খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কের ৪২টি সেতু উদ্বোধন কাল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: কাল সোমবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে খাগড়ছড়ির ৪২টি সেতু। এর ফলে বদলে যাবে খাগড়াছড়ির অর্থনীতির চিত্র সারাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বদলে যাচ্ছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার পাহাড়ি সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে সুপ্রশস্ত পিসি গার্ডার ও আরসিসি সেতু। পাহাড়ি সড়কে স্থায়ী এসব সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এ সেতুগুলো নির্মাণের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি সড়কে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি জেলার বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ পর্যটনখাত আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
গত এক দশকে খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগের অধীন অধিকাংশ পাটাতনের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজের স্থলে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে আরও ৪২টি স্থায়ী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ সেতুগুলো নির্মাণের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গতি এসেছে স্থানীয় অর্থনীতিতেও।
সোমবার (৭ নভেম্বর) সারাদেশের ১০০টি সেতুর সঙ্গে খাগড়াছড়ির ৪২টি সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাঙ্ক্ষিত সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মজবুত ভিত রচিত হবে জানিয়ে খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, সেতুগুলো নির্মাণের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি গতি পেয়েছে। সড়ক যোগাযোগ নিরাপদ হওয়ায় পর্যটন অর্থনীতি আরও গতিশীল হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪২টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে এসব সেতু নির্মিত হয়। এরমধ্যে দীর্ঘ সেতুটি হচ্ছে খাগড়াছড়ির লোগাং বাজার সেতু। ১৪৩ দশমিক ৫ মিটারের দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় বেইলি ব্রিজের কারণে প্রায়ই পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতো। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। পাকা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের দুর্ভোগ শেষ হয়েছে।
পাকা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের অর্থনীতিতে নতুন গতি এসেছে জানিয়ে খাগড়াছড়ি ট্রাক-মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আকতার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের স্বদিচ্ছায় পাহাড়ি সড়কে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে এখন কম সময়ে ও নিরাপদে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কে পাকা সেতুগুলো পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করবে বলে তিনি মনে করেন।
খাগড়াছড়ির গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, গোমতি সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা সহজ হয়েছে। এছাড়া রোগীদের নিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়তে হতো তা থেকেও পরিত্রাণ মিলেছে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
নারী উদ্যোক্তা ও সাম্পারি গ্রুপ অব ইনিসিয়েটিভের চেয়ারপারসন শাপলা দেবী ত্রিপুরা বলেন, আশির দশকে নির্মিত ব্রিজগুলো পাহাড়ের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পাকা সেতুগুলো নির্মাণ হওয়ার ফলে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ হয়েছে। পাহাড়ের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে।