উপজেলা নির্বাচন লক্ষ্মীছড়ি: প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেনি কেউ, কিন্তু কেন?
মোবারক হোসেন: মনোনয়নপত্র কিনেছিল ১৫জন। মাত্র ২জন পুরুষ ভাইস চেয়াারম্যান অসিম চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়াারম্যান প্রার্থী মিতালী চাকমা মনোননয়ন পত্র জমা দেন নি। চেয়ারম্যান পদে ৫জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এত সংখ্যক মনোনয়ন পত্র কেনা এবং জমা দেয়ার ঘটনাটিও ছিল আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু এত সব হিসেবে নিকেশ ছাড়িয়ে মনোনয়ননপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এসে চেয়ারাম্যান ও ভাইস চেয়াারম্যানসহ কোনো প্রার্থী প্রত্যাহার না করায় কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে যেমনি, তেমনি শংকার জায়গাও কি সৃষ্টি হয়েছে ? এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোটারদের মাঝে। তাহলে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কি হতে যাচ্ছে। নির্বাচন হোক প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ এমনটাই আশা করছে সাধারণ ভোটাররা। ১৮হাজার ২’শ ৯৯জন ভোটার নিয়ে ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন।
ভোটের ফলাফল কার দিকে যাবে এমন হিসেবে নিকেশও শুরু হয়ে গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বাবুল চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা, সাবেক লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা, সাবেক ভারপ্রাপ্ত বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চাকমা ও সাবেক বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নীলবর্ণ চাকমা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় রইলেন। পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) পক্ষ হতে বরাবরই প্রার্থী দেয়া হয়। ইতিপূর্বের ভোটের হিসেবে সকল নির্বাচনে ইউপিডিএফ’র প্রার্থী বিজয় লাভ করে। সে ক্ষেত্রে কৌশল কিংবা প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীকে নানা চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার নজিরও রয়েছে।
কিন্তু এবার কি ঘটতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল সাবেক ভারপ্রাপ্ত বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চাকমা যিনি দোয়াত কলম নিয়ে লড়বেন। তিনি সাব জানিয়ে দেন আমি কারো সমর্থন নিচ্ছিনা এবং এবার নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবো না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছি এবং শেষ পর্যন্ত লড়বো। গত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও আপনি ভোট চাইতে পারেননি এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি এই প্রার্থী। কথা হয় সবার দৃষ্টি এখন যার দিকে আর এক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমার দিকে যিনি প্রতীক নিয়েছেন আনারস। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন কেউ আমাকে সমর্থন দিচ্ছে না-নির্বাচনী মাঠে থাকবো, প্রয়োজনে মিডিয়া কর্মীদের সঠিক সত্যতা যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ জানান তরুন এই প্রার্থী। এদিকে বিকেল ৫টায় মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পর সাবেক বর্মাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নীলবর্ণ চাকমা কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকছেন বেশ সাহসিকতার সাথে। তিনি বলেন, আমি প্রত্যাহার করিনি নির্বাচনের মাঠে আছি।
আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী বাবুল চৌধুরী লড়বেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। প্রচারণার মাঠে নামার অপেক্ষা শুধু। প্রস্তুতিও সম্পন্ন। প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথেই পোষ্টার দেখা যাবে পুরো এলাকায়। প্রত্যাহারের শেষ দিনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সময় কাটান তিনি। কে থাকছে আর কে প্রত্যাহার করছে সেদিকেও ছিল বিশেষ নজর। তিনি এক আলাপকালে জানান, কে নির্বাচনী মাঠে আছে আর না আছে, সেটা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা। একই প্রতীক দ্বিতীয় আর কেউ প্রস্তাব না করায় লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা প্রতিদ্বন্ধিতায় আছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর মহান সৃষ্টি কর্তার আর্শিবাদে সুযোগ হয়েছে অল্প সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার। যদিও উন্নয়নের জন্য এই সময়টুকু যথেষ্ট নয়, তবুও আমি চেষ্টা কেরছি দৃশ্যমান কিছু করার জন্য। আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, মানুষের সুখ-দু:খের কথা শোনার চেষ্টা করেছি, হয়ত মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে চাইবে জনসেবা করি।
সবকিছু মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৩জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৪জন এছাড়াও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৫ প্রার্থী কেউ প্রত্যাহার না করার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাচনে ভোটের মেরুকরণে এক জটিল সমিকরণ বলেই বিজ্ঞমহল মনে করছে। কিন্তু কেন কোনো প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেন না, এমন প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। কেননা এর আগে এত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্ধিতা আর কখনো চোখে পরেনি। সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি এখন প্রচারণার মাঠ। কে কতটুকু পরিমাণ ভোটারের মন জয় করতে পারবেন প্রার্থীদের দৃষ্টি থাকবে সে দিকেই।
এদিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)এর সংগঠনিক কার্যক্রম অনেকাটাই দুর্বল হলেও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর অবস্থান অনেকটাই শক্ত। তাদের সমর্থন শেষ পর্যন্ত কার দিকে যাচ্ছে, কিংবা আদৌ কাওকে সমর্থন দিচ্ছে কিনা এবং ভোটের মাঠে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের অবস্থান কি হবে সে জন্য ভোটের হিসেবে মিলাতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক দিন। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা সভায় জানিয়ে দেয়া হয়।