খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে ৪৩তম ককবরক দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি

দহেন বিকাশ ত্রিপুরা: ত্রিপুরাদের মাতৃভাষা ‘ককবরক- এর সরকারি স্বীকৃতির দিনকে স্মরণ করে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের নেতৃত্বে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ককবরক উৎসবের শুভসূচনা হলো বর্ণাঢ্য র‌্যালি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে। ১৭ জানুয়ারি  রবিবার সকালে ককবরক উৎসবের শুভ সূচনা হয়।

খাগড়াপুরস্থ ককবরক লাইব্রেরি থেকে খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির এবং র‌্যালি শেষে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ০৩ (তিন) দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি।

উদ্বোধন শেষে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য খোকনেশ^র ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সহ-সভাপতি শেফালীকা ত্রিপুরা, বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক গঠিত ককবরক লেখক প্যানেলের সদস্য প্রার্থনা কুমার ত্রিপুরা।

প্রধান অতিথি বলেন, একটি জাতির চূড়ান্ত সমৃদ্ধির জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আর মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষায়ও শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য তিনি বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদকে আহবান জানান। তিনি জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে যে কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সকলকে একতাবদ্ধভাবে কাজ করার অনুরোধ করেন। টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান তাঁর বক্তৃতায় প্রতিনিয়ত মাতৃভাষা চর্চা করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষা একটি জাতির অস্তিতের অন্যতম নিয়ামক। তাই অন্যান্য প্রভাবশালী ভাষার প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্তরে মাতৃভাষা চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের সকল নাগরিকের মাতৃভাষায় অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক এবং বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত ত্রিপুরা এবং উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।

এ বছর ৪৩তম ককবরক দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। ককবরক ত্রিপুরা জাতির মাতৃভাষা। এই ভাষা ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম সরকারি ভাষা। ১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ককবরককে ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই দিনে ত্রিপুরা রাজ্যে ককবরক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে পালিত হয়। বাংলাদেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে ককবরক দিবসকে ঘিরে আলোচনা সভা ও ককবরক কবিতা পাঠের আয়োজন করা হচ্ছে। ককবরকভাষিদের বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ করে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস) , ককবরক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম- বাংলাদেশ (টিএসএফ), য়ামুক (একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন) ইত্যাদি সংগঠন ককবরক দিবস পালনের সূচনা করে। এই ধারাবাহিকতায় এই বছরও খাগড়াছড়িতে ককবরক দিবস উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হচ্ছে।

Read Previous

খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে ২৮৩ ভোটে ইমেজ রক্ষা আ’লীগের

Read Next

শ্বশুর-শ্বাশুরীর কূটকৌশলে স্বামীর অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানিকছড়িতে নববধুর আত্মহত্যা!