নিরুত্তাপ নির্বাচনী মাঠে শুধুই ফল ঘোষণার অপেক্ষা,নৌকার জয় অনেকটাই নিশ্চিত
স্টাফ রিপোর্টার: রাত পোহালেই ভোট। ভোটের মাঠে এত সহজ জয় খাগড়াছড়িবাসী আর কখনো দেখেনি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে না আসার কারণেই এমনিটি হয়েছে বলে ভোট বিশ্লেষকরা মনে করে। নিরুত্তাপ নির্বাচনী মাঠে এখন শুধুই ফলাফলের অপেক্ষা। আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা অনেকটা নিশ্চিত বিজয় দেখছেন। ফলাফল যদি তাঁর পক্ষে আসে তাহলে হ্যাট্টিক বিজয় নিয়ে শেষ হাসিটা তিনিই হাসবেন।
প্রচারণার শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতা করলেও একমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মাঠে ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি। বাকি প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিথিলা রোয়াজা (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী উশ্যে প্রæ মারমা (সোনালী আঁশ) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. মোস্তফা (আম প্রতীক)।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করছেন প্রতিদিনই। তার পক্ষে জেলা-উপজেলার নেতার্মীরাও মাঠে নেমে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। উন্নয়ন ও দেশের মানুষের শান্তি জন্য ৭ জানুয়ারি ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।
খাগড়াছড়ি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়ি আসনে একপক্ষীয় প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ছাড়া অন্য প্রার্থীরা মাঠে ছিলা না বললেই চলে। তিনি বলেন, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার রাজনৈতিক দক্ষতার কাছে অন্য প্রার্থীরা একেবারেই শিশু। ফলে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা হ্যাট্রিক জয় করতে যাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। আর অন্য প্রার্থীদের জামানত থাকে কিনা তা সন্দেহ।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, কাগজে-কলমে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতা করলেও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মতো হেভিয়েট প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বদ্বিতা করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য নেই অন্যদের। তাই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা যে আবার নির্বাচিত হবেন তা প্রায় নিশ্চিত।
খাগড়াছড়ি আসনে মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ ২০০১ সাল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এছাড়া জেএসএস (এমএন লারমা) খাগড়াছড়িতে ৪র্থ শক্তি। তবে এবার বিএনপির পাশাপাশি এই দুটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী খাগড়াছড়ি আসনে জামানত হারান। এবার খাগড়াছড়ি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী একেবারেই নতুন মুখ। বিএনপি ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে প্রচারণা চালাচ্ছে। অপরদিকে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপে ভোট বর্জনের কড়া বার্তা দিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ইতি মধ্যে পানছড়ি উপজেলা তৃণমূল বিএনপি ও ল²ীছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচারণায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এই হামলার জন্য উভয়ে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপকে দায়ি করেছে।
খাগড়াছড়ি জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৬ জন। তার মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৮৫ জন আর পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬২ হাজার ৬১ জন। গত বারের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৭৩ হাজার ৬০৩ জন। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভোটার উপজাতি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৩ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৫২৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ২১৯ জন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকল প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মুক্তা ধর প্রতিনিয়ত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সংশ্লিষ্ট সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন। দুর্গম ৩টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।