খাগড়াছড়িতে রাজনৈতিক অস্থিরতা: হরতাল অবরোধে পর্যটনের ধস
রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা: বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শীত মৌসুমের শুরুতেই খাগড়াছড়িতে পর্যটন খাতে ধস দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা অবরোধে দর্শনার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে জেলা সদরসহ ৯ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা। এদিকে শুরুতে অবরোধ হরতালের কারনে খাগড়াছড়িতে ঘুরতে এসে অনেক দর্শনার্থী আটকা পড়ে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলায় গিয়ে দেখা গেছে দর্শনার্থী শূন্যতার নীরবতা। কয়েকদিন আগেও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকলেও এখন একেবারেই অসহায় চিত্র। পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে কোথাও নেই দর্শনার্থীদের কোলাহল।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, এসময় বছরের প্রথম শীত মৌসুমে চোখে পরার মতো দর্শনার্থী থাকে। কিন্তু বিএনপি – জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈনিক দলের ডাকা অবরোধ-হরতালের কারণে পর্যটক শূন্য বললেই চলে। প্রতিদিন প্রায় হাজারেরও বেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। কিন্তু এখন সারাদিনে ১০জন পর্যটক ও আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন খাতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
একই পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে থাকা আলুটিলা কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, অবরোধের কারণে আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতির মুখে। আশা করব, অবরোধ বন্ধ হবে এবং আমাদের ব্যবসা সচল হবে।
একই অবস্থা খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলোতেও। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্ক ও রিছাং ঝরনায় কোনো দর্শনার্থী দেখা যায়নি। অবরোধের কারণে অনেকেই ট্যুর বাতিল করেছেন। এতে আগাম বরাদ্দ হওয়া কক্ষ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
খাগড়াছড়ি’র অভিজাত আবাসিক হোটেল গাইরিং এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, সম্প্রতি কয়েকদিন আগেও আমাদের হোটেলের ৪৩টি কক্ষের পর্যটকদের আগমনে অধিকাংশই ভরাযুবন ছিল।
বর্তমানে অবরোধের কারনে হোটেল শূন্য বললেই চলে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কারণ পর্যটক না এলেও হোটেলের নিয়মিত খরচ বহন করতে হচ্ছে।
এদিকে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানির বাস ঢাকায় যাওয়া আসা করে। সরেজমিনে দেখা গেছে আজকে একটাও ছাড়িনি। অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। রাতে বাস ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কোম্পানির নির্দেশে যাত্রা বাতিল করে যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দিয়েছেন অনেক কাউন্টার।
ঢাকা থেকে এক সপ্তাহের জন্য আসা পর্যটক জসিম ও সহধর্মিণী রুবিনা বলেন, অবরোধ ঘোষণার আগেই সাজেকে আসছিলাম। এখন অসহায় হয়ে দুইদিন পর সাজেক থেকে ফিরতে হলো ঢাকায়।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বর্তমানে পর্যটননির্ভর শহর। এখানকার অনেকেই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে এ জেলায় মাসে অন্তত ১৫ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন বলে জানান তিনি।