করোনায় ছোবলে মানিকছড়ি’র দুগ্ধ খামারীরা দিশেহারা
আবদুল মান্নান: করোনা’র আঘাতে সারাদেশে দোকান-পাট বন্ধ। মানুষজন গৃহবন্দি। এ অবস্থায় মানিকছড়ি উপজেলার দুগ্ধ খামারীরা চরম বিপদে পড়েছে। একদিকে দুধের গ্রাহক নেই, অন্যদিকে বাজারে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এখানে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার লিটার বা ৫০-৫৫মণ দুধ উৎপাদন হলেও বিক্রি হচ্ছে মাত্র উৎপাদনের ২০-৩০ভাগ! গ্রামে-গঞ্জে ফেরি করেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এ যেন ‘মরার ওপর খারার ঘা’।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় ডেইরি ফার্ম (খামার) রয়েছে ৩৯টি। এতে সহস্রাধিক দেশী-বিদেশী গাভী লালন-পালন করা হয়। নিয়মিত এসব ফার্মে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার লিটার বা ৫০-৬০মণ দুধ উৎপাদন হয় এবং তা উপজেলা পেরিয়ে ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রামের মিষ্টান্ন দোকান ও বেকারীতে সরবরাহ করা হতো। প্রতি লিটার দুধ খামারে ৫৫ টাকা। ফটিকছড়িতে ৬০ টাকা এবং চট্টগ্রামে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি করা যেত। করোনা’র আঘাতে জনশুন্য জনপদে এখন দোকান-পাট বন্ধসহ বাসা-বাড়িতে হাহাকার অবস্থা। ফলে দুধের গ্রাহক এখন ৫-১০% এ নেমে এসেছে। গ্রামে-গঞ্জে ফেরি করেও দুধ বিক্রি করা যাচ্ছেনা! কিন্ত খামারে দুধ উৎপাদন ও গো-খাদ্য স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে খামারীরা এখন উভয় সংকটে। একদিকে দুধ বিক্রি নেই,অন্যদিকে বাজারে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। বাজার আগে গো-খাদ্য পাতা ভুষি বিক্রি হতো প্রতি বস্তা ৮শত ৫০ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১২শত টাকা! ফলে খামারে ব্যয় বেড়ে গেছে শত গুন। এ অবস্থায় উপজেলার খামারীরা চরম সংকট কাল অতিবাহিত করছে। অনেকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার পথে! উপজেলার সবচেয়ে বড় ‘এ.কে এগ্রো ডেইরী’ ফার্মে উন্নত জাতের গরু রয়েছে দু’শতাধিক। এর মধ্যে দুগ্ধগাভী (পিজিয়াম)৭০টি, ষাড় ৫৫টি গাভী ২৮টি, ছোট বাচ্চা ২৮টি, ছাগল ৬৫টি,ভেড়া ১০টি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫শ ৫০লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। বাজারজাত দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১শ-দেড়’শ লিটার! অবশিষ্ট দুধ নিয়ে শ্রমিকরা গ্রামে-গ্রামে ফেরি করেও তেমন সাড়া পাচ্ছেনা। অবিক্রিত দুধ ফেলা হচ্ছে খালে-বিলে!
মানিকছড়ি’র ‘এ.কে এগ্রো ডেইরী’ ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. ইকবাল হোসেন, খামারীদের বর্তমান দূরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনা’র কারণে সর্বত্রই দোকান-পাট বন্ধ, লোকজন গৃহেবন্দি, সবাই কর্মহীন । ফলে কেউই দুধ কিনছে না। প্রতিদিন উপজেলার দেড়- দুই হাজার লিটার অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে! অন্যদিকে বাজারে গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে । ফলে খামার নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়েছি। এসব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হলে এখনই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে দেশে হাজার হাজার খামার বন্ধসহ লক্ষ শ্রমিক বেকার হবে। কোটি কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগকারীরা পথে বসবে!
উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামার রয়েছে। এ মূহূর্ত্বে উৎপাদিত দুধ বাজারজাত নিয়ে ওরা বিপদে পড়েছে। মানুষের হাতে টাকা নেই। অথচ এ সময়ে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য দুধ খাওয়া প্রয়োজন ছিল।