দলীয় এমপি না থাকায় উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যানরা
এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: ফটিকছড়িতে উন্নয়ন বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত ৭ ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতারা। আরটিআইপি ১-২, গ্রেটার চিটাগাং প্রজেক্ট-৩, আইআরআইডিপি ১-২, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের কোটি-কোটি টাকার প্রজেক্ট থেকে তাদের নির্বাচিত এলাকাকে বাদ দিয়ে জনদূর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে অভিযোগ কওে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের শাস্তির দাবী করেন।
বৈষম্যের স্বীকার ও অভিযোগকারীরা হলেন, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বখতপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম সোলাইমান বিকম, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইয়ুম, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সুয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু তালেব চৌধুরী, ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জাফতনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুল হালিম, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও আবদুল্লাহপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. অহিদুল আলম, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা ও রোসাংগীরি ইউপি চেয়ারম্যান শোয়েব আল সালেহীন। তাদের মধ্যে সুয়াবিলের আবু তালেব চৌধুরী ২০০৬ সালে উপ-নির্বাচনে ছাড়া বাকিরা ২০১৬-১৭ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আরটিআইপি ১-২ তে দক্ষিণ ফটিকছড়িতে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। যা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে উত্তর ফটিকছড়ির অলীতে-গলিতে। অপ্রয়োজনীয় স্থানে ও একটি শিল্প পরিবারের চা বাগানের উন্নয়নের জন্য বিশাল ব্রীজ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। আইআরআইডিপি ১-২ থেকেও কোন বরাদ্ধ দক্ষিণ ফটিকছড়িতে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য যাওয়া গ্রেটার চিটাগাং প্রজেক্ট-৩ তে ফটিকছড়ির ২৮টি সড়কের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে একটিও নেই। ৭টি সড়ক বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে শুধু লেলাং ইউনিয়নে। বাকি কোন-কোন ইউনিয়নে নামে মাত্র মহাসড়কের নামে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে ১০টি সড়ক এইচবিবি দ্বারা উন্নয়নের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে মাত্র ৫টি ইউনিয়নে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বরাদ্ধ গুলো। এই প্রকল্প গুলোর টেন্ডার প্রকৃয়া নিয়েও ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি এবং সুবিধাভোগী জামায়াত-বিএনপি সমর্থক ঠিকাদাররা।
কৃষকলীগ নেতা ও রোসাংগীরি ইউপি চেয়ারম্যান শোয়েব আল সালেহীন বলেন, গত বর্ষায় সব চাইতে বেশী এলাকা প্লাবিত হয়েছে আমার ইউনিয়ন। বন্যায় হিংস ভাগ এলাকা ডুবন্ত ছিল। সাঁতার কেটে নৌকা করে ঘরে ঘরে ত্রাণ নিয়ে গেছি। সড়কগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে। অথচ ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয়ের সব বরাদ্ধ ৫টি ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে। এটিতো আমলাদের গ্যাড়াকলের মতো। এভাবেতো আর চলতে দেয়া যায়না। আমাদের প্রতিবাদ এখান থেকেই শুরু।
আওয়ামীলীগ নেতা ও বখতপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোলাইমান বিকম অভিযোগ করে বলেন, আমরা দলীয় মনোনয়ন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। জনগণকে ক্ষমতাসীন সরকারের নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় আমাদের সাথে এমন বৈষম্য সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ারম্যানদের এলাকায় বরাদ্ধ দিলে সরকারের উন্নয়নের লবণের জাহাজ পানিতে ডুবে যাবে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এই দায়এডাতে পারেনা। আমি এই বৈষম্যতার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ফটিকছড়ি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম বলেন, উত্তর ফটিকছড়ি আর দক্ষিণ ফটিকছড়ি উন্নয়ন বৈষম্যতার অভিযোগ অনেক দিনের। এটিকে আরো পাকা পোক্ত করলো গ্রেটার চিটাগাং প্রজেক্ট-৩, আরটিআইপি ১-২, আইআরআইডিপি ১-২, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের এইচবিবি সড়ক এবং ব্রীজ বাস্তবায়ন করে। এখানে কালো টাকার ছড়াছড়ি, বৈষম্যতা এবং জামায়াত-বিএনপি’র ঠিকাদারা সুবিধা নিয়েছে। আমরা রাজনৈতিককর্মী, স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সরকারের উন্নয়নের সুফল দৌরগোড়ায় পৌছানোর জন্য কাজ করছি। তাই আগামী উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এর বিহিত ব্যবস্থা না করলে আমরা এর প্রতিবাদে বৃহত্তর কর্মসুচী ঘোষনা করবো।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বৈষম্যতার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের কথায় সব কাজ হয়না। এখানে এমপি’র ডিও লেটার লাগে। উপজেলা থেকে সামারি করে জেলায়, জেলা থেকে ঢাকায় অনুমোদন হয়। যেগুলো অনুমোদন হয়ে গেছে এগুলোত আর পাল্টানো যাবেনা।