চট্টগ্রাম কেইপিজেডে এক নারী গার্মেন্টস শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার, থানায় অভিযোগ
এইচ এম আলমগীর হোসেন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কেইপিজেডের এক নারী গার্মেন্টস শ্রমিক একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক কর্মচারী কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার নারী গতকাল (০৪.১১.২০১৯ইং) রাতে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে সিএমপির ইপিজেড থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন। থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, যৌন হয়রানির শিকার ওই নারীর নাম- তানিয়া আক্তার (২০), তার পিতার নাম- মো. শহিদুর রহমান, বর্তমান ঠিকানা- মাজারগলি, নেভী হাসপাতাল গেইট, সিইপিজেড, থানা- ইপিজেড, সিএমপি, জেলা- চট্টগ্রাম এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম- মো. মেহেদী হাসান সবুজ (৩১), তিনি চট্টগ্রাম কেইপিজেডের জিবি বাংলা (১) নামক গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলার দায়িত্ব প্রাপ্ত লাইন নং- ৯, ১০, ১১, ১২ এর এসিস্ট্যান্ট প্রোডাকশন ম্যানেজার। যৌন হয়রানির শিকার ওই নারীর অভিযোগ, তিনি বিগত ১২.১১.২০১৮ইংরেজী তারিখে ইপিজেড থানাধীন কেইপিজেডস্থ জিবি বাংলা (১) নামক তৈরি পোশাক কারখানায় মেশিন অপারেটর হিসাবে যোগদান করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রায় এক মাস পূর্বে উক্ত প্রতিষ্ঠানে এসিস্ট্যান্ট প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই তাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার তারিখ: বিগত ৩১.১০.২০১৯ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ৯:৩০ ঘটিকার সময় ইপিজেড থানাধীন কেইপিজেডস্থ জিবি বাংলা (১) নামক তৈরি পোশাক কারখানার ২য় তলায় তিনি পেশাগত কাজে কর্মরত থাকাবস্থায় ওই কর্মচারী এসে তার চাকুরীর পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে অফিসিয়াল জরুরী কথা আছে বলে তাকে ডেকে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য অনৈতিক কু-প্রস্তাব দেয়। ওই সময় তিনি কু-প্রস্তাব তীব্রভাবে প্রত্যাখান করলে, অভিযুক্ত ব্যক্তি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক হাত ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করে, তার সাথে ধস্তাধস্তি করে যৌনকামনা চরিতার্থ করার চেষ্টা করে। তিনি একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারী কর্তৃক কর্মস্থলে যৌন নীপিড়নের শিকার হয়ে ইপিজেড থানায় অভিযোগ দাখিল করলে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যৌন হেনস্তার শিকার ওই নারীকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করেছে বলেও জানান। অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক ওই নারী তার কর্মস্থলে যৌন নীপিড়নের শিকার হয়ে আতংকিত অবস্থায় কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন মর্মে থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।
ইপিজেড থানার ওসি মীর মো. নুরুল হুদা অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, থানার উপ-পরিদর্শক সাজেদ কামালকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি কেইপিজেডস্থ জিবি বাংলা (১) নামক গার্মেন্টসের আরো একাধিক নারী শ্রমিককে যৌন হয়রানি করেছেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য জানার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। যৌন হয়রানির শিকার উক্ত নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অদ্য (০৫.১১.২০১৯ইং) তারিখ দুপুরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল কেইপিজেডে প্রবেশ কালে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ বলে জানান। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা)-এর আইএর ম্যানেজার আব্দুল জব্বার উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের অফিস কক্ষে নিয়ে কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাবেন বলে সাংবাদিকদের দীর্ঘ ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করান কিন্তু সহস্যজনক ভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা ঘটনার বিষয়ে কোনো প্রকার বক্তব্য প্রদান করেননি। গোপন সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিকরা উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহের জন্য অফিস কক্ষে অবস্থানের সংবাদ পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বশীল এক অসাধু কর্মকর্তা অভিযুক্ত মো. মেহেদী হাসান সবুজকে প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, আজ হাসিনা আক্তার নামক কেইপিজেডের ক্যানপার্ক গার্মেন্টেসের এক নারী শ্রমিক কর্তৃপক্ষের নিকট মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই নারী শ্রমিকের ছুটি মঞ্জুর না করায় আজই ওই নারী শ্রমিক তার কর্মস্থলে বাচ্চা প্রসব করেন, যা অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তার সহকর্মীরা।
বেপজা নিয়ন্ত্রিত জিবি বাংলা (১) গার্মেন্টসে ও ক্যানপার্কের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন যাবত নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি, সঠিক সময়ে বেতন পরিশোধ না করা, বিনা অপরাধে শ্রমিক ছাঁটাই, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেওয়া, অত্যন্ত নিন্ম মানের খাবার পরিবেশনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব চলছে সনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিতে। অভিযোগ রয়েছে, কেইপিজেডের ক্যানপার্ক গার্মেন্টসের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত কিছু অসাধু কর্মকর্তা কারখানার শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা জেনারেল ডিউটি কার্ড পাস করানোর পরে আরো অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করেন। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের পরিশোধ না করে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই আত্মসাত করেন এমন অভিযোগ করেছেন অনেক শ্রমিক। প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য বার বার চেষ্টা করা হলেও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সহস্যজনক কারণে জিবি বাংলা (১) ও ক্যানপার্ক নামক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করারও সুযোগ দেননি। সরকারের নিকট উক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিকদের দাবি, অবিলম্বে চট্টগ্রামের সেরা এ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কারখানার ম্যানেজমেন্টের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কেমন আচরণ করছেন, তা সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত অসাধু ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং সনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি মুক্ত করা হোক।