ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের অভিযোগ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় ফারিয়া সুলতানা(২২) নামে এক প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠালে ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ফারিয়া সুলতানার(২২) মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মৃত ফারিয়া সুলতানা খাগড়াছড়ি পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আব্বাস আলীর স্ত্রী।

স্বজনদের অভিযোগ, বুধবার সকালে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ডাক্তার জয়া চাকমা বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাকে ভর্তি করে হাসপাতালে। সেখানে সিজার করেন ডাক্তার নাদিয়া সুলতানা। সিজারের পর রোগীর পেট পুলে যায় ও পেশার বেড়ে যায়। পরে ডাক্তাররা রোগীকে অর্ধরাত্র পর্যন্ত চেষ্টা করার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরন করেন। সেখানে নেওয়ার পর রোগীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জন্য রোগীর স্বজনরা ডাক্তার জয়া চাকমার অবহেলা বলে দাবি করছেন।

ফারিয়া সুলতানার স্বামী জানান, আমার রোগীকে সবকিছু দেখার পর ভর্তি দেওয়া হয়েছে। দোতলায় নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে বলা হয়েছে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ সিজার করতে হবে। পরে আমার থেকে একটা স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে ঔষধ আনতে পাঠিয়েছে। আমি ঔষধ নিয়ে এসে দেখি তাকে অপারেশন রুমে ডুকিয়ে ফেলছে আমাদের কোনো মতামত ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, এই সিজারের সাথে যারা জড়িত আমি সকলকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ি করছি। ডাক্তার জয়া চাকমা যখন আমার রোগীকে দেখে পরামর্শ করে ভর্তি করতে বলেছে আমরা মনে করেছি ওনি নিজেই অপারেশন করবেন। কিন্তু ওনি হাসপাতালে থেকেও সিজার ওনি না করে অন্য একজনকে দিয়ে করিয়েছে। এটা ওনার গাফিলতি।

অভিযুক্ত ডাক্তার জয়া চাকমা বলেন, ফারিয়া সুলতানা এটি দ্বিতীয় বাচ্চা, এর আগে একটি মারা গেছে। এই রোগীকে গতকাল আউটডোরে নিয়ে আসে তার স্বজনরা সেখানে আমি ছিলাম। আমি দেখেছি তার পা ফুলা ছিলো। পরীক্ষা করে মনে হয়েছে পেটে পানি কম। আমরা তাদেরকে বলেছি পানি কমে গেছে এটা সিজার করতে হবে। ওনারা রাজি ছিলো তারপরে অপারেশন করেছে। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। ৬ ঘন্টা পরে ওনার খিচুনি হয়েছে। এরকম হলে রোগীর অবস্থা একটু আশংকাজনক হয়। ওনার যে সমস্যা হয়েছে শ্বাস নিতে সমস্যা পেশার উঠানামা করছিলো। আমরা সবাই মিলে যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছি। ওনার হয়তো হার্টে কোনো সমস্যা থাকতে পারে যা আমরা নিশ্চিত নয়। এজন্য হয়তো পেশার এরকম উঠানামা করছিলো। আমরা এখানে চিকিৎসা দিয়ে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠিয়েছি।

অপারেশন করা ডাক্তার জানান, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। আউটডোর থেকে রোগীকে অপারেশন রুমে নিয়ে আসার পর দেখ আমরা রোগীর অবস্থা দেখে অন্য রোগীদের নামিয়ে রেখে তাকে সিজার করেছি। তখন কোনো সমস্যা ছিলোনা। সন্ধার সময় আমরা জানতে পারি রোগীর পেশার অনেক বেশি খিচুনি আসছে। আমরা সকল ডাক্তার পরামর্শ করে ওনাকে চিকিৎসা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি। পরে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠাই।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, যে সকল রোগী প্রসবের সময় আমাদের এখানে ভর্তি হয় আমরা তাদেরকে সেবা দিয়ে থাকি। প্রথমে নরমাল ডেলিবারি করার চেষ্টা করি না হলে পরে সিজারে যাই। যেভাবেই ডেলিভারি হোক যেকোনো সময় খিচুনি হতে পারে। মাতৃ মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে খিচুনি। প্রসবের পরবর্তী ৭২ ঘন্টার ভিতরে দেখা দিতে পারে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কারণটি এই খিচুনি বলে মনে হচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। যদি অভিযোগ করে সিভিল সার্জনসহ আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো।

উল্লেখ্য, রোগী ফারিয়া সুলতানা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ডাক্তার বিউটি চাকমা ও খাগড়াছড়ি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের ডাক্তার চৌধুরী শারমিন হায়দার এর কাছে গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে ছিলেন বলে জানা গেছে।