খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে ত্রিপুরাদের ‘নববর্ষ ত্রিং’ উৎসব
দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রিপুরাদের ‘ত্রিং ১৪৩১ ত্রিপুরাব্দ’ উৎসব পালিত হয়েছে।
২২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জেলা সদর খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস), ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ), য়ামুক (একটি সাংস্কৃতি আন্দোলন), হপিং ব্যান্ড, ইমাং ব্যান্ড, সালকাতাল ক্লাব সহ স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় ‘‘ত্রিপুরাব্দ উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ উৎসবের নানা আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ত্রিং উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও য়ামুকের সভাপতি প্রমোদ বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কর্ফোস’র চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা, বাংলা একাডেমী পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক প্রভাংশু ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সুরেশ মোহন ত্রিপুরা, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার ত্রিপুরা, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও পাড়া কার্বারী সুধাকর ত্রিপুরা, ‘‘বিশিষ্ট নাট্যকার, কবি ও লেখক অলিন্দ্র ত্রিপুরা (লিয়ন), পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সনজীব ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নক্ষত্র ত্রিপুরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে য়ামুকের সদস্য ও শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জয় প্রকাশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জুলাল ত্রিপুরা।
প্রধান অতিথি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, প্রথমে একটি মোমবাতি প্রজ্বলন করে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। তারপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের হাতে একটি করে জ্বলন্ত মোমবাতি রেখে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। এই সময় অনুষ্ঠানস্থলের ত্রিপুরাদের গরয়া নৃত্যও পরিবেশন করা হয়। এভাবে ত্রিপুরাদের নতুন বর্ষ ত্রিং ১৪৩১ কে বরণ করা হয়।
পরে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত স্থানীয় আদিবাসী শিল্পী ও ব্যান্ডের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। উৎসব মুখর ভাবে প্রতিবছর ২২ ডিসেম্বরে ত্রিং উৎসব পালন করা হলেও এবারে করোনা ভাইরাসের কারণে সংক্ষিপ্ত করে করা হয়। প্রায় তিন শতাধিক মানুষ এ উৎসবে যোগ দেন।
ত্রিপুরা রাজ্যে রাজার আমলে ত্রিপুরাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার ছিল। একে বলা হতো ত্রিপুরাব্দ। সেই সময় রাজকার্য চালিত হতো এই নিজস্ব ক্যালেন্ডার মেনে। আর ককবরক ভাষায় নববর্ষকে বলা হয় ত্রিং।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজতন্ত্র ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। সেই সঙ্গে ইতিহাস হয়েছে রাজন্য আমলের বহু নিয়ম কানুন। তবে এখনো ত্রিপুরা রাজ্যের বহু আদিবাসী তাদের অনেক সামাজিক রীতি-নীতি মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন। এমন একটি উৎসব হল ত্রিং। এই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি এখন প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পালন করা হয়ে থাকে।
এদিকে উৎসবটি উপলক্ষে সোমবার (২১ ডিসেম্বর ২০২০) সন্ধ্যায় জেলা সদরের খাগড়াপুর এলাকার উইমেন রিসোর্স সেন্টারে বলংরায় ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ত্রিপুরাদের ক্যালেন্ডার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে বলংরায় ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অলিন্দ্র ত্রিপুরা (লিয়ন) এর সঞ্চালনায় ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ইরানিকা রোয়াজার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের সদস্য কানকানন্দ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাংণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেফালিকা ত্রিপুরা, বলংরায় ফাউন্ডশনের সদস্য কোষাধ্যক্ষ ও য়ামুকের সম্পাদক যুগান্তর বিকাশ ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ)’ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নক্ষত্র ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা সদর শাখার সভাপতি দহেন বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ।
আবার উৎসবটি উপলক্ষে সোমবার (২১ ডিসেম্বর ২০২০) এর পরে স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ঠিক ১২টা দিকে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ) উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
এছাড়াও জেলা সদরের মধ্যে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের ছোট বাড়ী পাড়ায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলার বামা গৌমতির রাজা পাড়ায়, গুইমারা উপজেলায় সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নে স্থানীয় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।