ করার বার্তা যদি সঠিকভাবে ভোটারদের মাঝে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামীলীগে যোগদান করা এই মারমা নেতা বাবুল চৌধুরী নৌকা প্রতীকের বিজয় হাসিটা তিনিই হাসবেন এমনটাই মনে করছে বিজ্ঞমহল।
অপর দিকে এছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো: নুরে আলম (টিউবওয়েল), রাজু চাকমা দিপান্তর (তালা), উল্লাচি মারমা(চশমা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুমনা চাকমা (তীর-ধনুক), মেরিনা চাকমা (ফুটবল), মিনুচিং মারমা (পদ্ধফুল) ও রতœা চাকমা (কলস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
সাধারণ ভোটাররা মনে করছে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ভবিষ্যৎ কান্ডারি হিসেবে একজন সৎ যোগ্য সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি নির্বাচিত করা যায় তাহলে এ উপজেলাবাসীর আশাকাংখার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। সেই সাথে জয়-পরাজয় যে দিকে যাক সুষ্ঠু,শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, নির্ভিগ্নে ভয়-ভীতির উর্দ্ধে ওঠে ভোট গ্রহণের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিরও দাবি জানান ভোটাররা।