আলীকদমে স্কুলের জায়গা দখলের অভিযোগ
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ভরিরমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে ঘরবাড়ি ও বিক্রি করে চলেছে প্রভাবশালী মহল। জমি বেদখলের কারণে স্কুলের খেলার মাঠ সংকুচিত হয়েছে। এসব কারনে বিদ্যালয়ের মনোরম পরিবেশ ও সৌন্দর্য হারিয়েছে মর্মে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
সরজমিন জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভরিরমুখ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এ সময় ২৮৯নং চৈক্ষ্যং মৌজার ১২৮ নং হোল্ডিং পরবর্তীতে ১১৫ নং খতিয়ানের দাগ নং-৭০২ থেকে ১৬০ শতাংশ জমি ভরিরমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে জেলা প্রশাসক বরাদ্দ দেন। এ জমিতে গড়ে উঠে টিনসেট স্কুল ঘরে। পরে সেখানে নতুন ভবন হয়। স্থানীয় মাস্টার নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হোসেন, মাওলানা আবদুল মান্নান ও মাষ্টার আবদুল হান্নান মিলে স্কুলের ১ একর ২০ শতক জমি ইতোমধ্যে দখলে নিয়েছে। স্কুলের জমিতে তারা ঘরবাড়ি তৈরী, বিক্রি ও চাষাবাদ করছেন বিনা বাধায়। স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, স্কুলের জমি দখলের বিষয়ে তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করেও কোন সুফল পান নি।
বিদ্যালয় ভবনের সামনে ৪ শতকের মতো জমি মাঠ রয়েছে। একাডেমিক ভবনসহ আনুমানিক ৪০ শতক জমি স্কুলের দখলে আছে। স্কুল ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় একটি পাকা ঘর নির্মাণ হচ্ছে। আশপাশের স্কুলের জমিতে করা হচ্ছে চাষাবাদ। সীমানা প্রাচীর না থাকায় যে যার মতো গ্রাস করছে স্কুলের জমি।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের জায়গা দখল করে বাড়ি-ঘর ও ক্ষেত খামার করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন তা বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন, তহিদুল ইসলাম, আহাম্মদ নবী, নুরুল হুদা, সরোয়ার আলমসহ অনেকে জানান, ‘বিদ্যালয়ের জমিতে স্থাপনা না করে জায়গা ছেড়ে দিতে মৌখিকভাবে দখলদারদের বারবার নিষেধ করে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা-জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। কিন্তু বিদ্যালয়ের ১৬০ শতাংশ জমির মধ্যে দখলে আছে মাত্র ৪০ শতাংশ। বাকি সম্পত্তি উল্লেখিত ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় দুইজন শিক্ষক ও তাদের আত্মীয়-স্বজন মিলে স্কুলের ১২০ শতক জমি দখল করে আছেন। তবে তাদের দাবী এ জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের সহায়তায় বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ক্রমাগত বেদখলে চলে যাচ্ছে। ভরিরমুখ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না আসায়, ক্লাশ না নেয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে বিদ্যালয়টিতে।
দখলদার শিক্ষক আবদুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভরিরমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মিত হয়েছে আমাদের জায়গায়। ১৯৫৮-৫৯ সালে সরকার ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ৬৩০ নং রিজামশান মামলা মুলে আমাদের ২৮৯ নং চৈক্ষ্যং মৌজার ৩৩ নং খতিয়ানের ৪.৬৩ একর জমি খাস করে। সেখান থেকে ১৬০ শতাংশ জমি ভরিরমুখ স্কুলের নামে বরাদ্দ দেয়। এদিকে ১৯৭২ সালে ওই রিজামশান মামলার বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে রিভিউ মোকাদ্দমা করা হয়। ১/৯/১৯৭৬ তারিখে এক আদেশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওই খাস করার রিজামশান মোকাদ্দমার আদেশ বাতিল করেন যার স্মারক নং- ১১৭৫)২)/এম।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইস্কান্দর নুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ হয়েছে। উধর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।