অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না গুইমারাতে অবৈধ বালু উত্তোলন
স্টাফ রিপোর্টার: গুইমারা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের অর্থদন্ড করা হলেও থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে হুমকীর মুখে পড়ছে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে জাইকা কর্তৃক নির্মিত দুইটি গুরুত্বপূর্ন সেতু সরকারী রাস্তা ও ফসলী জমি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্র পুলিশ ও কিছু অসাধু গণমাধ্যম কর্মীদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এঅপকর্ম।
৩ নভেম্বর শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি’র গুইমারা উপজেলাধীন বাইল্যাছড়ি এলাকায় বাইল্যাছড়ি খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ শাহ আলম নামের দুই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে ৫০হাজার টাকা করে ১লক্ষ টাকা জরিমানা রায় প্রদান করেন তিনি।
শনিবার সকালে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়ার নেতৃতেব ভ্রাম্যমান আদালত সরকারি অনুমতি ছাড়া বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ রায় প্রদান করেন। এসময় বলেন, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাইল্যাছড়ি এলাকায় খাল ছড়া থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঐস্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়। বালু উত্তোলনের ফলে ওই স্থানের ফসলী জমি এবং চলাচলের রাস্তা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অভিযান গুইমারায় অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি
উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্রকে থামাতে পারছে না প্রশাসন। গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি, বড়পিলাক, সাইংগুলিপাড়া এলাকা সহ স্পটে বিভিন্ন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি অনুমতি বা দরপত্র ছাড়া, কোন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনে অন্যায় অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে গুইমারা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আসছে কিছু অসাধু স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। এচক্রের সাথে গুইমারা থানা পুলিশ ও কতিপয় অসাধু সংবাদকর্মীর রয়েছে দারুন সখ্যতা। অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য থানাকে মাসিক হারে চাঁদা ও সংবাদ কর্মীদের উৎকোচ নিয়ে থাকে বলে স্বীকার করেন গুইমারা উপজেলার প্রখ্যাত অবৈধ বালু উত্তোলনকারী বিএনপি মতাদর্শী মোঃ নজরুল ইসলাম। সে গুইমারা ক্ষমতাসীন দলের একনেতার উপর ভর করে চালিয়ে যাচ্ছে তার অবৈধ বালু ব্যবসা।
এছাড়াও মেহেদুল ইসলাম, মোঃ শুক্কুর নামের নজরুলের ভাই ও ভাতিজার দাপট ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। পুলিশকে ম্যানেজ করে গুইমারা উপজেলার অবৈধ বালু উত্তোলন পাহাড় কাটা সহ সকল অবৈধ কাজে খুবই দক্ষ মেহেদুল ও শুক্কুর। তারা এতটাই বেপরোয়া যে কিছুদিন পূর্ব অবৈধ বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহকালে উপজেলার এক জৈষ্ঠ্য সংবাদকর্মীদের হেনস্তা করার চেষ্টা করে। মোঃ শুক্কুর কিছু পূর্বে ট্রাকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নাম সম্বলিত ষ্টীকার লাগিয়ে জনগনকে বোকা বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। গুইমারা বাইল্যাছড়ি জোড়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে খালের পাড় কেটে বালু বলে বিক্রি করার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে জালিয়াপাড়া-সিন্দুকছড়ি সড়ক নির্মান কাজে নিয়োজিত ২০ইবিজি নাম সম্বলিত ষ্টিকার ব্যবহার করলে তা প্রশাসনের নজরে আনা হলেও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো কার কাছে? রক্ষক যেখানে ভক্ষকের ভুমিকায় অবতীর্ণ সেখানে কিছু করার নাই, শুরু দেখা যাওয়া ছাড়া।
শুধু বাইল্যাছড়ি নয় একই সাথে উপজেলার সাংগুলিপাড়া এলাকায় ডাঃ ক্যসিং মারমার নামের এক অবৈধ বালু ব্যবসায়ী প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে আইনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বালু উত্তোলন। সাংগুলিপাড়া এলাকায় ডাঃ ক্যাসিং মারমার বালুর স্তুপ দেখে হতবাক হবেন যে কেউই। ডাঃ ক্যাসিং মারমার জানান, বালু গুলো আগামী শীত মৌসুমে রাস্তার কাছে ব্যবহার করার জন্য স্তুপ করে রেখেছে সে। এভাবে তার অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নিরীহ চাষীরা হারাচ্ছে তাদের ফসলী জমি ও টিলাভুমি। বাইল্যাছড়ি এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জাইকা নির্মিত দুইটি ব্রীজ।
গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া জানান দাপ্তরিক নানা ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সংবাদ পেলেই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তবে সকল অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করার আশ্বাস দেন তিনি।