স্কুল শিক্ষিকাকে অপসারণের দাবিতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মুসলিমপাড়া এলাকায় এক সহকারি শিক্ষিকার অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। বুধবার বিকালে বিদ্যালয়ের সামনে বিদ্যালয়ের অভিভাবক,সমাজ কমিটি ও সর্বস্তরের জনগণে;র ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই শিক্ষিকার নিজের অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক পরিবেশ ও মূল্যবোধ নষ্টের অভিযোগ এনে তাঁর বিচার ও চাকুরি থেকে অপসারণের দাবি করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মুসলিমপাড়া স্থানীয় এলাকাবাসী, মো: সেলিম খান, জানু শিকদার, ইলিয়াছ ও রাবেয়া খাতুন। বক্তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, যে শিক্ষিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেই নিজের অনৈতিক ও অশ্লীল ভিডিও করে প্রকাশ করতে পারে তার কাজ থেকে কমলমতি শিশুরা কি শিক্ষা নিবে। এ সব মানুষ সমাজের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী বলেও মন্তব্য করে জনৈকা শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসীর স্কুল বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার আহবান জানান। তাঁরা অভিযোগ করেন, চারিত্রিকভাবে হীন মানসিকতার ওই শিক্ষিকা তাঁর সাংবাদিক স্বামী’র প্রভাব দেখিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। আবার নিজেকে নৃত্যশিল্পী জাহির করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী ও ঝর্ণাধারা’র কচিকাঁচার আসরের কর্মকর্তা হবার অজুহাতে যখন খুশী, তখনই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন জানান, ঐ শিক্ষিকা বর্তমানে ছুটিতে আছেন। সমস্যাটি তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহজনিত। এত দিন কেউ অভিযোগ করেনি। বুধবার একটি লিখিত অভিযোগ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিপিইও ফাতেমা মেহের ইয়াসমীন জানান, চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনা পেলে সরকারি চাকুরিবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত ওই সহকারি শিক্ষিকার ভাইরাল হওয়া একটি অশ্লীল ভিডিও’র একটি স্টিল ইমেজ (ছবি) খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)-এর সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আজম ফেইসবুক মেসেঞ্জার পেইজ ‘প্রেস’-এ আপলোড করেন। এই ঘটনায় ওই শিক্ষিকা ১৪ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করার আধা ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ কেইউজে সভাপতিকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সে মামলায় এক সপ্তাহ পর জামিন পান সাংবাদিক নেতা নুরুল আজম।
জামিনে মুক্ত হয়ে প্রায় একমাস পর চলতি মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল আজম ওই শিক্ষিকা এবং তাঁর স্বামী সময় টিভি ও জনকন্ঠ প্রতিনিধি জীতেন বড়ুয়া’র বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, পর্ণোগ্রাফি, মানহানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
সে মামলাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলমের আদালত আগামী ৩ মার্চের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল)-কে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ওই শিক্ষিকার অশ্লীল ভিডিও এবং দুই সাংবাদিকের পাল্টাপাল্টি মামলা’র ঘটনাটি খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ‘টক অব দি টাউন’-এ পরিণত হয়। বহুল আলোচিত এই আইনে দেশে এটিই দ্বিতীয় ও তৃতীয় মামলা।